স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে: দাঁড়িয়ে হঠাৎ মাথা ঘোরা, চোখ ঝাপসা দেখা বা বেহুঁশ হয়ে পড়া একটি সাধারণ সমস্যা হলেও তা শরীরের গভীর অসুস্থতার সতর্কবার্তা হতে পারে। কলকাতাসহ শহরের বহু মানুষ এ সমস্যায় ভুগছেন। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, শুয়ে বা বসা অবস্থা থেকে হঠাৎ উঠে দাঁড়ালে রক্তচাপ পড়ে যায় এবং মস্তিষ্কে পর্যাপ্ত রক্ত না পৌঁছনোর কারণে এ ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়।
কেন হয় মাথা ঘোরা?
শরীরের রক্তচাপের ওঠানামা দাঁড়িয়ে মাথা ঘোরার অন্যতম কারণ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়লে বা শোয়া থেকে উঠে দাঁড়ালে রক্তচাপ সাময়িকভাবে নেমে যায়। এর ফলে মস্তিষ্কে রক্ত পৌঁছতে দেরি হয় এবং মাথা ঘোরার মতো অনুভূতি হয়। বিশেষ করে অর্থোস্ট্যাটিক হাইপোটেনশন ও পোস্টুরাল হাইপোটেনশন এর বড় কারণ।
সাধারণ কারণগুলি
হঠাৎ উঠে দাঁড়ানোতে রক্তচাপ নেমে যায়।
অতিরিক্ত গরম বা ডিহাইড্রেশনে শরীর দুর্বল হয়।
অতিরিক্ত অ্যালকোহল রক্তচাপ কমিয়ে দেয়।
ভারী ব্যায়াম বা হঠাৎ ওয়ার্কআউট থামালে মাথা ঘোরে।
কিছু ওষুধ যেমন বিটা ব্লকার, ডায়রেটিকস ইত্যাদি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ঘটাতে পারে।
দীর্ঘস্থায়ী রোগের প্রভাব
চিকিৎসকদের মতে, হৃদরোগ, থাইরয়েড সমস্যা, ডায়াবেটিস, পারকিনসন্স ডিজিজ, কানের ভেতরের সমস্যা এবং মানসিক চাপ থেকেও মাথা ঘোরার সমস্যা হতে পারে। বিশেষত POTS (Postural Orthostatic Tachycardia Syndrome) থাকলে শরীর নিজের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, ফলে দাঁড়ানোর সময় দীর্ঘক্ষণ মাথা ঘোরে।
কখন ডাক্তার দেখানো উচিত?
যদি মাথা ঘোরার সঙ্গে বমি ভাব, চোখে অন্ধকার, বুক ধড়ফড় বা শরীর অতিরিক্ত দুর্বল লাগে, তবে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যাওয়া জরুরি। বিশেষজ্ঞ ডা. অ্যামি সারো জানাচ্ছেন, যদি সমস্যা ঘন ঘন হয় এবং দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব ফেলে, অবিলম্বে পরীক্ষা করানো উচিত।
প্রতিরোধ ও করণীয়
চিকিৎসকরা পরামর্শ দেন—
প্রচুর জল খেতে হবে।
সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করতে হবে।
নিয়মিত হাঁটা বা হালকা ব্যায়াম করতে হবে।
মাঝে মাঝে লবণযুক্ত খাবার খাওয়া যেতে পারে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শে।
মানসিক চাপ কমাতে হবে।
দাঁড়িয়ে মাথা ঘোরা বা হঠাৎ বেহুঁশ হয়ে পড়া কোনো সাধারণ ক্লান্তি নয়, বরং রক্তচাপের পতন বা স্নায়বিক দুর্বলতার লক্ষণ হতে পারে। চিকিৎসকদের মতে, এটি মূলত অর্থোস্ট্যাটিক বা পোস্টুরাল হাইপোটেনশন থেকে হয়। নিয়ম মেনে চললে ও সঠিক সময়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে বড় বিপদ এড়ানো সম্ভব।