স্কুলের জন্য নিজের বাড়ি দান করলেন কৃষক, মাঠে বাস করে পাশে দাঁড়ালেন শিশুদের

স্কুলের জন্য নিজের বাড়ি দান করলেন কৃষক, মাঠে বাস করে পাশে দাঁড়ালেন শিশুদের

ঝালাওয়াড়ের পিপলোদি গ্রামে মোর সিং স্কুল ভেঙে পড়ার পর শিশুদের পড়াশোনা নিশ্চিত করতে নিজের বাড়িটি স্কুল হিসেবে দান করেছেন। পরিবার এখন মাঠে একটি কুঁড়েঘরে বাস করছে। প্রশাসন ও সমাজ তাদের এই আত্মত্যাগের প্রশংসা করেছে।

পিপলোদি: ঝালাওয়াড়ের পিপলোদি গ্রামে গত জুলাই মাসে সরকারি উচ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনটি ভেঙে পড়ে। এই দুর্ঘটনায় সাত জন শিশু নিহত হয় এবং অনেকে আহত হয়। দুর্ঘটনার পর শিশুদের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়।

এই কঠিন সময়ে গ্রামের কৃষক মোর সিং তাঁর বাড়িটি স্কুলের জন্য উৎসর্গ করেন এবং নিজে পরিবার নিয়ে মাঠে একটি ত্রিপলের কুঁড়েঘরে বাস করতে শুরু করেন। তাঁর এই পদক্ষেপ সমগ্র অঞ্চলে সাহস ও মানবতার এক উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

শিশুদের পড়াশোনা বাঁচানোর জন্য মোর সিং-এর বড় পদক্ষেপ

পিপলোদি স্কুলের একটি অংশ ভেঙে পড়ার পর শিশুদের পড়াশোনা প্রায় বন্ধ হওয়ার মুখে ছিল। শিক্ষকরা বিকল্প ব্যবস্থার সন্ধান করছিলেন, কিন্তু কেউই শিশুদের পড়াশোনার জন্য নিজের বাড়ি বা ঘর দিতে রাজি হচ্ছিলেন না।

তখন মোর সিং কোনো দ্বিধা ছাড়াই শিশুদের সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেন। তিনি বলেন, “আমার বাড়িতে যদি শিশুরা পড়তে পারে, তাহলে এর চেয়ে বড় সেবা আর কী হতে পারে। বৃষ্টি হোক বা রোদ, আমি আমার পরিবারের সাথে মাঠে থাকব, কিন্তু শিশুদের পড়াশোনা যেন বন্ধ না হয়।”

মাঠে কুঁড়েঘরে বাস করেও শিশুদের পড়াশোনায় সাহায্য

মোর সিং-এর পরিবারে আট জন সদস্য। তারা সবাই এখন মাঠে তৈরি একটি অস্থায়ী কুঁড়েঘরে বাস করছেন। প্লাস্টিক ও ত্রিপল দিয়ে তৈরি এই কুঁড়েঘরে কেবল দুটি খাট, একটি চুলা এবং কিছু বাসনপত্র আছে। বাকি জিনিসপত্র আত্মীয়দের কাছে রাখা হয়েছে।

বৃষ্টিতে ছাদ চুঁইয়ে পড়ে এবং রাতে পোকামাকড় ও সাপ থেকে বাঁচতে ঘাস জ্বালানো হয়। এতকিছুর পরেও পরিবারের কোনো সদস্য আপত্তি জানাননি। তাদের মতে, তাদের বাড়িতে এখন শিশুরা পড়াশোনা করছে, এতে তারা গর্বিত বোধ করেন।

মোর সিং-এর বাড়ি এখন শিশুদের স্কুল

মোর সিং ২০১১ সালে দিনমজুরের কাজ করে ৪ লক্ষ টাকা খরচ করে এই বাড়িটি তৈরি করেছিলেন। এখন সেই বাড়িটিই শিশুদের পড়াশোনার জন্য খোলা হয়েছে। মোর সিং-এর মতে, এটি একটি কঠিন সময়, কিন্তু এটি স্থায়ী নয়। নতুন স্কুল ভবন তৈরি হয়ে গেলে তারা নিজেদের বাড়িতে ফিরে যাবেন।

ঝালাওয়াড়ের কালেক্টর অজয় সিং রাঠোর মোর সিং-এর এই আত্মত্যাগের প্রশংসা করে তাঁকে 'ভামাশাহ' উপাধিতে ভূষিত করেছেন। রাজ্য সরকার নতুন স্কুল ভবনের জন্য ১০ বিঘা জমি এবং ১.৮ কোটি টাকা অনুমোদন করেছে। মোর সিং ২ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণও পেয়েছেন।

মোর সিং-এর সাহায্যে পিপলোদি স্কুল পুনরায় চালু

মোর সিং-এর এই পদক্ষেপের পর গ্রামবাসীদের আস্থা ফিরে এসেছে। এখন স্কুলে ৭৫ জন শিশু পড়ছে এবং দুর্ঘটনার পর ১০ জন নতুন শিশু ভর্তি হয়েছে। শিক্ষক মহেশ मीणाের মতে, দুর্ঘটনায় আহত আট জন শিশু এখনও বাড়িতে চিকিৎসা করাচ্ছেন। তাদের পড়াশোনা যাতে বন্ধ না হয়, তাই দুজন অতিরিক্ত শিক্ষককে তাদের বাড়িতে পাঠানো হয়েছে।

নতুন স্কুল ভবনের কাজ শুরু হয়ে গেছে এবং রাজস্থান সরকার পিপলোদিকে 'মডেল ভিলেজ' বানানোর ঘোষণা করেছে। গ্রামে একটি স্লোগান উঠেছে:

'আমাদের অঙ্গীকার – পিপলোদির রূপান্তর, দুর্ঘটনা থেকে উন্নয়ন পর্যন্ত।'

মোর সিং-এর আত্মত্যাগ শিক্ষা ও মানবতার এক উদাহরণ

অশিক্ষিত হওয়া সত্ত্বেও মোর সিং শিক্ষার আসল মূল্য বুঝেছিলেন এবং নিজের বাড়িটি শিশুদের পড়াশোনার জন্য উৎসর্গ করেছিলেন। তাঁর এই আত্মত্যাগ সমগ্র সমাজকে এই বার্তা দেয় যে মানবতা ও শিক্ষাই হল সবচেয়ে বড় শক্তি। আজ পিপলোদি গ্রামের সবাই মোর সিং-এর উদাহরণ দেয় এবং তাঁর এই পদক্ষেপকে অনুপ্রেরণাদায়ক মনে করে।

Leave a comment