ফতেপুর মাজার ভাঙচুরের ঘটনায় বিধানসভায় সরব সমাজবাদী পার্টি (সপা)। সরকারের তরফে অভিযোগ খারিজ করে কড়া পদক্ষেপের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। হট্টগোলের মধ্যে সভা মুলতুবি হয়ে যায়।
লখনউ: উত্তরপ্রদেশ বিধানমণ্ডলের বর্তমান অধিবেশনে মঙ্গলবার ফতেপুরে মুসলিম মাজারে ভাঙচুরের ঘটনাটি সভায় আলোড়ন সৃষ্টি করে। বিধানসভায় বিরোধী দল সমাজবাদী পার্টি (সপা) এই ঘটনা নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আনে এবং এটিকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার ষড়যন্ত্র বলে অভিহিত করে। এই বিষয়ে বিরোধী দলের নেতা ও সপার অন্যান্য সদস্যরা তীব্র বিক্ষোভ করেন। অন্যদিকে, সরকার অভিযোগগুলি সম্পূর্ণরূপে খারিজ করে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। হট্টগোলের মধ্যেই বিধিবদ্ধ কাজ সম্পন্ন হয় এবং সভা মুলতুবি ঘোষণা করা হয়।
ফতেপুর মাজারে ভাঙচুর ও সপা-র অভিযোগ
ফতেপুরে সোমবার মুসলিম মাজারে ভাঙচুরের ঘটনা রাজ্যে ফের সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বাড়িয়ে দিয়েছে। বিরোধী দলনেতা মাতা প্রসাদ পাণ্ডে বিধানসভায় অভিযোগ করেছেন যে এটি কেবল একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং একটি পুরনো রীতির অংশ। তাঁর বক্তব্য ছিল যে প্রায়শই মুসলিমদের মাদ্রাসা ও মাজারগুলিকে নিশানা করা হয় যাতে সমাজে উত্তেজনা সৃষ্টি করা যায় এবং একতরফা রাজনীতিকে জোরদার করা যায়।
সপা আরও দাবি করেছে যে বিজেপি সরকার রাজ্যে শান্তি ও সম্প্রীতিকে ব্যাহত করতে চায়। তাদের মতে, ফতেপুরে একটি দলের নেতা মাজারটি দখলের ঘোষণা করেছিলেন এবং সাত দিন আগে এ বিষয়ে একটি স্মারকলিপিও দেওয়া হয়েছিল। এরপর পুলিশ বিষয়টি সঠিকভাবে সামাল দিতে পারেনি, যার ফলে কিছু লোক মাজারে প্রবেশ করে ভাঙচুর করতে সফল হয়। সপা এটিকে সরকারের কৌশল আখ্যা দিয়ে বলেছে যে প্রদেশটিকে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার আগুনে ঝোঁকাতে চাইছে।
সরকারের জবাব ও পদক্ষেপের আশ্বাস
সংসদীয় কার্যমন্ত্রী সুরেশ খান্না বিরোধীদের অভিযোগ সম্পূর্ণভাবে খারিজ করেছেন। তিনি স্পষ্ট করে বলেন যে সরকার বা তার কোনো অংশের এই ঘটনায় কোনো হাত নেই। খান্না জানান, ফতেপুর কোতোয়ালি থানায় এই ঘটনায় ১০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ১৫০ জন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়েছে। তিনি বলেন, যারা আইন হাতে তুলে নেবে তাদের রেহাই দেওয়া হবে না এবং তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্ত্রী বলেন, সরকারের প্রথম অগ্রাধিকার হল আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা বরদাস্ত করা হবে না। তিনি আরও ইঙ্গিত দেন যে বিরোধীরা এই ঘটনাকে রাজনৈতিক রং দেওয়ার চেষ্টা করছে, যেখানে সরকার সম্পূর্ণরূপে ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তে নিযুক্ত রয়েছে।
সভায় হট্টগোল ও বিক্ষোভ
সরকারের জবাবে সন্তুষ্ট না হয়ে সপা সদস্যরা বিধানসভা সভাপতির আসনের সামনে এসে এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে তীব্র স্লোগান দিতে থাকেন। তারা সরকারের বিরুদ্ধে প্রধান দোষীদের বাঁচানোর চেষ্টা করার অভিযোগ করেন। সদস্যরা "বুলডোজার কোথায় গেল" এবং "দাঙ্গাবাজদের মাটিতে মিশিয়ে দাও" এই ধরনের স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ করেন।
শোরগোলের মধ্যেই সরকার তার পূর্বপরিকল্পিত বিধিবদ্ধ কাজকর্ম চালিয়ে যায়। সভায় সিএজি-র সাতটি রিপোর্ট পেশ করা হয় এবং ছয়টি বিল পাশ করানো হয়। এরপর দুপুর ১টা ২০ মিনিটে অধ্যক্ষের বোঝানোর পর সপা সদস্যরা वापस নিজেদের আসনে ফিরে যান। তবে, ১০ মিনিট পর তারা আবারও আসনের সামনে এসে তাদের বিক্ষোভ কর্মসূচি চালিয়ে যান।
সভার কাজকর্ম স্থগিত
হট্টগোল ও বিক্ষোভের কারণে বিধানসভার অধ্যক্ষ দুপুর ১টা ৪৫ মিনিটে সভার কাজকর্ম পরের দিন পর্যন্ত মুলতুবি ঘোষণা করেন। অধ্যক্ষ সভার কাজকর্ম সুষ্ঠুভাবে চালানোর আবেদন জানান, কিন্তু বিরোধীদের বিক্ষোভের কারণে আর কাজকর্ম চালানো সম্ভব হয়নি।