রাজস্থানে একটানা প্রবল বৃষ্টির কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। টঙ্ক, কোটা, ধোলপুর, কারাউলি এবং সাওয়াই মাধোপুরের মতো জেলাগুলিতে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। নদীগুলির জলস্তর ক্রমাগত বাড়ছে এবং অনেক এলাকায় এসডিআরএফ ও এনডিআরএফ দলগুলি ত্রাণ ও উদ্ধারকাজে নিযুক্ত রয়েছে।
ডিল নদীতে আটকে পড়া ১১ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে
টঙ্ক জেলার দাতওয়াস এলাকায় ডিল নদীর জলস্তর হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। প্রবল স্রোতের কারণে দুটি পরিবারের ১১ জন—পুরুষ, মহিলা ও ছোট শিশুসহ—নদীর মাঝে একটি দ্বীপে আটকে পড়ে। কোনোক্রমে তারা পুলিশকে খবর দেয়, এরপর কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে এসডিআরএফ ও সিভিল ডিফেন্সের দল ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। প্রায় এক ঘণ্টার উদ্ধার অভিযানের পর সকলকে নিরাপদে উদ্ধার করা হয়। সৌভাগ্যবশত কোনো প্রাণহানি ঘটেনি এবং সকলকে নিরাপদে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
জেসিবি দিয়ে স্কুল স্টাফদের উদ্ধার
ভারী বৃষ্টির কারণে টঙ্ক জেলার বানস্থলী ও দাতওয়াস গ্রামসহ অনেক এলাকায় জল জমে গেছে। সিভিল ডিফেন্স ও এসডিআরএফ দলগুলি ক্রমাগত ত্রাণকার্য চালিয়ে যাচ্ছে। বানস্থলী গ্রামে যেখানে ঘরে আটকে পড়া মানুষদের নিরাপদে উদ্ধার করা হয়েছে, সেখানে স্কুল স্টাফদের जेसीबी-র সাহায্যে বাইরে আনা হয়েছে। দাতওয়াস বাজারও জলের তলায় ডুবে গেছে। একটানা বৃষ্টির কারণে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
নদীর জল বৃদ্ধি
রাজ্যের অনেক নদীর জলস্তর বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। টঙ্ক, সাওয়াই মাধোপুর ও বারানে ১৫০ মিমি-র বেশি বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। টঙ্কের বিসলপুর বাঁধের তিনটি গেট খুলে দেওয়া হয়েছে, যার ফলে ১৮,০৩০ কিউসেক জল ছাড়া হচ্ছে। এর ফলে নীচের এলাকাগুলিতে বন্যার আশঙ্কা আরও বেড়েছে। অন্যদিকে, ধোলপুরে চম্বল নদী বিপদসীমার ৯.৩৬ মিটার উপর দিয়ে বইছে, যা পরিস্থিতিকে গুরুতর করে তুলেছে।
কোটা জেলায় পার্বতী নদীর জলস্তরও বিপদসীমার ৩.৩৫ মিটার উপরে পৌঁছে গেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য কোটা ব্যারেজের ৮ ও ৯ নম্বর গেট দুটিকে ১৬ ফুট পর্যন্ত খোলা হয়েছে, যার ফলে প্রায় ১৯,২৩৬ কিউসেক জল ছাড়া হচ্ছে। এছাড়া, কারাউলি ও সাওয়াই মাধোপুরে চম্বল নদীর জলস্তরও বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। এই অঞ্চলগুলিতে এসডিআরএফ ও এনডিআরএফ দল মোতায়েন করা হয়েছে।
সরকারের সতর্কতা
মুখ্যমন্ত্রী ভজনলাল শর্মা পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনা করে বিপর্যয় মোকাবিলা ও ত্রাণ বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। নির্দেশের পর কোটায় এসডিআরএফ-এর ৩টি দল, এনডিআরএফ-এর ১টি দল এবং নাগরিক সুরক্ষার ২১ জন স্বেচ্ছাসেবককে মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি, ধোলপুর, কারাউলি, টঙ্ক ও সাওয়াই মাধোপুরেও ত্রাণকার্য দ্রুত করা হয়েছে।
রাজ্য সরকার ভদোদরায় অবস্থিত এনডিআরএফ সদর দফতর থেকে আরও দুটি অতিরিক্ত দল চেয়েছে, যাতে যেকোনো জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলা করা যায়। এর পাশাপাশি সরকার সাধারণ মানুষের কাছে আবেদন জানিয়েছে, তারা যেন বৃষ্টির সময় জলের উৎস থেকে দূরে থাকেন এবং যেকোনো দুর্ঘটনা এড়াতে সতর্ক থাকেন। জরুরি পরিস্থিতিতে রাজ্য স্তরের টোল ফ্রি নম্বর ১০৭০ এবং জেলা স্তরের নম্বর ১০৭৭-এ যোগাযোগ করা যেতে পারে।
আরও ভারী বৃষ্টির সতর্কতা
আবহাওয়া দফতর আগামী দিনে রাজ্যের অনেক অংশে আরও ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করেছে। প্রশাসন সতর্ক রয়েছে এবং বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। টঙ্কের ঘটনায় সময় মতো ব্যবস্থা নেওয়ায় ১১ জন মানুষের প্রাণ বাঁচানো গেছে, যা একটি স্বস্তির খবর ছিল। কিন্তু আবহাওয়ার পরিস্থিতি দেখে সব জেলাকে সতর্ক রাখা হয়েছে। এসডিআরএফ ও এনডিআরএফ দলগুলি ক্রমাগত প্রস্তুত রয়েছে এবং মানুষের সাহায্যের জন্য তৈরি আছে।