গ্লোবাল হাগ ইওর কিডস ডে: শিশুদের আলিঙ্গনের গুরুত্ব ও উপকারিতা

গ্লোবাল হাগ ইওর কিডস ডে: শিশুদের আলিঙ্গনের গুরুত্ব ও উপকারিতা

আমাদের দ্রুতগতির জীবনে, আমরা প্রায়শই সেই ঘনিষ্ঠ সম্পর্কগুলিকে সময় দিতে ভুলে যাই যা আমাদের জীবনের আসল সুখ — যেমন আমাদের সন্তানরা। 'গ্লোবাল হাগ ইওর কিডস ডে' প্রতি বছর ২১শে জুলাই আমাদের এটাই মনে করিয়ে দিতে আসে যে একটি আন্তরিক আলিঙ্গন কী জাদু করতে পারে। শিশুদের আলিঙ্গন করা একটি সাধারণ কাজ মনে হতে পারে, তবে এটি তাদের মানসিক, আবেগিক এবং শারীরিক বিকাশের জন্য অমূল্য প্রমাণিত হতে পারে।

ইতিহাস: এক মায়ের বেদনা থেকে জন্ম নেওয়া এই বিশেষ তারিখ

এই দিনটির শুরু মিশেল নিকোলস নামক এক মায়ের হাত ধরে, যিনি তার ৮ বছর বয়সী ছেলে মার্ককে ক্যান্সারে হারিয়েছিলেন। তিনি এই দিনটি ২০০৮ সালে শুরু করেছিলেন যাতে অন্যান্য বাবা-মায়েরা মনে রাখতে পারেন যে শৈশব ক্ষণস্থায়ী, এবং আমাদের প্রতিটি মুহূর্তকে ভালোবাসায় ভরিয়ে দেওয়া উচিত।

শিশুদের আলিঙ্গন: ভালোবাসার সবচেয়ে সহজ উপায়

এই দিনটি উদযাপনের সবচেয়ে সুন্দর উপায় হল — আপনার সন্তানদের আলিঙ্গন করা। কোনো কথা বলা ছাড়াই যখন আমরা আমাদের সন্তানকে আলিঙ্গন করি, তখন এই বার্তাটি যায় যে 'আমি তোমাকে ভালোবাসি', 'আমি তোমার সাথে আছি', এবং 'তুমি নিরাপদ'। এটি শুধুমাত্র একটি দিনের বিষয় হওয়া উচিত নয় — প্রতিদিনের অভ্যাস করুন। শিশুদের নিয়মিতভাবে আলিঙ্গন করা তাদের আত্মবিশ্বাসী, সুরক্ষিত এবং সুখী করে তোলে।

জেনে নিন আলিঙ্গনের বৈজ্ঞানিক সুবিধা

 ১. চাপ কমায়

একটি গভীর আলিঙ্গন শরীরে কর্টিসোল (স্ট্রেস হরমোন) কম করে এবং শিশুদের মস্তিষ্কে শান্তি ও সুরক্ষার সংকেত দেয়।

২. হৃদয়কে সুস্থ রাখে

আলিঙ্গন করলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত থাকে এবং এটি অক্সিটোসিন (ভালোবাসার হরমোন) নিঃসরণ করে, যা হৃদয়ের স্বাস্থ্যকে উন্নত করে।

৩. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

যে শিশুরা তাদের পরিবারের কাছ থেকে বেশি শারীরিক স্নেহ পায়, তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালোভাবে কাজ করে। এর মানে হল — কম রোগ এবং বেশি শক্তি!

৪. মানসিক স্বাস্থ্যকে মজবুত করে

আলিঙ্গন ডোপামিন এবং সেরোটোনিনের মতো ‘সুখের হরমোন’ বৃদ্ধি করে, যা শিশুদের মধ্যে ডিপ্রেশন এবং অ্যাংজাইটির লক্ষণ কমায়।

কিশোরদেরও চাই আলিঙ্গনের উষ্ণতা

অনেক বাবা-মা মনে করেন যে শিশুরা বড় হওয়ার সাথে সাথে তাদের আলিঙ্গন করার প্রয়োজন কমে যায়। কিন্তু সত্যিটা হল কিশোর বয়সে শিশুরা আরও অনেক জটিলতায় ঘেরা থাকে — পড়াশোনার চাপ, বন্ধুত্ব, পরিচয়ের খোঁজ — এমন পরিস্থিতিতে একটি বিশ্বস্ত আলিঙ্গনের প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি হয়। একটি আলিঙ্গন আপনার টিনএজ সন্তানকে এই ভরসা দিতে পারে যে তারা একা নয়।

সীমারেখা জরুরি: জিজ্ঞাসা করে আলিঙ্গন করুন

হ্যাঁ, আলিঙ্গন করা খুব উপকারী, তবে এটিও জরুরি যে আমরা শিশুর সম্মতি নিই। যদি আপনি আপনার সন্তানের বন্ধু, ভাইপো-ভাইঝি বা অন্য কারো সন্তানকে আলিঙ্গন করতে চান — তাহলে প্রথমে জিজ্ঞাসা করুন। যদি তারা রাজি না হয়, তাহলে একটি হাই ফাইভ বা ফিস্ট বাম্পও ততটাই কার্যকর হতে পারে।

গ্লোবাল হাগ ইওর কিডস ডে উদযাপনের উপায়

  • পরিবারের সাথে একটি স্পেশাল হাগ টাইম ঠিক করুন – দিনের মধ্যে একটি সময় ঠিক করুন যখন সবাই একে অপরকে আলিঙ্গন করবে।
  • আপনার সন্তানদের একটি ভালোবাসাপূর্ণ নোট লিখুন – যেখানে আপনি তাদের জানান যে আপনি তাদের কতটা ভালোবাসেন।
  • স্মৃতি তৈরি করুন – শিশুদের আলিঙ্গন করার ছবি তুলুন এবং ভবিষ্যতের জন্য স্মৃতি সঞ্চয় করুন।
  • ‘হাগ মি’ কার্ড তৈরি করুন – শিশুদের বলুন যে তারা তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য কার্ড তৈরি করবে এবং আলিঙ্গনের প্রতিশ্রুতি দেবে।

শিশুদের সাথে জড়িত কিছু কোমল সত্য

  • একটি গবেষণা অনুসারে, প্রতিদিন কমপক্ষে ৪টি আলিঙ্গন শিশুদের উন্নত আবেগিক বিকাশে সাহায্য করে।
  • যে বাড়িতে শারীরিক স্নেহ বেশি, সেখানকার শিশুরা বেশি সামাজিক এবং হাসিখুশি হয়।
  • আলিঙ্গন শুধুমাত্র শিশুদের জন্য নয়, বাবা-মায়ের জন্যও ততটাই জরুরি। এটি তাদের শান্তি ও সন্তুষ্টির অনুভূতি দেয়।

গ্লোবাল হাগ ইওর কিডস ডে আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে শিশুদের আলিঙ্গন করা শুধুমাত্র একটি শারীরিক ক্রিয়া নয়, বরং আবেগিক পুষ্টি। এটি তাদের সুরক্ষিত, আত্মবিশ্বাসী এবং প্রেমপূর্ণ অনুভব করায়। প্রতিদিন কিছু সময় বের করে আপনার সন্তানদের আলিঙ্গন করুন — এটাই প্রকৃত স্নেহ এবং জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান উপহার।

Leave a comment