ট্রাম্পের নতুন শুল্ক হুমকি: ইউরোপ ও মেক্সিকোর পণ্যে ৩০% পর্যন্ত কর আরোপের পরিকল্পনা

ট্রাম্পের নতুন শুল্ক হুমকি: ইউরোপ ও মেক্সিকোর পণ্যে ৩০% পর্যন্ত কর আরোপের পরিকল্পনা

প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এবং পুনরায় নির্বাচনী দৌড়ে অংশ নেওয়া ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের উপর কঠোর মনোভাব পোষণ করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং মেক্সিকো থেকে আমদানিকৃত পণ্যের উপর ভারী শুল্ক আরোপের ইঙ্গিত দিয়েছেন। মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, ট্রাম্প প্রশাসন ১ আগস্ট থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করছে।

১ আগস্ট চূড়ান্ত সময়সীমা নির্ধারিত

ট্রাম্পের এই পরিকল্পনা অনুসারে, সমস্ত প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদারকে তিন সপ্তাহের মধ্যে আমেরিকার সাথে বাণিজ্য চুক্তি করতে হবে, অন্যথায় তাদের অতিরিক্ত শুল্ক দিতে হবে। মার্কিন বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লুটনিক স্পষ্ট করে জানিয়েছেন যে ১ আগস্টের পরে কোনো দেশই শুল্ক থেকে বাঁচতে পারবে না, যদি সময় মতো চুক্তি না হয়। তিনি বলেন, ইউরোপ ও আমেরিকার মধ্যে আলোচনা চলছে এবং চুক্তির আশা রয়েছে।

ইউরোপীয় কমিশনের প্রধানকে ট্রাম্পের চিঠি

ট্রাম্প ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ভন ডের লেয়েনকে একটি আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠিয়ে শুল্কের ঘোষণা করেছেন। চিঠিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে সতর্ক করা হয়েছে যে, যদি নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে চুক্তি না হয়, তবে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত আমদানি শুল্ক আরোপ করা হবে।

মেক্সিকো, কানাডা, জাপান এবং ব্রাজিলও নজরে

ট্রাম্পের পরিকল্পনা শুধু ইউরোপের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। তিনি মেক্সিকো, কানাডা, জাপান এবং ব্রাজিল সহ অন্যান্য প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদারদেরও শুল্কের বিষয়ে সতর্ক করেছেন। ট্রাম্প চিঠিতে ২০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত সম্ভাব্য শুল্কের উল্লেখ করেছেন। বিশেষ করে তামার উপর ৫০ শতাংশের ভারী শুল্ক প্রস্তাব করা হয়েছে।

ইউএসএমসিএ চুক্তি নিয়ে পুনরায় আলোচনার ইঙ্গিত

বাণিজ্য সচিব লুটনিক জানিয়েছেন যে, ট্রাম্প আবারও আমেরিকা-মেক্সিকো-কানাডা চুক্তি অর্থাৎ ইউএসএমসিএ নিয়ে পুনরায় আলোচনা করতে চান। যদিও বর্তমানে এই চুক্তির আওতায় আসা পণ্যগুলি শুল্ক থেকে ছাড় পাবে, তবে এই ছাড় স্থায়ী নয়। লুটনিকের মতে, ট্রাম্প পুনরায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলে আগামী বছর চুক্তিতে পরিবর্তনের প্রক্রিয়া শুরু করা যেতে পারে।

শুল্ক নিয়ে বাণিজ্যিক মহলে চাঞ্চল্য

এই শুল্ক প্রস্তাবের ফলে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্যিক সংস্থাগুলিতে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। আমেরিকার বাণিজ্যিক অংশীদারদের মধ্যে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে, কারণ এই সিদ্ধান্ত তাদের শিল্পগুলির উপর বড় প্রভাব ফেলতে পারে। ইউরোপীয় কোম্পানিগুলির জন্য মার্কিন বাজারে প্রবেশ করা ব্যয়বহুল হতে পারে, অন্যদিকে মেক্সিকোর রপ্তানিকারকদের জন্য এটি একটি ধাক্কা হিসাবে প্রমাণিত হতে পারে।

ট্রাম্পের অবস্থানে পুনরাবৃত্তি, তবে diesmal বেশি কঠোর

ট্রাম্প এর আগেও তার কার্যকালে চীন, ইউরোপ ও ভারত সহ অনেক দেশের উপর শুল্ক আরোপ করেছেন। কিন্তু এইবার তিনি আরও কঠোর মনোভাব দেখাচ্ছেন। তিনি বলছেন যে, আমেরিকাকে বাণিজ্য ঘাটতি থেকে রক্ষা করতে এবং দেশীয় শিল্পকে উৎসাহিত করতে এই পদক্ষেপ জরুরি।

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থারও নজর

ট্রাম্পের শুল্ক প্রস্তাবের উপর বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থারও কড়া নজর রয়েছে। অনেকবার আমেরিকার শুল্ক সিদ্ধান্তকে ডব্লিউটিও নিয়মের পরিপন্থী বলেছে। এমন পরিস্থিতিতে এটা দেখা আকর্ষণীয় হবে যে, ইউরোপ এবং অন্যান্য দেশ এই বিষয়টি ডব্লিউটিও-তে তোলে নাকি আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খুঁজে বের করে।

শুল্কের প্রভাব একাধিক ক্ষেত্রে পড়তে পারে

যদি এই প্রস্তাব কার্যকর হয়, তবে এর প্রভাব মার্কিন বাজারে আসা যানবাহন, মেশিন, কৃষি পণ্য এবং ধাতুগুলির উপর পড়তে পারে। এতে সেখানকার দাম বাড়তে পারে এবং মুদ্রাস্ফীতিতে প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে, ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলির রপ্তানিকারকদেরও ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে।

ট্রাম্পের নীতি নিয়ে রাজনৈতিক বক্তব্য শুরু

এই সিদ্ধান্ত নিয়ে আমেরিকার অভ্যন্তরেও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। ট্রাম্প সমর্থকরা এটিকে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির অংশ বলছেন, যেখানে বিরোধী দলগুলি এটিকে বাণিজ্যিক অস্থিরতা এবং বিশ্বব্যাপী অংশীদারিত্বে তিক্ততার কারণ মনে করছে। ডেমোক্র্যাট নেতাদের ধারণা, এই ধরনের সিদ্ধান্তের ফলে আমেরিকার বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

শুল্ক ঘোষণার পর বিশ্ব বাজারে চাঞ্চল্য

ট্রাম্পের হুমকির পর আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। ডলারের অবস্থান শক্তিশালী হয়েছে, যেখানে ইউরোপীয় কোম্পানিগুলির শেয়ারের দাম কমেছে। অন্যদিকে, মেক্সিকোর রপ্তানিকারকদের মধ্যেও উদ্বেগের लहर দেখা দিয়েছে, কারণ তাদের প্রধান বাজার আমেরিকা।

Leave a comment