সোনা ও রুপোর দামে উল্লম্ফন: কারণ ও প্রভাব

সোনা ও রুপোর দামে উল্লম্ফন: কারণ ও প্রভাব

আগস্ট ৮, ২০২৫ তারিখে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে সোনা ও রূপা উভয়ের দাম বেড়েছে। মাল্টি কমোডিটি এক্সচেঞ্জে (MCX) সোনা প্রতি ১০ গ্রামে ৭০০ টাকা এবং রূপা প্রতি কিলোগ্রামে ৭০০ টাকা বেড়েছে। ডলারের শক্তিশালী অবস্থান, আমেরিকা-ভারত শুল্ক বিতর্ক এবং বিশ্ব অর্থনীতির অনিশ্চয়তার কারণে বিনিয়োগকারীরা সোনাকে নিরাপদ বিকল্প হিসেবে বিবেচনা করে এর ক্রয় বাড়িয়েছে।

Gold Price Today: শুক্রবার, আগস্ট ৮, ২০২৫ তারিখে ভারতীয় ফিউচার মার্কেট MCX-এ সোনা ও রূপার দামে ব্যাপক বৃদ্ধি দেখা গেছে। সোনার দাম ₹৭০০ প্রতি ১০ গ্রাম এবং রূপার দাম ₹৭০০ প্রতি কিলোগ্রাম বেড়েছে। এই বৃদ্ধি শুধুমাত্র দেশীয় বিনিয়োগকারীদের ক্রমবর্ধমান আগ্রহকেই প্রতিফলিত করে না, বরং বিশ্বব্যাপী তৈরি হওয়া উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি এবং আমেরিকা-ভারতের মধ্যে শুল্ক বিতর্কের গভীরতাকেও ইঙ্গিত করে।

আন্তর্জাতিক বাজারেও এই বৃদ্ধি দেখা গেছে, যেখানে সোনা ৩৪.৮০ ডলার বেড়ে ৩,৪৮৮.৫০ ডলার প্রতি আউন্সে পৌঁছেছে। এটি ১.০১ শতাংশ বৃদ্ধি। একই সময়ে, রূপা ০.২০১ ডলার বেড়ে ৩৮.৪৯৫ ডলার প্রতি আউন্সে দাঁড়িয়েছে।

কেন সোনা-রূপার দাম বাড়ছে?

বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্ব অর্থনীতির অস্থিরতা, মন্দার আশঙ্কা এবং ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ সম্পদে ঝুঁকছেন। এই কারণেই সোনা ও রূপার চাহিদা ক্রমাগত বাড়ছে। আমেরিকা কর্তৃক ভারতের উপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণার পরে দেশীয় শেয়ার বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে, যার ফলে সোনা আরও আকর্ষণীয় বিনিয়োগের বিকল্প হয়ে উঠেছে।

MCX-এ আজকের দাম

শুক্রবার মাল্টি কমোডিটি এক্সচেঞ্জে (MCX) সোনা দ্রুত বেড়ে প্রতি ১০ গ্রামে ১,০৫,৬২৬ টাকার স্তরে পৌঁছেছে। একই সময়ে, রূপার দামও বেড়ে ১ কিলোগ্রামে ১,৩৮,২০০ টাকা পর্যন্ত পৌঁছেছে। এই বৃদ্ধিতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উৎসাহ দেখা গেছে এবং ট্রেডিং ভলিউম বেড়েছে।

আপনার শহরে সোনার তাজা দাম

দেশের প্রধান শহরগুলোতে সোনার সর্বশেষ দাম নিচে উল্লেখ করা হলো:

দিল্লি:

  • ২৪ ক্যারেট সোনা: ₹১,০২,৭১০ প্রতি ১০ গ্রাম
  • ২২ ক্যারেট সোনা: ₹৯৪,১৬০ প্রতি ১০ গ্রাম

আহমেদাবাদ এবং পাটনা:

  • ২৪ ক্যারেট: ₹১,০২,৬১০
  • ২২ ক্যারেট: ₹৯৪,০৬০

মুম্বই, হায়দ্রাবাদ, চেন্নাই, বেঙ্গালুরু, কলকাতা:

  • ২৪ ক্যারেট: ₹১,০২,৫৬০
  • ২২ ক্যারেট: ₹৯৪,০১০

এই দামের পার্থক্য স্থানীয় ট্যাক্স, জুয়েলার্সের প্রিমিয়াম হার এবং লজিস্টিক চার্জের কারণে হয়ে থাকে।

রেপো রেট স্থিতিশীল, কিন্তু বাজারে অস্থিরতা বজায় আছে

ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মুদ্রা নীতি কমিটির (MPC) আগস্ট মাসের বৈঠকে রেপো রেট ৫.৫ শতাংশে অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। তা সত্ত্বেও, বিশ্ব বাজারের পরিস্থিতি এবং মার্কিন শুল্কের মতো বিষয়গুলি দেশীয় বাজারকে ধাক্কা দিয়েছে, যার ফলে বিনিয়োগকারীরা মুদ্রাস্ফীতি এবং বাজারের ঝুঁকি থেকে বাঁচতে সোনা কিনছেন।

কীভাবে সোনা-রূপার দাম নির্ধারিত হয়?

সোনা-রূপার দাম বেশ কয়েকটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে:

  • আন্তর্জাতিক দাম: নিউ ইয়র্ক মার্কেন্টাইল এক্সচেঞ্জে (COMEX) সোনা-রূপার গতিবিধি ভারতের বাজারেও প্রভাব ফেলে।
  • ডলার-রুপি বিনিময় হার: ডলার শক্তিশালী হলে ভারতে সোনা দামি হয়ে যায়, কারণ পেমেন্ট ডলারে হয়।
  • আমদানি শুল্ক এবং জিএসটি: ভারত সোনা আমদানিকারক দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। কাস্টমস ডিউটি, জিএসটি এবং স্থানীয় কর দামকে প্রভাবিত করে।
  • চাহিদা ও সরবরাহ: ভারতে বিয়ে এবং উৎসবের মরসুমে সোনার চাহিদা বেড়ে যায়, যার ফলে দাম বেড়ে যায়।
  • মুদ্রাস্ফীতি এবং সুদের হার: যখন মুদ্রাস্ফীতি বাড়ে বা সুদের হার কমে, তখন সোনার দিকে বিনিয়োগের ঝোঁক বাড়ে।
  • ভারতে সোনা: শুধুমাত্র একটি বিনিয়োগ নয়, সংস্কৃতির অংশ

ভারতে সোনার চাহিদা শুধুমাত্র বিনিয়োগের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় এবং সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাতু। বিবাহ, বিভিন্ন পার্বণ ও শুভ অনুষ্ঠানে সোনা কেনা একটি ঐতিহ্য। এই কারণে বাজারে মন্দা বা বিশ্ব সংকট সত্ত্বেও সোনার চাহিদা বজায় থাকে।

Leave a comment