আমেরিকা ভারত থেকে আমদানি করা কাপড়ের ওপর শুল্ক দ্বিগুণ করার পরে ভারতীয় বস্ত্রশিল্প সংকটে পড়েছে। প্রধান মার্কিন কোম্পানিগুলো অর্ডার স্থগিত করেছে এবং এতে রপ্তানি ৪০-৫০% পর্যন্ত কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের মতো দেশগুলো এতে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা পেতে পারে।
Garment export: ৬ অগাস্ট ২০২৫, মার্কিন সরকার ভারত থেকে আমদানি করা বস্ত্রের উপর আমদানি শুল্ক ২৫% থেকে বাড়িয়ে ৫০% করেছে। এর পরে ওয়ালমার্ট, অ্যামাজন, এইচএন্ডএম-এর মতো প্রধান কোম্পানিগুলো ভারত থেকে নতুন পোশাকের অর্ডার স্থগিত করেছে। ভারতীয় বস্ত্র শিল্পের জন্য আমেরিকা বৃহত্তম রপ্তানি বাজার, এমন পরিস্থিতিতে এই সিদ্ধান্ত শিল্পটির জন্য বড় ধাক্কা বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সিদ্ধান্তের ফলে ভারতের রপ্তানি ৪০-৫০% পর্যন্ত কমতে পারে, যেখানে বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম ও চীন এর সুবিধা পেতে পারে।
আমেরিকার সিদ্ধান্ত ও তার প্রভাব
মার্কিন প্রেসিডেন্টের ভারত থেকে আমদানি শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খলকে নাড়িয়ে দেওয়ার মতো পদক্ষেপ হিসেবে প্রমাণিত হচ্ছে। আমেরিকা ভারত থেকে সবচেয়ে বেশি বস্ত্র ও পোশাক আমদানি করে, কিন্তু শুল্ক বৃদ্ধির কারণে সেখানকার কোম্পানিগুলোর খরচ বাড়বে। তাই কোম্পানিগুলো আপাতত ভারতীয় সরবরাহকারীদের নতুন অর্ডার না পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে।
বায়িং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ই. বিশ্বনাথন জানিয়েছেন যে, আমেরিকান ক্রেতারা সব ধরনের বিলিং এবং আলোচনা স্থগিত করেছেন। অধিকাংশ কোম্পানি আগে থেকে দেওয়া অর্ডারগুলো ২৭ আগস্টের আগে পাঠানোর চেষ্টা করছে, যাতে বর্ধিত শুল্ক কার্যকর হওয়ার আগে পণ্য ক্রেতাদের কাছে পৌঁছায়।
বাণিজ্যিক পরিবেশে স্থিতিশীলতার অভাব
ভারতীয় বস্ত্র শিল্পে এই সিদ্ধান্তের পরে গভীর অনিশ্চয়তার পরিবেশ তৈরি হয়েছে। কিটেক্স গার্মেন্টসের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সাবু এম জ্যাকবের মতে, কোম্পানিগুলো অর্ডার বাতিল করেনি, তবে বর্ধিত শুল্কের কারণে দাম নির্ধারণে অক্ষমতার জন্য আপাতত সমস্ত অর্ডার স্থগিত রয়েছে। তিনি জানান, যতক্ষণ না পরিস্থিতি স্পষ্ট হচ্ছে, ততক্ষণ উৎপাদন ও সরবরাহ দুটোই বন্ধ রয়েছে।
ভারতের তুলনায় বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া ও কম্বোডিয়ার মতো দেশগুলোর উপর আমেরিকা তুলনামূলকভাবে কম আমদানি শুল্ক ধার্য করেছে। বাংলাদেশে যেখানে ২০% শুল্ক রয়েছে, সেখানে ভারতের জন্য তা বেড়ে ৫০% পর্যন্ত পৌঁছেছে।
মার্কিন বাজারের গুরুত্ব
ভারতের বস্ত্র শিল্পের জন্য আমেরিকা সবচেয়ে বড় এবং লাভজনক বাজার। জানুয়ারি থেকে মে ২০২৫-এর মধ্যে ভারত আমেরিকা থেকে ৪.৫৯ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পোশাক রপ্তানি করেছে। ২০২৪ সালের তুলনায় এটি ১৩% বেশি। পুরো ২০২৫ সালে এই সংখ্যা ১০.৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছতে পারত, কিন্তু এখন এতে বড় পতনের আশঙ্কা রয়েছে।
বস্ত্র শিল্প ভারতের জন্য শুধু কর্মসংস্থানের বড় উৎস নয়, বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনেরও প্রধান মাধ্যম। এমন পরিস্থিতিতে যদি এই সংকট দীর্ঘ হয়, তবে এর প্রভাব পুরো অর্থনৈতিক কাঠামোর উপর পড়তে পারে।
সরকারের হস্তক্ষেপের দাবি
বস্ত্র রপ্তানিকারকরা কেন্দ্র সরকারের কাছে অবিলম্বে হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন। তারা চান যে ভারত আমেরিকার সঙ্গে কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনা করে শুল্ক কমানোর বা স্থগিত করার চেষ্টা করুক।
এছাড়াও, সরকারকে দেশীয় উৎপাদন এবং রপ্তানিকারকদের ভর্তুকি, ট্যাক্স রিফান্ড ও সহজ ঋণের মতো সহায়তা দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, যাতে তারা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারে।