আদানি পাওয়ার লিমিটেড বিহারে ২৪০০ মেগাওয়াটের একটি নতুন তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরি করার বরাত পেয়েছে, যার আনুমানিক খরচ হবে প্রায় ৫৩,০০০ কোটি টাকা। এই প্রকল্পটি ভাগলপুরের পীরপৈন্তীতে স্থাপন করা হবে এবং এটি রাজ্যের বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করবে, সেইসাথে হাজার হাজার কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে।
নয়াদিল্লি: আদানি পাওয়ার লিমিটেড বিহার সরকার থেকে একটি বড় চুক্তি পেয়েছে, যার অধীনে কোম্পানিটি ভাগলপুরের পীরপৈন্তী গ্রামে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপন করবে। এই প্রকল্পের জন্য বিএসপিজিসিএল (BSPGCL) কোম্পানিকে লেটার অফ ইন্টেন্ট (LoI) জারি করেছে। প্রায় ৫৩,০০০ কোটি টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্প থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ উত্তর ও দক্ষিণ বিহারের ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিগুলিকে সরবরাহ করা হবে। 3x800 মেগাওয়াটের আল্ট্রা-সুপারক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির উপর ভিত্তি করে তৈরি এই প্ল্যান্টটি কেবল বিহারকে বিদ্যুতে স্বনির্ভর করবে না, সেইসাথে স্থানীয় কর্মসংস্থান এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নেও সহায়তা করবে।
৫৩,০০০ কোটি টাকা হবে মোট বিনিয়োগ
এই প্রকল্পে প্রায় ৫৩,০০০ কোটি টাকা (প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার) বিনিয়োগ করা হবে। কোম্পানির মতে, এই প্রকল্পটি ডিজাইন, বিল্ড, ফাইন্যান্স, ওন অ্যান্ড অপারেট (DBFOO) মডেলে তৈরি করা হবে। অর্থাৎ আদানি পাওয়ার এই প্রকল্পটি কেবল তৈরি করবে না, এর অর্থায়ন, পরিচালনা এবং মালিকানাও কোম্পানির কাছে থাকবে।
এই মডেলটি বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর একটি শক্তিশালী মাধ্যম হয়ে উঠছে, যেখানে সরকারের ভূমিকা তত্ত্বাবধান ও নীতিগত নির্দেশনার মধ্যে সীমাবদ্ধ।
বিহারের উভয় বিতরণ কোম্পানি বিদ্যুৎ পাবে
আদানি পাওয়ারের এই প্রকল্প থেকে উৎপাদিত ২২৭৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উত্তর ও দক্ষিণ বিহারের ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (NBPDCL এবং SBPDCL)-কে সরবরাহ করা হবে। এতে রাজ্যের শহর ও গ্রামীণ অঞ্চলে বিদ্যুতের প্রাপ্যতা বাড়বে বলে আশা করা যায়।
কোম্পানিটি শীঘ্রই লেটার অফ অ্যাওয়ার্ড (LoA) পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এরপর পাওয়ার সাপ্লাই এগ্রিমেন্ট (PSA) নিয়ে রাজ্য সরকার ও আদানি পাওয়ারের মধ্যে চুক্তি হবে।
সবচেয়ে কম দর দিয়ে চুক্তি জিতেছে
আদানি পাওয়ার এই প্রকল্পের নিলাম প্রক্রিয়ায় ৬.০৭৫ টাকা প্রতি কিলোওয়াট-ঘণ্টা (kWh) দরে সবচেয়ে কম দর দিয়েছিল। এই প্রতিযোগিতামূলক দর প্রক্রিয়ার অধীনে কোম্পানিটি LoI পেয়েছে।
প্রস্তাবিত তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি 3x800 মেগাওয়াটের আল্ট্রা-সুপারক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির উপর ভিত্তি করে তৈরি হবে, যা অধিক জ্বালানি দক্ষতা এবং কম কার্বন নিঃসরণ নিশ্চিত করে। এই প্রযুক্তিটি প্রচলিত তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির তুলনায় অনেক কম দূষণ ছড়ায়, তাই এটি আধুনিক ও পরিবেশ-বান্ধব হিসেবে বিবেচিত হয়।
সিইও আনন্দ প্রকাশ করেছেন
আদানি পাওয়ার লিমিটেডের সিইও এস. বি. খায়ালিয়া এই উপলক্ষে বলেন, "বিহারে আমরা ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি অত্যাধুনিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের সুযোগ পেয়ে অত্যন্ত উৎসাহিত। আমাদের লক্ষ্য হল রাজ্যকে নির্ভরযোগ্য, সাশ্রয়ী এবং উচ্চ মানের বিদ্যুৎ সরবরাহ করা। এই প্রকল্পটি কেবল শক্তি খাতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে না, সেইসাথে বিহারের শিল্প বিকাশেও গতি আনবে।"
খায়ালিয়া আরও বলেন যে এই পাওয়ার প্ল্যান্টটি কেবল বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হবে না, এটি রাজ্যে কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং স্থানীয় অর্থনীতির বিকাশেও অবদান রাখবে।
কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি পাবে
কোম্পানির মতে, এই পাওয়ার প্রজেক্টের নির্মাণকালে ১০,০০০ থেকে ১২,০০০ জন লোকের প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান হবে। অন্যদিকে, যখন প্ল্যান্টটি চালু হয়ে যাবে, তখন প্রায় ৩,০০০ জন লোকের স্থায়ী কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। এতে স্থানীয় যুবকরা প্রযুক্তি ও শিল্প ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনা খুঁজে পাবে।
আরও বলা হয়েছে যে এই পাওয়ার প্ল্যান্টের জন্য প্রয়োজনীয় কয়লা ভারত সরকারের SHAKTI (Scheme for Harnessing and Allocating Koyala Transparently in India) প্রকল্পের অধীনে সরবরাহ করা হবে।
নির্ধারিত সময়সীমায় উৎপাদন শুরু হবে
আদানি পাওয়ার স্পষ্ট করে জানিয়েছে যে এই প্রকল্পের প্রথম ইউনিটটি ৪৮ মাসের মধ্যে এবং শেষ ইউনিটটি ৬০ মাসের মধ্যে চালু করা হবে। অর্থাৎ প্রায় ৪ থেকে ৫ বছরের মধ্যে পুরো প্রকল্পটি পরিচালনা শুরু করে দেবে।
এই প্রকল্পের পরিচালনা বিহারকে ভবিষ্যতে বিদ্যুতের স্থিতিশীলতা এবং স্বনির্ভরতার দিকে উল্লেখযোগ্য সহায়তা করবে বলে আশা করা যায়। এই প্ল্যান্টটি রাজ্যের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি শিল্প উন্নয়ন এবং নগরায়ণকে বিদ্যুতের মাধ্যমে আরও শক্তিশালী করবে।