শ্রীরামচরিতমানস নিয়ে প্রাক্তন মন্ত্রী স্বামী প্রসাদ মৌর্যের বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে বারাণসীর আদালত এফআইআর দায়ের করার নির্দেশ দিয়েছে। ২০২৩ সালে এই মন্তব্যটি করা হয়েছিল, যা ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত হানার মতো বলে মনে করা হয়েছে।
স্বামী প্রসাদ মৌর্য: উত্তর প্রদেশের রাজনীতিতে এক সময়ে দলিত-পিছিয়ে পড়া শ্রেণির কণ্ঠস্বর হিসেবে পরিচিত প্রাক্তন মন্ত্রী স্বামী প্রসাদ মৌর্য ফের বিতর্কের কেন্দ্রে। দু’বছর আগে শ্রীরামচরিতমানস নিয়ে করা বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে এবার বারাণসীর আদালত তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করার নির্দেশ দিয়েছে। এই আইনি পদক্ষেপ এমন সময় নেওয়া হল, যখন মৌর্য ইতিমধ্যেই একটি জনসভায় থাপ্পড় খাওয়ার ঘটনার কারণে শিরোনামে এসেছেন।
পুরো ঘটনাটি কী?
২২ জানুয়ারি ২০২৩-এ একটি টিভি সাক্ষাৎকারে স্বামী প্রসাদ মৌর্য শ্রীরামচরিতমানস নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন। তিনি বলেন যে, এতে কিছু জাতিবিদ্বেষী কথা আছে এবং এটি সমাজের জন্য ক্ষতিকর। এমনকি তিনি এই গ্রন্থটির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির কথাও বলেন।
এই মন্তব্যের পরে বহু মানুষের ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত লাগে। সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচনার ঝড় ওঠে এবং অনেক ধর্মীয় সংগঠন এর তীব্র বিরোধিতা করে। বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ হয় এবং মৌর্যের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি ওঠে।
আইনি লড়াইয়ের শুরু
স্বামী প্রসাদ মৌর্যের বিবৃতির পরে, আইনজীবী অশোক কুমার এটিকে গুরুতর মনে করে ২৪ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখে বারাণসীর পুলিশ কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্তু পুলিশের কাছ থেকে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় তিনি ২৫ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখে আদালতে সিআরপিসি-র ধারা ১৫৬(৩) এর অধীনে মামলা দায়ের করার আবেদন করেন।
যদিও, আদালত ১৭ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে এই আবেদন খারিজ করে দেয়। এরপর অশোক কুমার হাল ছাড়েননি এবংSession আদালতে পুনরায় আবেদন করেন। তিনি একটি ফৌজদারি রিভিশন পিটিশন দাখিল করেন, যার ফলে মামলাটি পুনরায় শোনা হয়।
এবার আদালতের মামলা দায়ের করার নির্দেশ
৬ অগাস্ট ২০২৫ তারিখে আদালত বড় সিদ্ধান্ত নেয়। বিশেষ বিচারক (এমপি/এমএলএ আদালত)-এর নির্দেশের পর, অতিরিক্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট নীরজ কুমার ত্রিপাঠী বারাণসীর ক্যান্টনমেন্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে স্বামী প্রসাদ মৌর্যের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে পুরো তদন্ত শুরু করার নির্দেশ দেন।
এই নির্দেশের পর মৌর্যের আইনি জটিলতা বাড়তে পারে, কারণ এখন পুলিশ তাঁর পুরনো বিবৃতির তদন্ত করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে।
থাপ্পড় কাণ্ডের পর নতুন বিপদ
এই মামলার আগেও স্বামী প্রসাদ মৌর্য অন্য একটি বিতর্কে জড়িয়েছিলেন। কয়েক মাস আগে একটি জনসভায় এক যুবক তাঁকে থাপ্পড় মেরেছিল। এই ঘটনাটিও শ্রীরামচরিতমানসের বিরোধিতা করার জন্য ঘটেছিল। সেই সময়েও সমাজের একটি অংশে মৌর্যের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ দেখা গিয়েছিল।
কে এই স্বামী প্রসাদ মৌর্য?
স্বামী প্রসাদ মৌর্য উত্তর প্রদেশের রাজনীতিতে একটি পরিচিত নাম। তিনি মায়াবতীর সঙ্গে বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি)-তে মন্ত্রী ছিলেন এবং পরে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)-তে যোগদান করেন। যোগী আদিত্যনাথের প্রথম কার্যকালে তিনি ক্যাবিনেট মন্ত্রীও ছিলেন। কিন্তু ২০২২ সালের বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক আগে তিনি বিজেপি ছেড়ে সমাজবাদী পার্টি (সপা)-তে যোগ দেন।
সম্প্রতি তিনি সপা থেকেও আলাদা হয়ে নিজের দল রাষ্ট্রীয় শোষিত সমাজ পার্টি (আরএসএসপি) প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি নিজেকে দলিত এবং পিছিয়ে পড়া শ্রেণির কণ্ঠস্বর বলে দাবি করে রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছেন। তবে তাঁর সাম্প্রতিক কিছু মন্তব্য তাঁকে বেশি ক্ষতি করেছে।
ধর্মীয় বিষয়ে কেন এই মন্তব্য?
স্বামী প্রসাদ মৌর্যের দাবি, শ্রীরামচরিতমানসের মতো ধর্মীয় গ্রন্থে অনেক জায়গায় জাতিবিদ্বেষী ও নারীবিদ্বেষী কথা লেখা আছে, যা সমাজের পিছিয়ে পড়া শ্রেণিকে অপমান করে। এই যুক্তিতেই তিনি মন্তব্য করেছিলেন, কিন্তু তাঁর বলার ধরণ এবং শব্দ চয়ন এতটাই বিতর্কিত ছিল যে তিনি আইনি পদক্ষেপকে আহ্বান জানিয়েছেন।
এরপর আইনি প্রক্রিয়া কী হবে?
এখন আদালত এফআইআর দায়ের করে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে, তাই পুলিশ শীঘ্রই এই বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে। তদন্তের সময় মৌর্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে এবং অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাঁর বিরুদ্ধে ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করা, জনশান্তি ভঙ্গ করা এবং অভদ্র ভাষা ব্যবহারের মতো ধারায় মামলা চালানো হতে পারে।