মধ্যবিত্তের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন, এবার কি সত্যি হতে চলেছে?
সোনার দাম কমুক—এই প্রার্থনা যেন মধ্যবিত্তের চিরন্তন কামনা। একদিকে বিবাহ কিংবা উৎসবের কেনাকাটা, অন্যদিকে সঞ্চয়—সবেতেই সোনা যেন এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। অনেকেই দাম পড়াকে অশুভ সংকেত বলে মনে করলেও, গৃহস্থ মধ্যবিত্তের জন্য তা আশার আলো। এমন সময়ে সরকারও ভাবছে কম ক্যারাটের সোনার গয়না (৯ ক্যারাট) বাজারে আনার কথা। তবে প্রশ্ন ওঠে, এটা কি যথার্থ সমাধান? কারণ সোনার দামের চক্রবাক বোঝার জন্য নজর রাখতে হয় বৈশ্বিক পরিস্থিতির উপরেও।
বিশ্বজুড়ে সংকটে সোনা 'সেফ হেভেন', কিন্তু আজ কী বদলাচ্ছে ছক?
দীর্ঘকাল ধরে সোনাকে বলা হয় ‘নিরাপদ বিনিয়োগ’। যখনই বিশ্বব্যাপী আর্থিক বা ভূরাজনৈতিক অনিশ্চয়তা দেখা দেয়, তখন বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কিংবা অন্যান্য সম্পদ বিক্রি করে সোনায় ঝুঁকেন। আর সেই চাহিদার চাপেই দামের উর্ধ্বগতি ঘটে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এক বড় পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে—বিশ্বের বড় বড় কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলোর মধ্যে সোনা কেনার গতি অনেকটা কমেছে। এর প্রভাব পড়ছে দামেও।
পরিসংখ্যান বলছে কী? সোনার বাজারে নেমেছে ‘স্নায়ুচাপ’
ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের (WGC) তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলি কিনেছিল ১,০৮২ টন সোনা। ২০২৩ সালে তা ছিল ১,০৩৭ টন, আর ২০২৪ সালে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১,১৮০ টনে। অথচ ২০২০ ও ২০২১ মিলিয়ে কেনা হয়েছিল মোটে ১,০০০ টনেরও কম। এই বৃদ্ধির ধারাই বাজারে আশাবাদ তৈরি করেছিল। কিন্তু ধাক্কাটা আসে ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে—যেখানে কিনেছে মাত্র ১৬৬.৫ টন সোনা, আগের ত্রৈমাসিকের তুলনায় এক-তৃতীয়াংশ কম। বছরে যেখানে চাহিদা আশা করা হচ্ছিল ১,০০০ টন ছাড়াবে, তা নেমে আসতে পারে মাত্র ৮১৫ টনে।
ধাক্কা কি তবে এখনই? ভারতে চাহিদা কমছে, উৎসবেও নেই উন্মাদনা!
সোনার দাম বাড়ায় ভারতীয় বাজারেও পড়েছে প্রভাব। সাধারণত বিয়ে কিংবা উৎসবের মরসুমে সোনার বিক্রি বাড়ে, কিন্তু এবার চিত্রটা ভিন্ন। উচ্চমূল্যের ধাক্কায় অনেকে পেছিয়ে যাচ্ছেন। যদিও ২০২৪ সালে ভারত ৬৩.৩ বিলিয়ন ডলারের সোনা আমদানি করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৩৯ শতাংশ বেশি, তবুও একাধিক সমীক্ষা বলছে ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতা ও মনোভাব বদলাচ্ছে। মূল্যবৃদ্ধির চাপে এখন আর আগের মতো ঝাঁকে ঝাঁকে গয়না কেনা হচ্ছে না।
ভবিষ্যতের দিশা: ৪০০০ ডলার প্রতি আউন্স? নাকি পতনের ধাক্কা?
Bank of America-র একটি বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, যদি মার্কিন অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়ে কিংবা ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন ট্যারিফ নীতির প্রভাবে ডলারের মূল্য পড়ে যায়, তাহলে ২০২৫ সালের মধ্যেই সোনার দাম ছুঁতে পারে $৪,০০০ প্রতি আউন্স। তবে পাশাপাশি বিশ্লেষকরা এও বলছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলোর কেনাকাটার এই ধীরগতি যদি বজায় থাকে, তাহলে দাম আরও পড়তেও পারে। ফলে বিনিয়োগকারীদের এখন চূড়ান্ত সতর্কতার সময়।
এখনই সোনা কিনবেন? নাকি একটু অপেক্ষা?
সোনার বাজারে এখন চলছে ধোঁয়াশার আবহ। কিছু উপাদান বলছে দাম বাড়তে পারে, আবার কিছু দেখাচ্ছে পতনের ইঙ্গিত। সেক্ষেত্রে ব্যক্তিগত লক্ষ্য, ঝুঁকি গ্রহণের ক্ষমতা এবং বাজারে চোখ রেখে ধীরে চলাই হবে বিচক্ষণতার পরিচয়। মধ্যবিত্তের জন্য একমাত্র পরামর্শ—উচ্ছ্বাসে গয়না কিনতে নয়, যুক্তি দিয়ে বিনিয়োগ করুন।