দামের ওঠানামায় চমক
সোমবার সকালে কলকাতার সোনার বাজারে দেখা গেল চমক। অনেকেই ভেবেছিলেন দাম হয়তো আবার বাড়বে বা কমবে, কিন্তু বাস্তবে হল তার উল্টো। ২৫ আগস্ট সকাল পর্যন্ত সোনার বাজারে দামে কোনও পরিবর্তন হয়নি। প্রতিদিনই আন্তর্জাতিক বাজারের নানা ওঠাপড়া, ডলার-রুপির বিনিময় হার কিংবা ক্রুড অয়েলের দামের প্রভাব পড়ে সোনার দামে। কিন্তু আজকের বাজারে তার কোনও ছাপ পড়ল না।
বিনিয়োগকারীদের কৌতূহল
সোনার দামের এই স্থিতিশীলতা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। কারণ, গত কয়েক মাসে প্রায় প্রতিদিনই দামে বড়সড় পরিবর্তন দেখা গিয়েছে। কখনও হু হু করে দাম বেড়েছে, আবার হঠাৎ করে কমেও গিয়েছে। ফলে যারা দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করতে চান, তাঁদের মধ্যে একধরনের সংশয় তৈরি হয়েছে—আজই কিনবেন নাকি আরও কিছুদিন অপেক্ষা করবেন।
কেন জরুরি দামের খোঁজ রাখা
বিশেষজ্ঞদের মতে, যারা সোনা কিনতে চান বা সোনায় বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছেন, তাঁদের প্রতিদিনকার দাম নজরে রাখা জরুরি। কারণ, আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি ও ভারতীয় বাজারের চাহিদার উপর নির্ভর করে দাম মুহূর্তেই বদলে যেতে পারে। উৎসবের মরশুমে যখন চাহিদা বেড়ে যায়, তখন দামেরও উত্থান হয়। তাই যাঁরা সোনায় টাকা লাগাচ্ছেন, তাঁদের জন্য সর্বশেষ দামের খোঁজ রাখা একেবারেই প্রয়োজনীয়।
সোমবারের নির্দিষ্ট দাম
২৫ অগাস্ট সকাল পর্যন্ত সোনার বাজারে দামের তালিকা অনুযায়ী, ২২ ক্যারেট সোনার দাম হয়েছে প্রতি গ্রামে ৯৫১০ টাকা। অন্যদিকে ১৮ ক্যারেট সোনার দাম দাঁড়িয়েছে ৭৮০৫ টাকা প্রতি গ্রামে। শুধু সোনা নয়, রুপোর দামও স্থির থেকেছে। এক কেজি রুপোর দাম হয়েছে ১,১৬,১৫৬ টাকা। তবে মনে রাখতে হবে, এই দামের সঙ্গে ক্রেতাদের আরও ৩ শতাংশ জিএসটি (GST) দিতে হবে। ফলে প্রকৃত কেনার সময় দাম আরও কিছুটা বাড়বে।
আগের মাসের অভিজ্ঞতা
গত কয়েক মাসে সোনার বাজারে নাটকীয় পরিবর্তন দেখা গেছে। জুন ও জুলাই মাসে সোনার দাম হঠাৎ বেড়ে রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছিল। আবার পরবর্তী সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে চাপ তৈরি হওয়ায় দাম কমতেও দেখা গিয়েছিল। সেই অভিজ্ঞতার কারণে অনেক ক্রেতা এখনও দ্বিধায় রয়েছেন—কখন সোনা কিনলে সবচেয়ে লাভজনক হবে।
দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের দৃষ্টিকোণ
অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, সোনা শুধু গয়না কেনার বিষয় নয়, বরং এটি দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের অন্যতম নিরাপদ মাধ্যম। বিশ্বের যেকোনও প্রান্তে আর্থিক মন্দা, রাজনৈতিক অস্থিরতা বা বাজারে অনিশ্চয়তা তৈরি হলে সোনার দাম সাধারণত বেড়ে যায়। তাই যারা ঝুঁকিমুক্ত বিনিয়োগ চান, তাঁদের কাছে সোনা এখনও সমান প্রাসঙ্গিক।
উৎসবের মরশুমে চাহিদা
ভারতবর্ষে উৎসব মানেই সোনা কেনা। দুর্গাপুজো, দীপাবলি বা বিয়েবাড়ির মরশুমে সোনার দোকানে ভিড় লেগেই থাকে। সেই সময় চাহিদা বাড়লে দামে উত্থান ঘটে। তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যারা উৎসবের জন্য সোনা কিনতে চাইছেন, তাঁদের এখন থেকেই বাজারের গতিবিধি নজরে রাখা উচিত। দাম স্থির থাকলেও উৎসবের ক’দিন আগে হঠাৎ উত্থান দেখা দিতে পারে।
রুপোর বাজারও নজরে
শুধু সোনা নয়, রুপোও এখন বিনিয়োগের ভালো মাধ্যম হয়ে উঠছে। এক কেজি রুপোর দাম ১,১৬,১৫৬ টাকা হওয়ায় অনেকেই দীর্ঘমেয়াদে রুপো কিনতে আগ্রহী হচ্ছেন। শিল্পক্ষেত্রে রুপোর ব্যবহার এবং দৈনন্দিন জীবনে এর চাহিদা বাড়ায়, আগামী দিনে এর দামও আরও উপরের দিকে উঠতে পারে বলে অনুমান করছেন বাজার বিশেষজ্ঞরা।
ক্রেতাদের সতর্ক বার্তা
স্বর্ণশিল্প বাঁচাও কমিটির তরফে জানানো হয়েছে, সোনা বা রুপো কেনার সময় অফিসিয়াল দামের পাশাপাশি জিএসটি যুক্ত হবে। ফলে অনেকসময় দোকানে গিয়ে দাম দেখে ক্রেতারা বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন। তাই কেনার আগে সরকারি ঘোষিত দাম জেনে নেওয়া এবং বিল সহ কেনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
উপসংহার
সব মিলিয়ে সোমবার সকালের বাজার সোনার দামের ক্ষেত্রে বেশ শান্ত ছিল। কোনও পরিবর্তন না হলেও বিনিয়োগকারী ও ক্রেতাদের মধ্যে কৌতূহল কমেনি। বিশেষজ্ঞদের মতে, আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি যেকোনও মুহূর্তে দামে নতুন পরিবর্তন আনতে পারে। তাই প্রতিদিনের দাম খোঁজ রাখা এবং সচেতন হয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়াই সবচেয়ে ভালো পথ।