ঘূর্ণিঝড় মন্থার প্রভাব উত্তর ভারত পর্যন্ত পৌঁছেছে। দিল্লি-এনসিআর, ইউপি এবং বিহারে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। অন্ধ্র প্রদেশে স্কুল বন্ধ এবং ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। আইএমডি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় মন্থা: বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘মন্থা’ (Cyclone Montha) এখন উপকূলীয় অঞ্চলগুলি অতিক্রম করে উত্তর ভারতের আবহাওয়াকেও প্রভাবিত করতে শুরু করেছে। ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ (IMD) জানিয়েছে যে মন্থা আজ অর্থাৎ মঙ্গলবার অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূলীয় অংশে আঘাত হানতে চলেছে। এর প্রভাবে দেশের বেশ কয়েকটি রাজ্যে বৃষ্টি এবং ঠাণ্ডা বাতাস বইতে পারে।
আইএমডি অনুসারে, এই ঘূর্ণিঝড়টি প্রায় ১০০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা বেগে উপকূলে আঘাত হানবে। অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গে এর সর্বাধিক প্রভাব দেখা যাবে। এই রাজ্যগুলির সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চলগুলিতে প্রশাসন সতর্কতা জারি করেছে এবং জনগণকে উপকূলীয় অঞ্চল থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
অন্ধ্রপ্রদেশে সতর্কতা, স্কুল ও ট্রেন বন্ধ
মন্থার বিপদ বিবেচনা করে অন্ধ্রপ্রদেশ সরকার একাধিক সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিয়েছে। উপকূলীয় জেলাগুলিতে স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখার নির্দেশ জারি করা হয়েছে। বেশ কিছু ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে, অন্যদিকে সাউথ সেন্ট্রাল রেলওয়ে বিজয়ওয়াড়া ডিভিশনের অধীনে ৫৪টি ট্রেন স্থগিত করেছে।

রাজ্যের পেদ্দাপল্লী, জয়শঙ্কর ভূপালপল্লী এবং মুলুগু জেলাগুলিতে কমলা সতর্কতা (Orange Alert) জারি করা হয়েছে, যেখানে উত্তর-পূর্ব জেলাগুলিতে হলুদ সতর্কতা (Yellow Alert) ঘোষণা করা হয়েছে। ওড়িশাতেও আগামী দুই-তিন দিন ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
দিল্লি-এনসিআরে আবহাওয়ার পরিবর্তন
মন্থার প্রভাবের মধ্যে দিল্লি-এনসিআর (Delhi-NCR)-এও আবহাওয়ায় পরিবর্তন দেখা যাবে। আবহাওয়া বিভাগ অনুসারে, একটি সক্রিয় পশ্চিমী ঝঞ্ঝার (Western Disturbance) কারণে আগামী দুই দিন আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকবে এবং হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
বৃষ্টির কারণে দিল্লি এবং আশেপাশের অঞ্চলে তাপমাত্রা হ্রাস পাবে, যা আবহাওয়াকে মনোরম করে তুলবে। বিভাগ জানিয়েছে যে এই হালকা বৃষ্টি বায়ুর গুণমান (Air Quality) উন্নত করতে পারে।
ইউপি-তেও বৃষ্টি ও ঠাণ্ডা বাতাসের পূর্বাভাস
উত্তর প্রদেশ (Uttar Pradesh)-এও মন্থার পরোক্ষ প্রভাব দেখা যেতে শুরু করেছে। রাজ্যের বেশ কয়েকটি জেলায় সোমবার রাত থেকেই মেঘাচ্ছন্ন আকাশ ছিল। বান্দা, ফতেহপুর, জালান এবং কানপুরের মতো অঞ্চলে হালকা বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।
রাজধানী লখনউতেও মেঘের আনাগোনা এবং হালকা বৃষ্টিতে ভাপসা গরম থেকে স্বস্তি মিলেছে। তাপমাত্রা হ্রাস পেয়েছে — সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছেছে। তবে, রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পাওয়ায় কিছু অঞ্চলে ভাপসা গরম বজায় ছিল।
আইএমডি অনুসারে, রাজ্যের ৫০টিরও বেশি জেলায় মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি সর্বোচ্চ তাপমাত্রা তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে।
বিহার-এ ঘূর্ণিঝড় মন্থার প্রভাব বেশি

বিহার-এ মন্থার প্রভাব উত্তর প্রদেশের তুলনায় বেশি থাকার অনুমান করা হচ্ছে। কারণ এই রাজ্য ওড়িশার প্রতিবেশী এবং ঘূর্ণিঝড়ের গতিপথ উত্তর-পূর্ব দিকে।
পাটনা, গয়া, ভাগলপুর এবং দারভাঙ্গার মতো জেলাগুলিতে আগামী কয়েক দিন মেঘাচ্ছন্ন আকাশ থাকবে এবং কিছু স্থানে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি (Moderate Rainfall) হতে পারে।
বিহার-এ তাপমাত্রা হ্রাসের সম্ভাবনাও জানানো হয়েছে। আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন যে বাতাসের দিক দক্ষিণ-পূর্ব দিকে পরিবর্তিত হয়েছে, যার ফলে আর্দ্রতা (Humidity) বেড়েছে এবং আগামী দুই-তিন দিন এমন আবহাওয়া বজায় থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
আবহাওয়া বিভাগের সতর্কতা
আইএমডি সমস্ত রাজ্যের মানুষকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে। বিভাগ জানিয়েছে যে উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসকারী জেলেরা (Fishermen) আগামী ৪৮ ঘণ্টা সমুদ্রে না যান। এছাড়াও, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং ওড়িশার নিম্নভূমি অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষদের নিরাপদ স্থানে চলে যেতে বলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় মন্থার প্রভাব কতদিন থাকবে
আইএমডি অনুসারে, মন্থার প্রভাব আগামী চার থেকে পাঁচ দিন ধরে বিভিন্ন রাজ্যে অনুভূত হবে। অন্ধ্রপ্রদেশ এবং ওড়িশাতে এর প্রভাব মঙ্গলবার ও বুধবার সবচেয়ে বেশি থাকবে। এর পর এর প্রভাব ঝাড়খণ্ড, বিহার, পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ভাগ এবং পূর্ব উত্তর প্রদেশ পর্যন্ত পৌঁছাবে।













