সরকার দেশের বৃহত্তম কর্পোরেট সংস্থাগুলির মধ্যে অন্যতম রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে। এই মামলাটি রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের একটি সহযোগী সংস্থা রিলায়েন্স কমার্শিয়াল ডিলার্স লিমিটেডের সঙ্গে যুক্ত। কর সংক্রান্ত একটি পুরোনো বিবাদে কেন্দ্র সরকার এখন আদালতের হস্তক্ষেপ চেয়েছে।
চার্টার্ড ফ্লাইটের ওপর কতটা কর ধার্য করা হবে, তা নিয়েই বিতর্ক
এই পুরো বিষয়টিই চার্টার্ড ফ্লাইট সার্ভিসের ওপর কতটা কর প্রযোজ্য হবে, তা নিয়ে। কর বিভাগের মতে, রিলায়েন্সের এই সংস্থাটি আসলে বিমান ভাড়া দিচ্ছে, তাই এর ওপর ১৮ শতাংশ জিএসটি ধার্য করা উচিত। অন্যদিকে, রিলায়েন্সের তরফে বলা হয়েছে যে তারা শুধুমাত্র যাত্রী পরিবহন পরিষেবা দিচ্ছে, যা বিমানযাত্রার মতোই করের আওতায় আসে এবং এর ওপর ৫ শতাংশ জিএসটি প্রযোজ্য।
সুপ্রিম কোর্ট শুনানির জন্য সম্মতি দিয়েছে
এই বিবাদ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দুই সদস্যের বেঞ্চ, বিচারপতি মনোজ মিশ্র এবং বিচারপতি উজ্জ্বল ভুঁইয়া এই মামলার শুনানির জন্য রাজি হয়েছেন। আদালত রিলায়েন্স কমার্শিয়াল ডিলার্স লিমিটেডকে নোটিশ জারি করেছে এবং উভয় পক্ষকে দুই সপ্তাহের মধ্যে লিখিতভাবে তাদের বক্তব্য পেশ করতে বলেছে।
আইনি ব্যাখ্যাই এখন মূল বিষয়
বিচারপতি মিশ্র শুনানির সময় বলেছেন যে এটি শুধুমাত্র করের বিষয় নয়, বরং আইনের সঠিক ব্যাখ্যারও প্রশ্ন। তিনি বলেন, এটা স্পষ্ট করা জরুরি যে কোনো পরিষেবা শুধুমাত্র বিমান পরিষেবা নাকি সেটি বিমান ভাড়া দেওয়ার শ্রেণিতে পড়ে।
সরকারের পক্ষ শক্তিশালী হলে কী প্রভাব পড়বে
যদি আদালত সরকারের পক্ষে রায় দেয়, তবে এর দ্বারা শুধু রিলায়েন্স নয়, সেই সমস্ত কোম্পানি প্রভাবিত হবে যারা এই ধরনের চার্টার্ড ফ্লাইট পরিষেবা ব্যবহার করে। কোম্পানিগুলোকে পুরোনো করও পরিশোধ করতে হতে পারে এবং ভবিষ্যতে এই পরিষেবাগুলোর খরচও অনেক বেড়ে যেতে পারে। এর ফলে আধিকারিক ও কর্পোরেট ক্লায়েন্টদের জন্য প্রাইভেট জেট বা চার্টার্ড ফ্লাইটের ব্যবহার করা কঠিন হয়ে যেতে পারে।
ডিজিসিএ-র নিয়মেরও উল্লেখ আছে
এই মামলাটি ডিজিসিএ অর্থাৎ অসামরিক বিমান চলাচল মহানির্দেশকের নিয়মের সঙ্গেও জড়িত। ডিজিসিএ-র অনুসারে, নন-শিডিউল্ড এয়ার ট্রান্সপোর্ট সার্ভিসেস অর্থাৎ যে পরিষেবাগুলো নির্দিষ্ট সময়ে নয়, বরং চাহিদার ভিত্তিতে দেওয়া হয়, সেগুলোকে বিশেষ পারমিটের অধীনেই চালাতে হয়। একে নন-শিডিউল্ড অপারেটর পারমিট বা এনএসওপি বলা হয়। এই ধরনের পরিষেবাগুলোর ওপর বর্তমানে ৫ শতাংশ জিএসটি প্রযোজ্য, যেখানে বিমান ভাড়া দিলে ১৮ শতাংশ কর নেওয়া হয়।
সরকার মনে করে এটি বিমান ভাড়া দেওয়ার পরিষেবা
অন্যদিকে, কর বিভাগের যুক্তি হল এই পুরো ব্যবস্থাটি বিমান ভাড়া দেওয়ার মতোই, কারণ এটি শুধুমাত্র রিলায়েন্স গ্রুপের সিনিয়র আধিকারিক ও কর্মচারীদের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। তাদের বক্তব্য, এটি এক ধরনের প্রাইভেট এয়ারক্রাফটের সুবিধা, যা কোম্পানি নিজের জন্য রিজার্ভ করেছে। তাই এটিকে যাত্রী পরিষেবা হিসেবে গণ্য করা উচিত নয়।
এখন পর্যন্ত এই মামলায় কী হয়েছে
এতদিন এই মামলাটি ট্যাক্স ট্রাইব্যুনাল ও নিম্ন আদালতে এসেছে। কিন্তু রায় রিলায়েন্সের পক্ষেই গেছে। এর বিরুদ্ধে সরকার সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেছে, যা আদালত গ্রহণ করেছে। এখন আগামী কয়েক সপ্তাহে এই বিষয়টি আদালতে গুরুতর আলোচনার বিষয় হতে চলেছে।
বড় কোম্পানিগুলোর ওপর প্রভাব পড়বে
যদি আদালত সরকারের কথা মানে, তবে এর সরাসরি প্রভাব বড় কোম্পানিগুলোর ওপর পড়বে। বিশেষ করে সেই কোম্পানিগুলো যারা তাদের আধিকারিকদের জন্য চার্টার্ড ফ্লাইট বা প্রাইভেট জেট ব্যবহার করে। করের বোঝা বাড়লে এই পরিষেবাগুলো অনেক বেশি ব্যয়বহুল হয়ে যেতে পারে।
পুরোনো করও লাগু হতে পারে
সরকারের যুক্তি যদি জোরালো প্রমাণিত হয়, তবে শুধু ভবিষ্যতের করের হার বাড়তে পারে তাই নয়, কোম্পানিগুলোকে আগের ফ্লাইটগুলোর ওপরও কর জমা দিতে হতে পারে। এই অঙ্ক কয়েক কোটিতেও যেতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে মামলাটি কেবল আইনি নয়, অর্থনৈতিকভাবেও খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়।