কর্ণাটকে ছোট ব্যবসায়ীদের মধ্যে আজকাল উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। এর কারণ হল – একের পর এক জিএসটি নোটিস, যা সেই ব্যবসায়ীদের পাঠানো হচ্ছে যারা বিগত বছরগুলিতে ইউপিআই-এর মাধ্যমে ব্যবসা করেছেন। এ পর্যন্ত প্রায় ৬০০০ ব্যবসায়ীকে এই নোটিস পাঠানো হয়েছে। এঁরা সেই ব্যবসায়ী যারা সবজি, মুদি, দুধ বা অন্যান্য খুচরা জিনিস বিক্রি করেন এবং বেশিরভাগই নগদের পরিবর্তে এখন ডিজিটাল লেনদেন অর্থাৎ ইউপিআই ব্যবহার করেন।
সবজি বিক্রেতাকে ২৯ লক্ষ টাকার ট্যাক্স নোটিস
সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে একটি ঘটনা নিয়ে, যেখানে বেঙ্গালুরুর এক সবজি বিক্রেতাকে ২৯ লক্ষ টাকার জিএসটি নোটিস ধরানো হয়েছে। খবর অনুযায়ী, এই দোকানদার গত চার বছরে মোট ১.৬৩ কোটি টাকার লেনদেন করেছেন, যা সম্পূর্ণ ইউপিআই-এর মাধ্যমে হয়েছে। আয়কর বিভাগ এটিকে ব্যবসার টার্নওভার ধরে নিয়ে তার উপর ট্যাক্স চেয়েছে।
বহু ব্যবসায়ী নোটিস পাওয়ায় চাঞ্চল্য
এমনটা শুধু একজন দোকানদারের সঙ্গেই ঘটেনি। ব্যবসায়ী সংগঠনগুলির মতে, হাজার হাজার ছোট ব্যবসায়ী একই ধরনের নোটিস পেয়েছেন। এই নোটিস সাধারণত সেই ব্যবসায়ীরা পাচ্ছেন যাদের ডিজিটাল লেনদেন গত কয়েক বছরে ৪০ লক্ষ টাকার বেশি হয়েছে। এক্ষেত্রে, জিএসটি বিভাগের বক্তব্য হল এই লেনদেন ব্যবসার শ্রেণীতে পড়ে এবং তাই ট্যাক্স নির্ধারণ করা জরুরি।
জিএসটি আধিকারিক বললেন – ট্যাক্স ফাইনাল নয়, জবাব দিলে রেহাই মিলতে পারে
কর্ণাটকের বাণিজ্যিক কর বিভাগের জয়েন্ট কমিশনার মীরা সুরেশ পণ্ডিত বলেছেন যে এই নোটিস শুধুমাত্র প্রি-অ্যাসেসমেন্ট হিসাবে পাঠানো হচ্ছে। এটিকে এখনও ফাইনাল ট্যাক্সের দাবি হিসেবে ধরা যায় না। ব্যবসায়ীরা চাইলে তাদের নথি দিয়ে জবাব দাখিল করতে পারেন। যদি এটা স্পষ্ট হয় যে লেনদেন ব্যবসার আওতায় পড়ে না বা ইনকাম লিমিটের নীচে আছে, তাহলে নোটিস বাতিল করা হতে পারে।
ক্ষোভ প্রকাশ ব্যবসায়ীদের, ধর্মঘটের হুঁশিয়ারি
অন্যদিকে, এই নোটিসগুলির জেরে ব্যবসায়ীদের মধ্যে প্রচুর অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। কর্ণাটকের বেশ কয়েকটি ব্যবসায়ী সংগঠন মিলিতভাবে ২৫শে জুলাই রাজ্যব্যাপী ধর্মঘটের হুমকি দিয়েছে। তাঁদের বক্তব্য, ছোট ব্যবসায়ীদের কোনো রকম আগাম সতর্কতা বা তদন্ত ছাড়াই সরাসরি মোটা অঙ্কের নোটিস ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে, যার ফলে ব্যবসায়ীদের মধ্যে ভয় ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে।
কিছু সংগঠন ইউপিআই-এর মাধ্যমে লেনদেন বন্ধ করারও আবেদন জানিয়েছে। ব্যবসায়ীদের ধারণা, যদি ডিজিটাল ট্রানজেকশনকে এভাবে ট্যাক্সের নজরদারিতে আনা হয়, তাহলে ছোট ব্যবসায়ীদের ক্যাশে ফিরতে হবে, যা ডিজিটাল ইন্ডিয়ার স্বপ্নকে প্রভাবিত করতে পারে।
সরকারের বক্তব্য – আইনের আওতায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ
মীরা সুরেশ পণ্ডিত স্পষ্ট করে জানিয়েছেন যে জিএসটি অ্যাক্ট অনুযায়ী যদি কোনো ব্যবসায়ীর টার্নওভার পরিষেবার ক্ষেত্রে ২০ লক্ষ টাকা এবং পণ্যের ক্ষেত্রে ৪০ লক্ষ টাকা অতিক্রম করে, তাহলে রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক। এর পাশাপাশি, তাঁদের সময়ে সময়ে রিটার্ন দাখিল করা এবং ট্যাক্স পরিশোধ করাও জরুরি।
তিনি আরও বলেন যে নোটিসগুলির উদ্দেশ্য কাউকে ভয় দেখানো নয়, বরং সঠিক ট্যাক্স নির্ধারণ করা। যদি কোনো ব্যবসায়ী নিয়ম অনুযায়ী ট্যাক্সের আওতায় না আসেন, তাহলে তাঁর ভয় পাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।
ডিজিটাল পেমেন্টের ডেটা ট্যাক্সের ভিত্তি
আসলে, এই নোটিসগুলির ভিত্তি হল ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেমের ডেটা। ইউপিআই এবং অন্যান্য অনলাইন পেমেন্ট মোডের মাধ্যমে করা লেনদেনের তথ্য এখন ট্যাক্স আধিকারিকদের কাছে রয়েছে। এটিকে ভিত্তি করেই নোটিস পাঠানো হচ্ছে। আধিকারিকদের বক্তব্য, যদি কোনো ব্যবসায়ীর অ্যাকাউন্টে ক্রমাগত বড় অঙ্কের টাকা ট্রান্সফার হয়, তাহলে ধরে নেওয়া হয় যে সেটি নিয়মিত ব্যবসায়িক কার্যকলাপের অংশ।
ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য জটিল পরিস্থিতি
অনেক ছোট ব্যবসায়ী এই বিষয়ে দ্বিধায় ভুগছেন যে প্রতিটি ইউপিআই পেমেন্ট কি ব্যবসায়িক লেনদেন হিসেবে গণ্য হবে। অনেক দোকানদার এমনও আছেন, যারা তাদের দোকানের পাশাপাশি ঘরের কাজের জন্যও একই ইউপিআই নম্বর ব্যবহার করেন। ফলে মোট ট্রানজেকশনের পরিমাণ আসলে টার্নওভারের থেকে অনেক বেশি দেখায়।
এখন দেখার বিষয় সরকার এবং ট্যাক্স বিভাগ এই পরিস্থিতিকে কীভাবে সামাল দেয়, যাতে সৎ ছোট ব্যবসায়ীদের উপর অপ্রয়োজনীয় বোঝা না পড়ে এবং ট্যাক্স সিস্টেম স্বচ্ছ থাকে।