ইউপিআই পেমেন্টের জোয়ারে হঠাৎ খরা! কেন পিছিয়ে আসছেন ছোট ব্যবসায়ীরা?
এক সময় ইউপিআই-ই ছিল বিক্রির মূল ভরসা। কিন্তু সম্প্রতি বেঙ্গালুরু, মাইশুরুর মতো কর্নাটকের শহরগুলোয় এক অভূতপূর্ব চিত্র ধরা পড়ছে। স্ট্রিট ফুড বিক্রেতা, ছোট দোকানদার, পিজি মালিক এমনকি অটোচালকরাও ক্রেতার ফোনে স্ক্যান না করে বলছেন— ‘‘নগদ দিন!’’ এর পেছনে বড় কারণ জিএসটি-র নোটিসের ভয়। একাধিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর কাছে সম্প্রতি এসেছে জিএসটি নোটিস, যেখানে কর বাবদ চওড়া অঙ্ক দাবি করা হয়েছে। যার ফলে তৈরি হয়েছে বিভ্রান্তি— ইউপিআই মানেই কি জিএসটির ফাঁদ?
‘‘ইউপিআই বন্ধ করলেই রেহাই?’’ শঙ্কায় বিভ্রান্ত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা
দেশের বহু ছোট ব্যবসায়ী এখনও জিএসটি-তে রেজিস্টার্ড নন। এরই মধ্যে কেউ কেউ হঠাৎ করেই পেয়ে গিয়েছেন জিএসটি নোটিস। বহু সময়, এই নোটিসে বলা হয়েছে ডিজিটাল লেনদেনের তথ্যের ভিত্তিতে ব্যবসার আকার বড় মনে করা হচ্ছে, যার ফলে করের আওতায় পড়তে হচ্ছে। এই অবস্থায় ব্যবসায়ীদের মনে তৈরি হয়েছে ভয়— ইউপিআই পেমেন্ট নিলেই বুঝি কর অফিসের নজরে পড়ে যাব! ফলে তাঁরা খোলাখুলি বলছেন, ‘নগদ দিন, না হলে কেনাকাটাই হবে না।’
এক হোটেল মালিকের কণ্ঠে আতঙ্কের সুর— ‘‘বিক্রি কমুক, করের ঝামেলা চাই না!’’
মাইশুরুর এক হোটেল মালিক বলছেন, ইউপিআই সহজ ছিল ঠিকই। কিন্তু কর অফিস যখন প্রতিটি লেনদেনের হিসেব চায়, তখন আমাদের মতো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর পক্ষে তা রাখা কঠিন। জিএসটি রেজিস্ট্রেশনে ঢুকলে কাগজপত্রের ঝক্কি বাড়বে, অ্যাকাউন্টিংয়ের খরচও। তার চেয়ে কিছু ক্রেতা কম হোক, নগদেই কাজ চলুক! একই সুর শোনা গিয়েছে বেঙ্গালুরুর এক খাবার বিক্রেতার মুখেও, পাশের দোকানিকে জিএসটি নোটিস পাঠানো হয়েছে। এখন আমি ইউপিআই নিলে আমাকেও পড়তে হবে ফাঁদে।
কর দফতরের আশ্বাস: শুধু ইউপিআই নয়, সব লেনদেনই জিএসটি-র আওতায় পড়ে
এই পরিস্থিতি দেখে উদ্যোগ নিয়েছে কর্নাটক কমার্শিয়াল ট্যাক্স ডিপার্টমেন্ট। অ্যাডিশনাল কমিশনার একটি সরকারি বিবৃতিতে বলেন, শুধু ইউপিআই ব্যবহার করলেই জিএসটি নোটিস আসে না। কোনও ব্যবসায়িক কার্যক্রমের ক্ষেত্রে পেমেন্টের মাধ্যম যেমনই হোক— ডিজিটাল হোক বা নগদ, কর নির্ধারিত হয় ব্যবসার প্রকৃতি ও বার্ষিক টার্নওভারের ভিত্তিতে। তিনি আরও জানান, এই বিভ্রান্তি দূর করতে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ইউপিআই বন্ধ করা বাস্তবসম্মত সমাধান নয়, বরং অর্থনীতির ডিজিটাল অগ্রগতির পথে বাধা।
এখন আশ্বাস বনাম বাস্তবতা— কোন দিকে যাবে পরিস্থিতি?
কর দফতরের বিবৃতি আপাতত আশার আলো দেখালেও বাস্তবে কতটা কাজে দেবে তা সময় বলবে। কারণ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের শঙ্কা শুধু আইনি নোটিস নয়, বরং তার সঙ্গে জুড়ে রয়েছে রোজগারে ধাক্কা, ভয় আর অনিশ্চয়তা। সরকার চাইছে ডিজিটাল লেনদেনের প্রসার, আর ব্যবসায়ীরা চাইছেন শান্তিতে ব্যবসা চালাতে। দুইয়ের মাঝে দাঁড়িয়ে ইউপিআই পেমেন্ট আজ প্রশ্নের মুখে। পরবর্তী পদক্ষেপ কী হয়— এখন সেই দিকেই তাকিয়ে দেশজুড়ে লক্ষ লক্ষ ছোট ব্যবসায়ী।