ফতেহপুর শহরের চক এলাকায় অবস্থিত ৪০০ বছরের পুরনো ঐতিহাসিক হনুমান মন্দিরের জমি নিয়ে বিবাদ ক্রমশ বাড়ছে। রবিবার এই বিবাদ সেই সময় হিংসাত্মক সংঘর্ষে রূপ নেয়, যখন দুই পক্ষ মুখোমুখি হয় এবং একে অপরের বিরুদ্ধে দখলের অভিযোগ তোলে। পরিস্থিতি তখন আরও খারাপ হয়ে যায় যখন উভয় দলের মধ্যে তীব্র বাদানুবাদ শুরু হয়। বিবাদ বাড়তে দেখে মহিলারাও এগিয়ে আসেন এবং হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে नारेबाजी শুরু করেন।
মন্দির চত্বরে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা দেখে ঘটনাস্থলে চরম বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। খবর পাওয়া মাত্র পুলিশ এবং প্রশাসনিক আধিকারিকরা বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। আধিকারিকরা উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলে বিবাদ শান্ত করার চেষ্টা করেন। এই সময় মন্দির চত্বরে বিপুল সংখ্যক লোক একত্রিত হওয়ায় কিছুক্ষণের জন্য এলাকার যান চলাচলও ব্যাহত হয়।
জমির মালিকানা নিয়ে উভয় পক্ষের দাবি
হনুমান মন্দিরের জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দখলের বিবাদ চলছে। প্রথম পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন রাম প্রকাশ গুপ্তা। তিনি দাবি করেছেন যে, মন্দিরের জমির সঙ্গে জড়িত সমস্ত নথি তাঁর কাছে রয়েছে। তিনি আরও বলেন যে, মন্দির কমিটি দু’বছর আগেই ভেঙে দেওয়া হয়েছে এবং তারপর থেকে কোনও নতুন কমিটি গঠিত হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে, কোনও ধরনের নির্মাণ কাজ বেআইনি।
অন্যদিকে, দ্বিতীয় পক্ষ থেকে পপ্পন রাস্তোগী নিজেকে মন্দির কমিটির সক্রিয় সদস্য দাবি করে জানান যে, তিনি মন্দির চত্বরে একটি ভান্ডার কক্ষ এবং মার্কেট তৈরি করতে চান, যাতে মন্দিরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা যায়। তাঁর মতে, এর জন্য তিনি সর্বসাধারণের কাছ থেকে চাঁদা সংগ্রহ করছেন। এই পক্ষের সমর্থনকারী মনোজ গান্ধী বলেন যে, এই জমি গান্ধী বাবার পরিবারের এবং তাঁরা সমাজের সহযোগিতায় মন্দিরে উন্নয়নমূলক কাজ করতে চান।
বর্তমানে প্রশাসন জমি সংক্রান্ত নথিপত্রের তদন্ত শুরু করেছে। আধিকারিকরা উভয় পক্ষের দাবির আইনি দিক খতিয়ে দেখছেন, যাতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া যায়।
প্রশাসন পূজা-অর্চনা এবং নির্মাণ কাজ নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে
পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনা করে জেলা প্রশাসন সম্পূর্ণ সতর্কতার সঙ্গে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে। যেহেতু উভয় পক্ষই সামাজিকভাবে প্রভাবশালী, তাই আধিকারিকরা আপাতত এই বিষয়ে খোলামেলা মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকছেন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ডিএসপি এবং এসডিএম উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলে উত্তেজনা কমানোর চেষ্টা করেছেন।
প্রশাসনের তরফে মন্দিরে পূজা-অর্চনা পুনরায় চালু করা এবং প্রস্তাবিত নির্মাণ কাজের বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানোর জন্য বিভিন্ন স্তরে আলোচনা শুরু হয়েছে। আধিকারিকদের চেষ্টা হল উভয় পক্ষের মধ্যে কোনও ধরনের সমঝোতা হোক, যাতে বিবাদ শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করা যায় এবং ধর্মীয় কার্যকলাপ নির্বিঘ্নে পুনরায় শুরু করা যায়।
স্থানীয়দের মধ্যে অসন্তোষ
ফতেহপুরের চক এলাকায় অবস্থিত এই হনুমান মন্দিরটি প্রায় ৪০০ বছর পুরনো এবং স্থানীয় মানুষের গভীর আস্থা এর সঙ্গে জড়িত। এই মন্দিরটি শুধু ধর্মীয় কার্যকলাপের কেন্দ্র নয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেও এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
মন্দিরের জমি নিয়ে আগেও বিবাদ ও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ঘটনা ঘটেছে, তবে এবারের বিবাদ বেশ তীব্র রূপ নিয়েছে। পুরো শহরে এখন এই বিষয় নিয়ে আলোচনা চলছে। মানুষজন প্রশাসনের কাছে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ এবং মন্দিরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার দাবি জানাচ্ছেন।