হরিয়ালী তীজের ব্রত: এই কাজগুলি করলে ব্রত পণ্ড হতে পারে!

হরিয়ালী তীজের ব্রত: এই কাজগুলি করলে ব্রত পণ্ড হতে পারে!

প্রতি বছর শ্রাবণ মাসে শুক্লপক্ষের তৃতীয়া তিথিতে হরিয়ালী তীজের উৎসব খুব ধুমধাম করে পালিত হয়। এই দিনটি বিশেষ করে বিবাহিত মহিলাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। মহিলারা এই দিনে উপবাস রেখে মা পার্বতী ও ভগবান শিবের পূজা করেন। কথিত আছে, এই দিনে উপবাস রাখলে বিবাহিত জীবনে সুখ, সমৃদ্ধি ও অখণ্ড সৌভাগ্য লাভ হয়। অবিবাহিত মেয়েরাও এই দিনে ভালো বর পাওয়ার কামনায় এই ব্রত রাখেন।

যদিও ধর্মীয় গ্রন্থ এবং লোক ঐতিহ্যে হরিয়ালী তীজের সাথে সম্পর্কিত কিছু নিয়ম ও রীতিনীতি বলা হয়েছে, যা পালন না করলে ব্রতের সম্পূর্ণ ফল পাওয়া যায় না। তাই জরুরি যে ব্রতধারী মহিলারা এই নিয়মগুলি জানুন এবং ভুল করেও তা ভাঙবেন না।

ব্রতে জল পান করাও ব্রতকে নিষ্ফল করতে পারে

হরিয়ালী তীজের ব্রত নির্জলা ব্রত হয়। এর মানে হল এই দিনে না তো খাবার খাওয়া হয়, না জল পান করা হয়। যদি কোনও মহিলা ব্রতের সংকল্প নেওয়ার পরে জল পান করেন, তবে এটিকে ব্রত ভঙ্গ বলে মনে করা হয়। এমন পরিস্থিতিতে দেবী পার্বতীর কৃপা লাভ হয় না এবং ব্রতের ফল শেষ হয়ে যায়।

ব্রতের দিনে কালো রং থেকে परहेज করুন

হরিয়ালী তীজের দিনে মহিলারা সাজেন এবং সুন্দর পোশাক পরেন। কিন্তু এই দিনে কালো রঙের কাপড় বা গহনা পরা অত্যন্ত অশুভ বলে মনে করা হয়। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে, কালো রং নেতিবাচক শক্তির প্রতীক। এই দিনে সবুজ, হলুদ বা লাল রঙের পোশাক পরা শুভ বলে মনে করা হয়, কারণ এই রংগুলি সৌভাগ্য, সমৃদ্ধি এবং শুভ কাজের প্রতীক।

তামসিক খাবার ঘরেও প্রবেশ না করে

হরিয়ালী তীজের দিনে কেবল ব্রতকারীকেই নয়, ঘরের সমস্ত সদস্যদেরও সাত্ত্বিক খাবার খাওয়া উচিত। মাংস-মদ, রসুন-পেঁয়াজ জাতীয় তামসিক পদার্থ থেকে দূরে থাকা উচিত। বিশ্বাস করা হয় যে ঘরে এই ধরনের জিনিস সেবন করলেও ব্রতকারী ব্রতের সম্পূর্ণ ফল পান না।

পূজার সামগ্রী বাপের বাড়ি থেকে আনুন

এই দিনে শ্বশুরবাড়ি থেকে আসা পূজার সামগ্রী, পোশাক বা সাজসজ্জা ব্যবহার করা নিষিদ্ধ বলে মনে করা হয়। ঐতিহ্য অনুযায়ী, এই দিনে বাপের বাড়ি থেকে পাওয়া কাপড়, টিপ, চুড়ি, সিঁদুর, মেহেন্দি ইত্যাদি ব্যবহার করা উচিত। বলা হয় যে এতে মা পার্বতী প্রসন্ন হন এবং অখণ্ড সৌভাগ্যের আশীর্বাদ দেন।

মঙ্গলবার ব্রতের জিনিস কিনবেন না

হরিয়ালী তীজের ব্রত করার আগে মহিলারা পূজার জিনিস, সাজসজ্জার জিনিস এবং কাপড় ইত্যাদি কেনেন। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে যে মঙ্গলবার এই কেনাকাটা করা উচিত নয়। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এটি অশুভ বলে মনে করা হয়েছে। সম্ভব হলে ব্রতের এক বা দুই দিন আগে সমস্ত সামগ্রী সংগ্রহ করুন।

ব্রতের পারণ মুহুর্ত দেখেই করুন

প্রত্যেক ব্রতের সমাপ্তি অর্থাৎ পারণ একটি নির্দিষ্ট সময় ও পদ্ধতিতে করা হয়। হরিয়ালী তীজের ব্রতের পারণও বিশেষ মুহূর্তে করা জরুরি। যদি পারণ ভুল সময়ে বা তাড়াহুড়ো করে করা হয়, তবে ব্রতের সম্পূর্ণ ফল পাওয়া যায় না। তাই মুহুর্তের তথ্য আগে থেকে জেনে নিন এবং সেই অনুযায়ী পারণ করুন।

বাড়িতে ঝগড়া বা তিক্ত কথা নয়

হরিয়ালী তীজের দিনে পরিবেশ সম্পূর্ণ শান্ত এবং শুভ হওয়া উচিত। ব্রতকারীকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে যে তিনি যেন কারও সাথে ঝগড়া না করেন, খারাপ কথা না বলেন এবং নেতিবাচক আচরণ থেকে বাঁচেন। বলা হয় যে এই দিনে যদি কারও সাথে কটু কথা বলা হয় বা বিবাদ হয়, তবে দেবী পার্বতী অসন্তুষ্ট হন।

সাজসজ্জার সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করুন

হরিয়ালী তীজে মহিলারা বিশেষ সাজসজ্জা করেন, তবে এই দিনে কিছু বিশেষ বিষয় মনে রাখাও জরুরি। যেমন স্নান না করে সাজসজ্জা করা উচিত নয়। এছাড়াও পুরনো বা ছেঁড়া কাপড় পরা উচিত নয়। সাজসজ্জা করার সময় ধৈর্য ও পবিত্রতার দিকে খেয়াল রাখতে হবে।

ধর্মীয় গ্রন্থ পাঠ অবশ্যই করুন

হরিয়ালী তীজের দিনে ব্রত করা মহিলাদের এই দিনে দেবী পার্বতীর কথা, শিব পুরাণ বা তীজ ব্রতকথা অবশ্যই পাঠ করা উচিত। গল্প শোনা বা পড়লে ব্রতের পূর্ণতা আসে এবং ধর্মীয় লাভ হয়।

Leave a comment