EXPLAINED: সংশোধিত ওয়াকফ আইনের কোথায় স্থগিতাদেশ? কোথায় হস্তক্ষেপ করল না সুপ্রিম কোর্ট?

EXPLAINED: সংশোধিত ওয়াকফ আইনের কোথায় স্থগিতাদেশ? কোথায় হস্তক্ষেপ করল না সুপ্রিম কোর্ট?

কলকাতা: দীর্ঘ শুনানি শেষে ওয়াকফ সংশোধনী আইনের বৈধতা নিয়ে সোমবার সুপ্রিম কোর্টের গুরুত্বপূর্ণ রায় প্রকাশিত হল। আইনের একাধিক ধারা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও আদালত জানিয়ে দিল, সম্পূর্ণ আইন স্থগিত নয়, আংশিক কিছু ধারায় আপাতত রক্ষা থাকছে।

ওয়াকফ কী, সংক্ষেপে ইতিহাস

ওয়াকফ হলো ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের জন্য সামাজিক, ধর্মীয় ও দাতব্য কাজের উদ্দেশ্যে স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির দান বা সংরক্ষণ। ১৯১৩ সালে প্রথম ওয়াকফ বোর্ড গঠিত হয়। এরপর ১৯২৩ সালের মুসলমান ওয়াকফ আইন এবং ১৯৫৪ সালে স্বাধীনতার পরে সমন্বিত ওয়াকফ আইন আনা হয়। বর্তমানে দেশে ৮.৭২ লক্ষ নথিভুক্ত ওয়াকফ সম্পত্তি রয়েছে, যার আয়তন প্রায় ৩৮ লক্ষ একর জমি।

কোন ধারায় স্থগিতাদেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট

ওয়াকফ সম্পত্তি নির্ধারণে সরকার–নিযুক্ত অ-মুসলিম অফিসারের ভূমিকা আপাতত স্থগিত।

ওয়াকফ সম্পত্তি দানের ক্ষেত্রে অন্তত পাঁচ বছর ইসলাম ধর্ম পালনের শর্ত কার্যকর নয়।

জেলা প্রশাসকের হাতে জমি ওয়াকফ নাকি সরকারি, সেই নির্ধারণের ক্ষমতা আপাতত স্থগিত।

কোন ধারায় স্থগিত হয়নি হস্তক্ষেপ

কেন্দ্রীয় ওয়াকফ কাউন্সিলে অন্তত ৪ জন এবং রাজ্যস্তরে ৩ জন অ-মুসলিম সদস্য রাখার বিধান বহাল।

মহিলাদের ওয়াকফ বোর্ডে অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব কার্যকর।

সমস্ত ওয়াকফ সম্পত্তির নথি ডিজিটাল পোর্টালে নথিভুক্ত করার নিয়ম বহাল থাকবে।

বিতর্ক ও মামলার পটভূমি

ওয়াকফ সংশোধনী বিল সংসদে পাশ হতেই তীব্র প্রতিবাদে পথে নামেন মুসলিম সমাজের একাংশ। এআইএমআইএম সাংসদ আসাদউদ্দিন ওয়াইসি, তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র, আরজেডি সাংসদ মনোজ ঝা-সহ একাধিক নেতা আইনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যান। মামলাকারীদের দাবি ছিল—এতে সংখ্যালঘুদের অধিকার খর্ব হচ্ছে এবং সম্পত্তি কেড়ে নেওয়ার সুযোগ তৈরি হবে।

আদালতে কী যুক্তি শোনা গেল

আইনজীবী কপিল সিব্বল যুক্তি দেন—“কোনও ধর্মের উত্তরাধিকার বা সম্পত্তি হস্তান্তর সংক্রান্ত নিয়ম নির্ধারণ করার ক্ষমতা সরকারের নেই।” অন্যদিকে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা জানান, “আইনে বলা হয়নি যে মন্দির বা দোকান ভেঙে দেওয়া হবে, বরং জমি-সম্পত্তি যাচাই না হওয়া পর্যন্ত ওয়াকফ সুবিধা বন্ধ থাকবে।

সংশোধিত ওয়াকফ আইন নিয়ে তীব্র বিতর্কের মধ্যে সোমবার সুপ্রিম কোর্টের বড় রায়। সম্পূর্ণ আইনে স্থগিতাদেশ দিতে অস্বীকার করলেও কিছু গুরুত্বপূর্ণ ধারায় অন্তর্বর্তী সুরক্ষা দিয়েছে শীর্ষ আদালত। বিশেষত ওয়াকফ সম্পত্তি নির্ধারণে সরকারি অফিসার নিয়োগ ও পাঁচ বছরের ইসলাম ধর্ম পালনের শর্তে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে। তবে অ-মুসলিম সদস্য অন্তর্ভুক্তি ও মহিলাদের অংশগ্রহণের বিধান কার্যকর থাকছে।

Leave a comment