হার্ট অ্যাটাকের ৫টি নীরব সংকেত: জীবন বাঁচানোর উপায়

হার্ট অ্যাটাকের ৫টি নীরব সংকেত: জীবন বাঁচানোর উপায়

 আমরা সবাই কোনো না কোনো সময়ে হার্ট অ্যাটাক বা হৃদরোগের কথা শুনেছি, কিন্তু প্রায়শই এর লক্ষণগুলোকে গুরুত্ব দিই না। বেশিরভাগ মানুষ মনে করে হার্ট অ্যাটাক মানে বুকে তীব্র ব্যথা এবং বাম দিকে চাপ অনুভব করা। কিন্তু আপনি কি জানেন, হার্ট অ্যাটাকের আগে শরীর আরও অনেক সংকেত দেয়, যা সময়মতো চিহ্নিত করে জীবন বাঁচানো যেতে পারে? হার্ট অ্যাটাক কেবল এক মুহূর্তে আসে না, এটি ধীরে ধীরে শুরু হয় এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে সংকেত পাঠায়। 

১. হাত, কনুই বা কাঁধে অস্বাভাবিক ব্যথা

হার্ট অ্যাটাকের আগে বাম হাতে ব্যথা একটি সাধারণ লক্ষণ হিসেবে ধরা হয়, তবে এই ব্যথা কেবল বাম হাতেই সীমাবদ্ধ থাকে না। এই ব্যথা কনুই, কাঁধ এমনকি ডান হাত এবং পিঠ পর্যন্ত ছড়িয়ে যেতে পারে। ব্যথা প্রায়শই ধীরে ধীরে শুরু হয় এবং ধীরে ধীরে তীব্র হতে পারে।

এই ধরনের ব্যথা হয় যখন হৃদপিণ্ডের পেশী পর্যাপ্ত রক্ত সরবরাহ পায় না।

কীভাবে চিনবেন?

  • কোনো কারণ ছাড়াই হাতে ভারীভাব বা জ্বালা
  • বিশ্রাম নেওয়ার পরেও ব্যথা বজায় থাকা
  • ব্যথার সঙ্গে দুর্বলতা বা ঝিনঝিন করা

করণীয়

  • যদি ব্যথা কয়েক মিনিটের বেশি সময় ধরে থাকে এবং আপনি শ্বাসকষ্ট বা বুকে চাপ অনুভব করেন, তাহলে অবিলম্বে জরুরি চিকিৎসা নিন।

২. চোয়াল বা ঘাড়ে রহস্যজনক ব্যথা

হঠাৎ চোয়ালে ব্যথা বা চাপ অনুভব করাও একটি সতর্কতামূলক সংকেত হতে পারে, বিশেষ করে যখন এই ব্যথা বুকের দিকে বা ঘাড়, পিঠ এবং কাঁধ পর্যন্ত ছড়িয়ে যায়। প্রায়শই মানুষ এটিকে দাঁত বা মাড়ির সমস্যা ভেবে এড়িয়ে যায়, যা বিপজ্জনক হতে পারে।

বিশেষ করে মহিলাদের মধ্যে এই লক্ষণটি বেশি দেখা যায় কারণ তাদের মধ্যে প্রচলিত লক্ষণগুলো (যেমন বুকে তীব্র ব্যথা) কম দেখা যায়।

সতর্ক থাকুন যখন

  • চোয়ালের ব্যথা কোনো দাঁতের সমস্যা ছাড়াই হয়
  • সঙ্গে ক্লান্তি, ঘাম বা শ্বাসকষ্ট হয়
  • ব্যথা চাপযুক্ত মনে হয় এবং বারবার হয়

৩. কোনো কারণ ছাড়াই ঘাম হওয়া (ঠান্ডা ঘাম)

ঘাম হওয়া একটি স্বাভাবিক শারীরিক প্রক্রিয়া, তবে যখন এটি গরম বা পরিশ্রম ছাড়াই হয় এবং বিশেষ করে ঠান্ডা ঘামের আকারে আসে, তখন এটি একটি বড় বিপদ হতে পারে। এটি শরীরের "ফাইট অর ফ্লাইট" প্রতিক্রিয়া, যখন হৃদপিণ্ডের উপর চাপ পড়ে।

লক্ষণ

  • হঠাৎ কপালে বা ঘাড়ের পিছনে ঠান্ডা ঘাম
  • শরীর কাঁপার মতো অনুভব করা
  • ঘামের সঙ্গে অস্থিরতা বা অস্বস্তি

করণীয়

  • এই ধরনের ঘামকে উপেক্ষা করবেন না, বিশেষ করে যদি আপনি ডায়াবেটিক, উচ্চ রক্তচাপ বা হৃদরোগের রোগী হন।

৪. অতিরিক্ত ক্লান্তি বা দুর্বলতা

যদি আপনি দৈনন্দিন ছোটখাটো কাজ—যেমন কাপড় পরা, সামান্য হাঁটা বা বিছানা থেকে ওঠা—করতে ক্লান্ত বোধ করেন, তবে এটি হৃদরোগের লক্ষণ হতে পারে। হৃদপিণ্ড যদি সঠিকভাবে রক্ত ​​পাম্প করতে না পারে তবে শরীরে অক্সিজেনের অভাব হয়, যার কারণে ক্লান্তি আসে।

লক্ষণ

  • কাজ না করেও ক্লান্ত বোধ করা
  • সবসময় ঘুম ঘুম ভাব
  • সিঁড়ি ভাঙতে হাঁপানো বা মাথা ঘোরা

কখন সতর্ক হবেন?

  • যদি ক্লান্তি হঠাৎ বেড়ে যায় এবং অন্যান্য লক্ষণও দেখা যায়, তাহলে দেরি না করে ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করুন।

৫. শ্বাস নিতে অসুবিধা (ডিস্পনিয়া)

শ্বাসকষ্ট হওয়া বা ভারী অনুভব করা, বিশেষ করে বিশ্রাম অবস্থায়, হার্ট অ্যাটাকের একটি গুরুতর লক্ষণ। এটি নির্দেশ করে যে হৃদপিণ্ডে পর্যাপ্ত অক্সিজেন পৌঁছাচ্ছে না এবং শরীর এটি পূরণ করার জন্য আরও বেশি চেষ্টা করছে।

কীভাবে চিনবেন?

  • দৌড়াদৌড়ি না করেও হাঁপানো
  • কথা বলার সময় ঘন ঘন শ্বাস নেওয়া
  • শুয়ে থাকলে দমবন্ধ লাগা বা অস্বস্তি অনুভব করা

বিপজ্জনক হয় যখন

  • এই লক্ষণ বুকের আঁটসাঁট ভাব, ঘাম এবং মাথা ঘোরার সঙ্গে দেখা যায়।

হার্ট অ্যাটাক থেকে বাঁচতে কী করবেন?

  1. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান, বিশেষ করে ৪০ বছর বয়সের পরে।
  2. ধূমপান ও মদ্যপান থেকে দূরে থাকুন।
  3. সুষম খাদ্য এবং নিয়মিত ব্যায়াম আপনার দৈনন্দিন জীবনে যোগ করুন।
  4. মানসিক চাপ কমাতে যোগা ও মেডিটেশন করুন।
  5. পরিবারের হৃদরোগের ইতিহাসকে উপেক্ষা করবেন না, বংশগত কারণও দায়ী থাকে।

হৃদপিণ্ড আমাদের জীবনের কেন্দ্র এবং যখন এতে কোনো সমস্যা হয়, তখন শরীর আমাদের বারবার সংকেত দেয়। উপরে উল্লিখিত লক্ষণগুলো যদি বারবার দেখা যায়, তবে এটিকে সামান্য মনে করে এড়িয়ে যাবেন না। সময় থাকতে সতর্ক হলে, শুধু জীবন বাঁচানোই যায় না, জীবনের মানও উন্নত করা যায়। মনে রাখবেন, প্রতিটি স্পন্দন মূল্যবান—এটি চিহ্নিত করুন, শুনুন এবং সুরক্ষিত রাখুন।

Leave a comment