প্রধানমন্ত্রী মোদী ঘানায় পৌঁছেছেন। সংসদকে সম্বোধন করেছেন, ভারতীয় সম্প্রদায়ের সঙ্গে মিলিত হয়েছেন। ভারত-ঘানার মধ্যে ৪টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এরপর তিনি ত্রিনিদাদ, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল এবং নামিবিয়া যাবেন।
PM Modi Historic Ghana Visit: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আফ্রিকার দেশ ঘানার ঐতিহাসিক সফরে গিয়েছেন। গত তিন দশকে কোনো ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর এটি প্রথম সফর। আক্রায় পৌঁছানোর পর ঘানার রাষ্ট্রপতি জন ড্রামানি মাহামা তাঁকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান। এই সফরের সময় ভারত ও ঘানার মধ্যে চারটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মোদী ঘানার সংসদকে সম্বোধন করবেন এবং সেখানে উপস্থিত ভারতীয় সম্প্রদায়ের সঙ্গে কথা বলবেন। এছাড়াও, তিনি ঘানার ঐতিহাসিক স্থান ব্ল্যাক স্টার স্কোয়ারও পরিদর্শন করবেন।
৩০ বছর পর কোনো ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রথম সফর
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বুধবার ঘানার রাজধানী আক্রায় পৌঁছান। ঘানার মাটিতে কোনো ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর এটি গত তিন দশকের মধ্যে প্রথম সফর। বিমানবন্দরে ঘানার রাষ্ট্রপতি জন ড্রামানি মাহামা তাঁকে আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনা জানান এবং গার্ড অফ অনার প্রদান করেন। এই অভ্যর্থনা ঐতিহ্যবাহী ঘানীয় রীতিতে অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে সাংস্কৃতিক নৃত্য ও সঙ্গীতের পরিবেশনা ছিল।
এই উপলক্ষ্যে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল এই সফরকে ঐতিহাসিক আখ্যা দিয়ে বলেন, এটি ভারত ও ঘানার মধ্যে ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের স্মৃতিচারণ করে। এটি উভয় দেশের মধ্যে স্থায়ী সম্পর্কের প্রতীক।
ঘানার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে প্রতিনিধি পর্যায়ের বৈঠক
প্রধানমন্ত্রী মোদী আক্রার জুবিলি হাউসে ঘানার রাষ্ট্রপতি জন মাহামার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করেন। এই বৈঠকে প্রতিনিধি পর্যায়ে আলোচনা হয়, যেখানে বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা, ডিজিটাল অবকাঠামো, কৃষি এবং স্বাস্থ্য-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলিতে সহযোগিতা বাড়ানোর উপর জোর দেওয়া হয়।
উভয় দেশের নেতারা এই ক্ষেত্রগুলিতে ভবিষ্যতের সম্ভাবনা এবং বিনিয়োগের সুযোগ নিয়ে আলোচনা করেন। এছাড়াও, উভয় পক্ষ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রগতি পর্যালোচনা করে।
চারটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তিতে স্বাক্ষর
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং রাষ্ট্রপতি মাহামার উপস্থিতিতে ভারত ও ঘানার মধ্যে চারটি গুরুত্বপূর্ণ সমঝোতা স্মারক (MoU) স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তিগুলি উভয় দেশের সম্পর্ককে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
- সাংস্কৃতিক বিনিময় কর্মসূচি (CEP) চুক্তি – এর উদ্দেশ্য হল শিল্পকলা, সঙ্গীত, নৃত্য, সাহিত্য এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধি করা।
- ভারতীয় স্ট্যান্ডার্ড ব্যুরো (BIS) এবং ঘানা স্ট্যান্ডার্ড অথরিটি (GSA)-এর মধ্যে সমঝোতা স্মারক – এই চুক্তি মানকীকরণ, সার্টিফিকেশন এবং কনফর্মিটি অ্যাসেসমেন্টের ক্ষেত্রে সহযোগিতা আরও শক্তিশালী করবে।
- ঐতিহ্যবাহী ও বিকল্প চিকিৎসা বিষয়ক সমঝোতা স্মারক – আয়ুর্বেদ এবং ঘানার ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসা পদ্ধতির মধ্যে শিক্ষা, প্রশিক্ষণ এবং গবেষণা নিয়ে সহযোগিতা করার লক্ষ্য।
- জয়েন্ট কমিশন মিটিং বিষয়ক সমঝোতা স্মারক – এটি উচ্চ-পর্যায়ের আলোচনাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেবে এবং নিয়মিত দ্বিপাক্ষিক পর্যালোচনার ব্যবস্থা করবে।
ভারতীয় সম্প্রদায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ
আক্রায় পৌঁছানোর পর প্রধানমন্ত্রী মোদীকে ভারতীয় প্রবাসীরা স্বাগত জানান। ঘানায় প্রায় ১৫,০০০ ভারতীয় বংশোদ্ভূত মানুষ বসবাস করেন, যাঁরা হোটেলে পৌঁছানোর পর মোদীকে উষ্ণ অভিনন্দন জানান। মোদীর এই কর্মসূচি ভারতীয় সম্প্রদায়ের সঙ্গে একটি আন্তরিক আলোচনার মাধ্যম ছিল।
এই সময় প্রধানমন্ত্রী মোদী ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাঁদের ভারতের উন্নয়ন ও উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলি সম্পর্কে অবগত করেন। তিনি প্রবাসী ভারতীয়দের ভারত ও ঘানার মধ্যে সম্পর্কের সেতু হিসেবে বর্ণনা করেন।
সংসদকে সম্বোধন, ব্ল্যাক স্টার স্কোয়ার পরিদর্শন
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘানার সংসদকেও সম্বোধন করবেন। এই ভাষণ ভারত ও আফ্রিকার সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। এই সময় তিনি গণতন্ত্র, উন্নয়ন এবং বিশ্বব্যাপী সহযোগিতা সহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি নিয়ে তাঁর মতামত তুলে ধরবেন।
এছাড়াও, প্রধানমন্ত্রী মোদী আক্রার ঐতিহাসিক স্থান ব্ল্যাক স্টার স্কোয়ারও পরিদর্শন করবেন। এই স্থানটি ঘানার স্বাধীনতা এবং তার সংগ্রামের প্রতীক হিসেবে পরিচিত। ভারত ও ঘানা উভয় দেশই ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে তাদের সংগ্রামের কারণে একটি বিশেষ ইতিহাস ভাগ করে নেয়।
পরবর্তী সফরের সূচি
ঘানা সফরের পর প্রধানমন্ত্রী মোদীর কূটনৈতিক সফরের পরবর্তী গন্তব্য হবে ত্রিনিদাদ ও টোবাগো। তিনি ৩ ও ৪ জুলাই এই দেশে থাকবেন, যেখানে ভারতীয় বংশোদ্ভূত মানুষের একটি বড় অংশ বসবাস করে। এই সফরটি বিশেষ, কারণ এই বছর সেখানে ভারতীয়দের আগমন এর ১৮০তম বার্ষিকী উদযাপন করা হচ্ছে। দেশটির প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যা ভারতীয় বংশোদ্ভূত এবং সেখানকার রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীও ভারত থেকে তাঁদের পূর্বপুরুষদের সম্পর্ক রয়েছে বলে মনে করেন।
এরপর, প্রধানমন্ত্রী মোদী ৪ ও ৫ জুলাই আর্জেন্টিনায় থাকবেন। তিনি রাষ্ট্রপতি জেভিয়ার মেইলি-র সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন এবং শক্তি, বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি (Renewable Energy)-র ক্ষেত্রে সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করবেন।
৫ থেকে ৮ জুলাই পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী মোদী ব্রাজিলে থাকবেন। সেখানে তিনি ১৭তম ব্রিকস (BRICS) সম্মেলনে যোগ দেবেন, যা রিও ডি জেনেইরোর অনুষ্ঠিত হবে। এই সময় তিনি ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতি সহ আরও অনেক দেশের নেতাদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন।
সফরের শেষ পর্যায়ে ৮ ও ৯ জুলাই নামিবিয়ায় থাকবেন। প্রধানমন্ত্রী মোদী নামিবিয়া সফরকারী প্রথম ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী হবেন। এখানে তিনি রাষ্ট্রপতি নান্দিয়া-এনডাইটওয়া-র সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন এবং খনিজ ও জ্বালানি অংশীদারিত্ব নিয়ে গভীর আলোচনা করবেন।
ভারত-আফ্রিকা সম্পর্ক নতুন মাত্রা পাবে
প্রধানমন্ত্রী মোদীর এই সফর কেবল ভারত-ঘানা সম্পর্ককে শক্তিশালী করবে না, বরং ভারত-আফ্রিকা সহযোগিতা কেও একটি নতুন দিশা দেবে। আফ্রিকার দেশগুলির সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক জোরদার করা ভারতের বিদেশ নীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই সফরের সময় হওয়া চুক্তি, আলোচনা এবং মানুষের সঙ্গে সংযোগ সেই দিকেই একটি বড় পদক্ষেপ।