দেশে দ্রুত বাড়ছে যুবকদের হৃদরোগ: কারণ, লক্ষণ ও প্রতিরোধের উপায়

দেশে দ্রুত বাড়ছে যুবকদের হৃদরোগ: কারণ, লক্ষণ ও প্রতিরোধের উপায়

দেশে হৃদরোগ দ্রুত বাড়ছে এবং এখন প্রতি চারজন রোগীর মধ্যে একজন ৪০ বছরের কম বয়সী। চিকিৎসকদের মতে, এর প্রধান কারণ হলো অস্বাস্থ্যকর জীবনধারা, মানসিক চাপ, জাঙ্ক ফুড, স্থুলতা এবং ঘুমের অভাব। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, ৩০ বছর বয়সের পর প্রত্যেকেরই বার্ষিক হার্ট চেকআপ করানো উচিত।

হার্ট অ্যাটাক: ভারতে হৃদরোগের ঝুঁকি দ্রুত যুবকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে। চিকিৎসকদের মতে, এখন প্রতি চারজন হার্ট অ্যাটাক রোগীর মধ্যে একজনের বয়স ৪০ বছরের কম। শেলবি হাসপাতাল, জব্বলপুরের কার্ডিওলজিস্ট ডঃ আর. এস. শর্মা বলেছেন যে, পরিবর্তিত জীবনধারা, মানসিক চাপ, জাঙ্ক ফুড, স্থুলতা এবং ঘুমের অভাব এই প্রবণতার প্রধান কারণ। ৮০% এর বেশি রোগী দেরিতে হাসপাতালে পৌঁছান, যার ফলে জীবনের ঝুঁকি বেড়ে যায়। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন যে, প্রতিদিনের ব্যায়াম, সুষম খাবার এবং নিয়মিত হার্ট চেকআপের মাধ্যমে এই ঝুঁকি অনেকটাই কমানো যেতে পারে।

হৃদরোগের ঘটনা কেন বাড়ছে?

গত এক দশকে ভারতে হৃদরোগের ঘটনা কয়েকগুণ বেড়েছে। কার্ডিওলজিস্টরা জানান, এর প্রধান কারণ হল জীবনযাত্রায় বড় ধরনের পরিবর্তন। আজকাল যুবকদের মধ্যে শারীরিক কার্যকলাপ কমে গেছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা কম্পিউটার বা মোবাইলে কাজ করার এবং বসে থাকার অভ্যাস শরীরের সক্রিয়তা কমিয়ে দিয়েছে। এর পাশাপাশি, জাঙ্ক ফুড এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়ার ক্রমবর্ধমান অভ্যাস হৃদয়ের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক প্রমাণিত হচ্ছে।

মানসিক চাপ এবং ঘুমের অভাবও একটি বড় কারণ হিসাবে উঠে এসেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, যারা প্রতিদিন ৬ ঘণ্টার কম ঘুমান তাদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি দ্বিগুণ বেড়ে যায়। কাজের চাপ, লক্ষ্য পূরণের উদ্বেগ এবং ব্যক্তিগত জীবনের ব্যস্ততা যুবকদের হৃদয়ের উপর বিশাল বোঝা তৈরি করেছে।

চিকিৎসকদের সতর্কবাণী: প্রাথমিক লক্ষণগুলিকে উপেক্ষা করবেন না

শেলবি হাসপাতাল, জব্বলপুরের কনসালটেন্ট কার্ডিওলজিস্ট প্রফেসর ডঃ আর. এস. শর্মা বলেছেন যে, তার কাছে আসা প্রতি চারজন রোগীর মধ্যে একজন ৪০ বছরের কম বয়সী। তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় সমস্যা হল মানুষ হার্ট অ্যাটাকের প্রাথমিক লক্ষণগুলিকে গুরুত্ব সহকারে নেয় না। বুকে ব্যথা, ক্লান্তি, শ্বাসকষ্ট, বা হাতে ঝিনঝিন করার মতো লক্ষণগুলিকে মানুষ প্রায়শই সাধারণ ভেবে উপেক্ষা করে।

ডঃ শর্মা জানান যে, প্রায় ৮০ শতাংশ রোগী দেরিতে হাসপাতালে পৌঁছান। এমন পরিস্থিতিতে হৃদয়ের যে ক্ষতি হয়ে গেছে, তা আর পুনরুদ্ধার করা যায় না। তিনি বলেন, যুবকদের মধ্যে সচেতনতার অভাবই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

স্থুলতা, মানসিক চাপ এবং ডায়াবেটিস বড় কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে

বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্রমবর্ধমান স্থুলতা এবং অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস হৃদরোগের মূল কারণ। ভারতে ডায়াবেটিস এবং রক্তচাপের ঘটনা দ্রুত বাড়ছে, যা হৃদয়কে দুর্বল করে তোলে। পূর্বে উচ্চ রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরলের মতো সমস্যা বয়স্কদের মধ্যে দেখা যেত, কিন্তু এখন ২৫–৩৫ বছর বয়সী যুবকরাও এই রোগগুলিতে ভুগছে।

ডঃ শর্মা জানান যে, যুবকদের মধ্যে জাঙ্ক ফুড, ধূমপান এবং মদ্যপানের অভ্যাস দ্রুত বেড়েছে। এগুলি সবই হৃদপিণ্ডের ধমনীগুলিকে দুর্বল করে দেয়। এর পাশাপাশি, মানসিক চাপ এবং ঘুমের অভাব হৃদস্পন্দনের উপর খারাপ প্রভাব ফেলে।

ফিট দেখা মানেই সবসময় সুস্থ থাকা নয়

চিকিৎসকরা বলছেন যে, আজকাল অনেক যুবক বাইরে থেকে ফিট দেখালেও, অভ্যন্তরীণভাবে তাদের শরীর মানসিক চাপ এবং ভারসাম্যহীন জীবনযাত্রার সাথে সংগ্রাম করছে। জিমে যাওয়া বা পেশী তৈরি করার অর্থ এই নয় যে হৃদয় সুস্থ আছে। হৃদয়ের স্বাস্থ্য সুষম খাদ্য, পর্যাপ্ত ঘুম এবং নিয়মিত চেকআপের সাথে সম্পর্কিত।

যুবকদের জন্য ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জ

দেশে ক্রমবর্ধমান হার্ট অ্যাটাকের ঘটনা দেখে এটা স্পষ্ট যে, এই রোগ এখন শুধু বয়স্কদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। চিকিৎসকরা মনে করেন যে, ৩০ বছর বয়স পার হওয়ার সাথে সাথে প্রত্যেকেরই বছরে একবার হার্ট চেকআপ করানো উচিত। এই পদক্ষেপ সময়মতো রোগ শনাক্ত করতে সাহায্য করতে পারে।

Leave a comment