বর্ষার প্রভাব এখন দেশের অধিকাংশ অংশে দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। আবহাওয়া দপ্তর ৫ই জুলাই থেকে আগামী কয়েক দিনের জন্য সতর্কতা জারি করেছে, যেখানে ভারী বৃষ্টি, তীব্র ঝড় এবং বজ্রপাতের আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
আবহাওয়া: সারাদেশে বর্ষা গতি নিয়েছে এবং এর প্রভাবে এখন অনেক রাজ্যে ভারী বৃষ্টি, তীব্র ঝড় এবং বজ্রপাতের সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ভারতীয় আবহাওয়া বিজ্ঞান বিভাগ (IMD) ৫ই জুলাই ২০২৫ থেকে আগামী কয়েক দিন পর্যন্ত উত্তর প্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ড, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান এবং অন্যান্য রাজ্যগুলিতে ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করেছে। বিশেষ করে উত্তর প্রদেশ ও বিহারে বজ্রপাতের আশঙ্কা বিবেচনা করে জনগণকে সতর্ক থাকার জন্য আবেদন করা হয়েছে।
আবহাওয়া দপ্তর কৃষকদেরও পরামর্শ দিয়েছে যে তারা যেন এই সময়ে ক্ষেতে বা খোলা জায়গায় যাওয়া থেকে বিরত থাকেন, যাতে বজ্রপাত বা ঝড়-বৃষ্টির কারণে কোনো বড় দুর্ঘটনা না ঘটে।
উত্তর প্রদেশে কোথায় নামবে বৃষ্টি?
উত্তর প্রদেশে বর্ষা পুরোপুরি সক্রিয় হয়ে উঠেছে। আবহাওয়া দপ্তর অনুসারে আগামী ৯ই জুলাই পর্যন্ত রাজ্যের অনেক জেলায় মুষলধারে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে প্রয়াগরাজ, মির্জাপুর, সোনভদ্র, বারাণসী, চান্দৌলি এবং সন্ত রবিদাস নগরে আগামী কয়েক দিনে ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এছাড়াও বান্দা, চিত্রকূট, কৌশাম্বি, গাজিপুর, কুশীনগর, মহারাজগঞ্জ, সিদ্ধার্থনগর এবং আশেপাশের এলাকাগুলিতেও বজ্রবিদ্যুৎ সহ ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এই এলাকাগুলোতে বজ্রপাতেরও আশঙ্কা রয়েছে, তাই জনগণকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জাতীয় রাজধানী দিল্লি-তেও আবহাওয়ার পরিবর্তন হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে বৃষ্টির পর তাপমাত্রা কমে যায়, যা মানুষকে আর্দ্রতা থেকে মুক্তি দিয়েছে। আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, শনিবারও হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
বিহারের জেলাগুলিতে সতর্কতা
বিহারেও আগামী কয়েক দিন ভারী বৃষ্টিতে প্রভাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ৫ই জুলাই সহরসা, সুপৌল, মধ্যপুরা, ভোজপুর এবং বক্সার জেলাগুলিতে বর্ষাকালের বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাতেরও আশঙ্কা করা হচ্ছে। আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে যে মধ্য আসাম এবং মধ্যপ্রদেশের উপর একটি ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হওয়ার কারণে বিহারের অনেক এলাকায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
ঝাড়খণ্ডে তীব্র হাওয়ার সাথে বৃষ্টি
ঝাড়খণ্ডের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলিতেও ৫ই জুলাই ভারী বৃষ্টি এবং তীব্র হাওয়ার সতর্কতা রয়েছে। অনুমান করা হচ্ছে যে ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা বেগে বাতাস বইতে পারে, যা জনজীবনকে প্রভাবিত করতে পারে। পশ্চিম ভারতে আগামী সাত দিনের মধ্যে কোঙ্কন, গোয়া এবং মধ্য মহারাষ্ট্রের ঘাট অঞ্চলে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও সৌরাষ্ট্র এবং কচ্ছ-এও ৫ থেকে ৭ জুলাইয়ের মধ্যে ব্যাপক বৃষ্টির সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
আবহাওয়া দপ্তর সতর্ক করেছে যে দক্ষিণ কোঙ্কন এবং গোয়ার কিছু অংশে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে, যার ফলে নিচু এলাকাগুলোতে জল জমার পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
মধ্য ভারত: মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তিশগড়ে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস
মধ্যপ্রদেশ এবং ছত্তিশগড়ে ৫ থেকে ১০ জুলাইয়ের মধ্যে অনেক জায়গায় ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে ওড়িশা, বিদর্ভ এবং উপ-হিমালয়ীয় পশ্চিমবঙ্গেও ভারী বৃষ্টি ও ঝড়ের সতর্কতা দেওয়া হয়েছে। আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে যে ৮ থেকে ১০ জুলাই পর্যন্ত মধ্যপ্রদেশে কোথাও কোথাও অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে, যার ফলে কৃষকদের শস্যের ক্ষতির আশঙ্কা থাকবে।
উত্তর-পশ্চিম ভারত: হিমাচল, উত্তরাখণ্ড এবং রাজস্থানও সতর্কতায়
উত্তর-পশ্চিম ভারতে ৫ই জুলাই থেকে আগামী কয়েক দিন ভারী বৃষ্টি হতে পারে। হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, পূর্ব রাজস্থান, পাঞ্জাব ও হরিয়ানায় বিভিন্ন স্থানে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও জম্মু ও কাশ্মীর, চন্ডিগড় এবং পশ্চিম উত্তর প্রদেশেও বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টির সতর্কতা জারি করা হয়েছে। পার্বত্য অঞ্চলে ভূমিধস এবং নদী-নালাগুলির জলস্তর বৃদ্ধির সম্ভাবনা বিবেচনা করে স্থানীয় প্রশাসনকে সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে।
উত্তর-পূর্ব ভারতেও চলবে বৃষ্টির ধারা
উত্তর-পূর্ব ভারতেও আগামী সাত দিন অধিকাংশ স্থানে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি চলবে। বিশেষ করে আসাম, মেঘালয়, অরুণাচল প্রদেশ এবং ত্রিপুরায় বজ্রবিদ্যুৎ সহ ভারী বৃষ্টির ধারা অব্যাহত থাকবে। ৬ই জুলাই মেঘালয়ের কিছু এলাকায় অতি ভারী বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যার ফলে বন্যার পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
দক্ষিণ ভারতে ৫ই জুলাই তেলেঙ্গানার কিছু অংশে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও, কেরল, মাহে, কর্ণাটকেও ৫ থেকে ৯ জুলাইয়ের মধ্যে একটানা বৃষ্টি এবং ৪০-৫০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা বেগে তীব্র হাওয়ার সতর্কতা জারি করা হয়েছে। উপকূলীয় কর্ণাটক এবং অভ্যন্তরীণ কর্ণাটকেও আগামী কয়েক দিন মুষলধারে বৃষ্টি হতে পারে, যার ফলে গাছপালা ও বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।