রাজস্থানে বর্ষা ফের একবার তার দাপট দেখাতে শুরু করেছে। বুধবার কোটা, বুন্দি, বারান, প্রতাপগড়, চিতোরগড় এবং ঝালওয়াড় জেলাগুলিতে ভারী বৃষ্টির জন্য রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। আবহাওয়া দফতরের সতর্কবার্তার পরিপ্রেক্ষিতে জয়সলমের, বারমের ও বিকানের ব্যতীত রাজ্যের বাকি জেলাগুলিতে হলুদ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। একটানা ভারী বৃষ্টি ও বন্যার আশঙ্কায় সতর্কতা হিসেবে ১৮টি জেলার স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বৃষ্টির কারণে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত এবং রাজ্যজুড়ে প্রশাসন সতর্ক রয়েছে। অনেক জায়গায় রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে, বাজারে জল জমে গেছে এবং গ্রামগুলির যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
সোয়াই মাধোপুর ও বারানে সবচেয়ে বেশি প্রভাব
সোয়াই মাধোপুর ও বারান জেলা ভারী বৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। সোয়াই মাধোপুরে গত দু’দিন ধরে একটানা মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে, যার ফলে মধ্যপ্রদেশগামী জাতীয় সড়ক সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। শহরের অনেক এলাকায় তিন থেকে চার ফুট পর্যন্ত জল জমে গেছে, যার কারণে যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণভাবে বন্ধ এবং মানুষের বাইরে বেরোনোও কঠিন হয়ে পড়েছে।
বারান জেলার পরিস্থিতি আরও গুরুতর। এখানে গত তিন দিন ধরে একটানা বৃষ্টি হচ্ছে, যার ফলে শহরের পাশাপাশি গ্রামীণ এলাকাতেও বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। অনেক গ্রাম ও শহরের সঙ্গে জেলা সদরের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, রাস্তার উপর দিয়ে জল বইছে এবং অনেক বাজার জলমগ্ন হয়ে গেছে। এমতাবস্থায় জেলা প্রশাসন ২ আগস্ট পর্যন্ত স্কুলগুলিতে ছুটি ঘোষণা করেছে।
দোকানে জল ঢুকেছে
বারান শহরের প্রধান মোড় ও বাজারগুলিতে তিন ফুট পর্যন্ত জল জমে গেছে। নিচু এলাকার অনেক দোকানে জল ঢুকে যাওয়ায় ব্যবসায়ীদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। জল এতটাই জমেছে যে অনেক রাস্তায় পায়ে হেঁটে চলাও কঠিন হয়ে পড়েছে। নগর পরিষদের দল জল নিষ্কাশনের চেষ্টা করছে, কিন্তু একটানা বৃষ্টির কারণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না।
নদীগুলোর জল বিপদসীমার উপরে
বারান জেলার তিনটি প্রধান নদী—কালীসিন্ধ, পার্বতী ও পরবন—বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। জেলার ১৮টি ছোট-বড় বাঁধ, পুকুর ও নদীগুলোর জল বেড়ে যাওয়ায় অনেক এলাকায় জলমগ্ন পরিস্থিতি গুরুতর হয়ে উঠেছে। প্রবল স্রোতের কারণে অনেক জায়গায় সাঁকো ভেসে গেছে বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শাহবাদ অঞ্চলে এনএইচ-২৭ এর উপর দিয়ে তিন ফুট পর্যন্ত জল বইছে, যার ফলে হাইওয়ে বন্ধ হয়ে গেছে এবং দু’দিকে বহু গাড়ি আটকে পড়েছে।
গ্রামীণ এলাকায় বিদ্যুৎ সংকট
গ্রামীণ এলাকার পরিস্থিতি আরও খারাপ। মাঠ পুকুরে পরিণত হয়েছে এবং সমরানিয়ার বিদ্যুৎ গ্রিড স্টেশন জলের তলায় ডুবে যাওয়ায় আশেপাশের গ্রামগুলিতে দু’দিন ধরে বিদ্যুৎ নেই। কেলওয়াড়া ও আশেপাশের বসতিগুলোতে জল ঢুকে যাওয়ায় মানুষের খাদ্য সামগ্রী পর্যন্ত ভেসে গেছে। বহু পরিবার ক্ষতির শিকার হয়েছে এবং তারা নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে।
প্রশাসন পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছে
বারান জেলায় জেলা প্রশাসন পুরোপুরি সক্রিয়। কালেক্টর রোহিতাশ্ব সিং তোমরের নির্দেশে সমস্ত বিভাগকে সতর্ক করা হয়েছে। এডিএম শাহবাদ জবর সিং বিলোদা মামলি গ্রাম পরিদর্শন করে পরিস্থিতির খোঁজ নিয়েছেন। একইসঙ্গে মধ্যপ্রদেশের কলোরা পুকুর ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কায় সীমান্তবর্তী গ্রামগুলি খালি করা হচ্ছে।
প্রশাসন জনগণের কাছে আবেদন জানিয়েছে যে তারা যেন ভারী বৃষ্টির সময় অপ্রয়োজনে বাড়ির বাইরে না বেরোন এবং সতর্ক থাকেন। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য অস্থায়ী ত্রাণ শিবিরে থাকা, খাওয়ার ও প্রয়োজনীয় জিনিসের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। দুর্যোগ মোকাবিলা দল মোতায়েন রয়েছে এবং যেকোনো জরুরি অবস্থার মোকাবিলা করার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।