হিমাচল প্রদেশের সিরমৌরে ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাম, জরুরি উদ্ধারকাজ চলছে

হিমাচল প্রদেশের সিরমৌরে ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাম, জরুরি উদ্ধারকাজ চলছে

হিমাচল প্রদেশের সিরমৌর জেলায় প্রবল বৃষ্টিতে চক্কর গ্রামে ভূমিধস, পাহাড়ের ২০০ মিটার অংশ ভেসে যায়। পাঁচ বাড়ি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকলেও মানুষজন নিরাপদ আছে। আবহাওয়া দপ্তর কয়েকটি জেলায় হলুদ সতর্কতা জারি করেছে।

সিরমৌর: হিমাচল প্রদেশের সিরমৌর জেলায় অবিরাম বৃষ্টি জনজীবন বিপর্যস্ত করে তুলেছে। শনিবার নৌরার চক্কর গ্রামে ভূমিধসের এক বড় ঘটনা ঘটে, যেখানে প্রায় ২০০ মিটার দীর্ঘ পাহাড়ের অংশ ভেসে যায়। এই ঘটনায় গ্রামের বাসিন্দাদের রাতের ঘুম উড়ে গেছে।

তবে স্বস্তির বিষয় হল, পাহাড়ের উপর থাকা পাঁচজন লোক সময়মতো নিরাপদে বেরিয়ে আসতে পেরেছেন। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় অবস্থিত পাঁচটি বাড়ি এখনও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। স্থানীয় লোকেরা প্রশাসনের কাছে সাহায্যের জন্য অনবরত আবেদন করছেন।

জলচাপের কারণে ভূমিধস

ভূমিধসের কারণ আনুষ্ঠানিকভাবে স্পষ্ট হয়নি, তবে গ্রামবাসীদের মতে, মাটির নিচে থাকা জলের উৎস হঠাৎ ফেটে যায়। জলের চাপে মাটি দুর্বল হয়ে পড়ে, যার ফলে পুরো অংশটি ঢাল বেয়ে নিচে নেমে আসে।

লোকেরা জানিয়েছেন, গত কয়েকদিন ধরেই সেখানে মাটি ক্ষয় হতে দেখা যাচ্ছিল। শনিবার সকালে বৃষ্টি বাড়ার সাথে সাথেই এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর থেকে গ্রামে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে এবং লোকজন নিজেদের বাড়িতে থাকতেও ভয় পাচ্ছেন।

ভাইরাল ভিডিও উদ্বেগের কারণ

এই ঘটনার একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় দ্রুত ভাইরাল হচ্ছে। ভিডিওতে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে, কীভাবে ধ্বংসস্তূপ তীব্র স্রোতের সাথে নিচের দিকে যাচ্ছে। স্থানীয় লোকেরা ভিডিওতে সেখানে উপস্থিত লোকজনকে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার জন্য বারবার আবেদন করছেন।

ভিডিওটি সামনে আসার পর পুরো রাজ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। লোকেরা প্রশ্ন তুলছেন, আর কতদিন প্রতি বছর বর্ষাকালে এই ধরনের দুর্ঘটনার সাথে রাজ্যকে লড়াই করতে হবে।

আবহাওয়া দপ্তর সতর্কতা জারি করেছে

ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ হিমাচল প্রদেশের জন্য আগামী ছয় দিন মাঝারি বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে। বিশেষ করে উনা ও বিলাসপুর জেলায় ভারী বৃষ্টি এবং বজ্রপাতের ঝুঁকি জানিয়ে হলুদ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। অন্যদিকে, শিমলা, সোলান ও সিরমৌরের কিছু অংশেও ঝড় ও বজ্রপাতের আশঙ্কা করা হয়েছে।

আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, ৮ থেকে ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অনেক এলাকায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে। তবে কিছু স্থানে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এখন পর্যন্ত ২০ জুন থেকে রাজ্যে ১৩৩টি বড় ভূমিধস, ৯৫টি আকস্মিক বন্যা এবং ৪৫টি মেঘ ফাটার ঘটনা ঘটেছে, যার ফলে রাজ্যের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

হিমাচলে স্বাভাবিকের চেয়ে ৪৬% বেশি বৃষ্টি

তথ্য অনুযায়ী, এই বছর হিমাচল প্রদেশে মৌসুম স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি সক্রিয় ছিল। ১ জুন থেকে ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজ্যে গড়ে ৯৪৩.২ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে, যেখানে স্বাভাবিক সময়ে এই পরিমাণ ছিল ৬৪৮.১ মিলিমিটার। অর্থাৎ, এই বছর রাজ্যে ৪৬% বেশি বৃষ্টি হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, অতিরিক্ত বৃষ্টি এবং ভূমির অস্থিতিশীলতার কারণেই ভূমিধস এবং আকস্মিক বন্যার মতো ঘটনা বাড়ছে। এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে আগামী দিনে আরও গুরুতর সংকট দেখা দিতে পারে। প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলিতে উদ্ধারকারী দলগুলোকে সতর্ক অবস্থায় রেখেছে এবং জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে।

Leave a comment