বিবাহের প্রতিশ্রুতি দিয়ে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের অভিযুক্তের জামিন বহাল রাখল সুপ্রিম কোর্ট। বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের জন্য মহিলাকে ভর্ৎসনা এবং মামলার হুঁশিয়ারি।
নয়া দিল্লি: সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলায় মন্তব্য করেছে, যেখানে এক বিবাহিত মহিলা বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের অভিযোগে অভিযুক্তের আগাম জামিন বাতিলের আবেদন করেছিলেন। আদালত অভিযুক্তের জামিন বহাল রেখে মহিলাকে ভর্ৎসনা করে বলেছে যে বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক স্থাপন করা নিজেই একটি অপরাধ। আদালত সতর্ক করে দিয়েছে যে এমন কিছু আবার ঘটলে মহিলার বিরুদ্ধেও মামলা করা হতে পারে।
মহিলার আবেদনে সুপ্রিম কোর্টের প্রতিক্রিয়া
মহিলা সুপ্রিম কোর্টে একটি পিটিশন দাখিল করে দাবি করেন যে অভিযুক্ত পুরুষ তাকে বিয়ের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেয় এবং তার সঙ্গে নিয়মিত শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে। কিন্তু বিচারপতি এম এম সুন্দরেশ এবং বিচারপতি এন কোটিশ্বর সিং-এর বেঞ্চ এই যুক্তি খারিজ করে দেয়। আদালত বলে যে আবেদনকারী নিজেই বিবাহিত ছিলেন, তাঁর দুটি সন্তান রয়েছে এবং তিনি একজন সম্পূর্ণ পরিণত মহিলা। তাই, তিনি কোন সম্পর্কে জড়াচ্ছেন, তা বুঝতে সক্ষম ছিলেন।
আদালতের তীক্ষ্ণ প্রশ্ন এবং মন্তব্য
শুনানির সময় যখন মহিলার আইনজীবী বলেন যে দু'জনে হোটেলে গিয়ে সম্পর্ক করতেন, তখন আদালত তীক্ষ্ণ প্রশ্ন করে: "আপনি তাঁর কথায় বারবার হোটেলে কেন গিয়েছিলেন?" আদালত স্পষ্ট ভাষায় জানায় যে এটি একটি বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক ছিল এবং মহিলার নিজেরই বোঝা উচিত ছিল যে তিনি নিজেও অপরাধে জড়িত।
কীভাবে শুরু হয়েছিল সম্পর্ক?
মহিলা এবং অভিযুক্তের মধ্যে ২০১৬ সালে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে দেখা হয়। ধীরে ধীরে দুজনের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে এবং শারীরিক সম্পর্কও তৈরি হয়। মহিলার মতে, অভিযুক্তের ক্রমাগত চাপ এবং প্রতিশ্রুতির কারণে তিনি তাঁর স্বামীকে ডিভোর্স দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। পারিবারিক আদালত ২০২৪ সালের ৬ মার্চ ডিভোর্স মঞ্জুর করে।
বিয়েতে অস্বীকার এবং আইনি পদক্ষেপ
ডিভোর্সের পর মহিলা অভিযুক্তকে বিয়ের কথা বললে সে সরাসরি অস্বীকার করে। এরপরই মহিলা অভিযুক্তের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ এনে বিহার পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন। মহিলার অভিযোগ ছিল যে অভিযুক্ত বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বারবার তার শারীরিক শোষণ করেছে। পাটনা হাইকোর্ট মামলার শুনানিতে অভিযুক্তকে আগাম জামিন দেয়। সুপ্রিম কোর্টে এই জামিন বাতিলের আবেদন করা হয়েছিল।
সুপ্রিম কোর্টের আইনি ব্যাখ্যা
আদালত এই মামলায় দুটি বিষয়ে স্পষ্ট অবস্থান নিয়েছে। প্রথমত, অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে জোর করে সম্পর্ক স্থাপনের কোনো অভিযোগ নেই। দ্বিতীয়ত, মহিলা নিজে বিবাহিত ছিলেন এবং দীর্ঘদিন ধরে সম্মতিতেই এই সম্পর্কে ছিলেন। আদালত বলেছে যে এমন পরিস্থিতিতে এটিকে ধর্ষণের মামলা হিসেবে গণ্য করা যায় না, বিশেষ করে যখন মহিলা নিজেই বুদ্ধিমান এবং পরিণত।