আইসিসি-র বার্ষিক সভায় ক্রিকেটে আসছে বড় পরিবর্তন?

আইসিসি-র বার্ষিক সভায় ক্রিকেটে আসছে বড় পরিবর্তন?

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (ICC)-এর চার দিনের বার্ষিক সাধারণ সভা (AGM) আজ, বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে, যেখানে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

স্পোর্টস নিউজ: আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (ICC)-এর চার দিনের বার্ষিক সাধারণ সভা (AGM) আজ, বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে। এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে টেস্ট ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ নিয়ে বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে আলোচনায় থাকা দ্বি-স্তরীয় টেস্ট পদ্ধতি (Two-Tier Test System) নিয়ে আবারও গভীর আলোচনা হবে। এছাড়াও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ-এর বিস্তার এবং কিছু নতুন দেশকে আইসিসি-র সদস্যপদ দেওয়ার মতো বিষয়গুলিও এই বৈঠকের প্রধান আলোচ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

এই বৈঠকে আইসিসি-র নতুন চেয়ারম্যান জয় শাহ এবং সম্প্রতি নিযুক্ত হওয়া সিইও সঞ্জয় গুপ্তার নেতৃত্বে আলোচনা হবে। বৈঠকের আয়োজন এমন এক সময়ে হচ্ছে, যখন বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ (WTC)-এর নতুন চক্র (২০২৫-২০২৭) শুরু হয়েছে।

টেস্ট ক্রিকেটে আসতে পারে বড় পরিবর্তন

আইসিসি-র এই বৈঠকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হবে টেস্ট ক্রিকেটের দ্বি-স্তরীয় কাঠামো নিয়ে আলোচনা। এর সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে অর্থ বরাদ্দ (Revenue Distribution), প্রচার (Promotion) এবং অবনমন (Relegation)-এর সঙ্গে। অর্থাৎ, যে দলগুলি ভালো পারফর্ম করবে না, তাদের নিচের স্তরে পাঠানো হতে পারে, যেখানে ভালো পারফর্ম করা দলগুলি উপরের স্তরে খেলার সুযোগ পাবে।

এই মডেলের সমর্থন জানাচ্ছে ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ECB) এবং ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার (CA) মতো বড় বোর্ডগুলি। এই পদ্ধতিতে ছোট দেশ এবং নতুন টেস্ট খেলুড়ে দলগুলি আরও বেশি সুযোগ পেতে পারে। যদিও আইসিসি-র সূত্রানুসারে, বর্তমান বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ চক্রে কোনো পরিবর্তন করা হবে না। নতুন পদ্ধতি সম্ভবত ২০২৭ সালের পর থেকে কার্যকর হতে পারে।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আরও দল বাড়ানোর ভাবনা

আইসিসি এই AGM-এ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রসারণ নিয়েও আলোচনা করবে। এখন পর্যন্ত এই টুর্নামেন্টে ২০টি দল খেলেছে, তবে ভবিষ্যতে এটিকে ২৪টি দল পর্যন্ত বাড়ানোর বিষয়ে গভীর আলোচনা চলছে। যদিও এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সম্ভবত আগামী বছরের শুরুতে নেওয়া হতে পারে। ২০২৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পর্যন্ত ২০ দলের ফরম্যাট বজায় থাকবে। তবে ২০২৮ লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিকে ক্রিকেটের প্রত্যাবর্তন এবং ইতালির মতো নতুন দলগুলির যোগ্যতা অর্জন এই প্রসারণের প্রধান কারণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে।

ইতালির মতো দেশগুলিতে ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধিকে আইসিসি নতুন বাজারে পৌঁছানোর এবং ক্রিকেটকে একটি বিশ্বব্যাপী খেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ হিসেবে দেখছে। এই কারণেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে আরও বড় করার কৌশল তৈরি করা হচ্ছে।

ওয়ানডে বিশ্বকাপে পরিবর্তনের কোনো পরিকল্পনা নেই

যেখানে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট নিয়ে আইসিসি আগ্রাসী মনোভাব দেখাচ্ছে, সেখানে ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ নিয়ে এখনো পর্যন্ত কোনো প্রসারণের পরিকল্পনা নেই। বর্তমান কাঠামোতেই ওয়ানডে বিশ্বকাপের আয়োজন অব্যাহত থাকবে। এবারের AGM-এ কিছু নতুন সদস্য দেশকে ICC-এর পূর্ণ সদস্যপদ বা সহযোগী সদস্যপদ দেওয়া যায় কিনা, সেই বিষয়েও আলোচনা হতে পারে। 

আইসিসি বিশ্বব্যাপী ক্রিকেটের প্রসারের জন্য নতুন বাজার খুঁজছে। এই কারণে ইউরোপ, আমেরিকা এবং আফ্রিকার দেশগুলি থেকে কিছু নতুন নাম সদস্য তালিকাভুক্ত হতে পারে।

জয় শাহ এবং আইসিসি-র নতুন ভিশনের দিকে নজর

আইসিসি-র নতুন চেয়ারম্যান জয় শাহের নেতৃত্বে এটি প্রথম বড় AGM। শাহের কাছে ক্রিকেটকে অলিম্পিকে অন্তর্ভুক্ত করা ছাড়াও খেলাটিকে নতুন বাজারে পৌঁছে দেওয়ার বিশাল দায়িত্ব রয়েছে। জয় শাহের নেতৃত্বে আইসিসি দ্রুত বিশ্ব সংস্থাগুলির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। ডিসেম্বর ২০২৪-এ আইসিসি চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকে শাহ গ্রিসে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির (IOC) অধিবেশনে ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনো এবং প্রাক্তন আইওসি প্রধান থমাস বাখের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ক্রীড়া কূটনীতিতেও সক্রিয়তা দেখিয়েছেন।

টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের জনপ্রিয়তা ক্রিকেটকে সেই দেশগুলিতেও পরিচিতি এনে দিচ্ছে যেখানে আগে এর কোনো অস্তিত্ব ছিল না। আমেরিকা, ইউরোপ এবং আফ্রিকার নতুন বাজার আইসিসি-র জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এই কারণেই আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে ২৪টি দলে প্রসারিত করে আরও বেশি দেশকে যুক্ত করতে চাইছে। এর ফলে সম্প্রচার, স্পনসরশিপ এবং বিজ্ঞাপন থেকে আইসিসি-র আয় উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়তে পারে।

Leave a comment