আফ্রিকার তিন দেশে অনুষ্ঠিত হবে বিশ্বকাপ
২০২৭ সালে পুরুষদের ওয়ানডে বিশ্বকাপ আয়োজন করতে চলেছে আফ্রিকার তিন দেশ— দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ে ও নামিবিয়া। অক্টোবর-নভেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য এই বিশ্বকাপ হবে ৫০ ওভারের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় মঞ্চ। টুর্নামেন্টে মোট খেলা হবে ৫৪টি ম্যাচ। এর মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার মাঠেই হবে ৪৪টি ম্যাচ। বাকি ১০টি ম্যাচ ভাগ করে নেবে জিম্বাবুয়ে ও নামিবিয়া।
দক্ষিণ আফ্রিকার আটটি শহরে ম্যাচের আয়োজন
দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট বোর্ড ইতিমধ্যেই ভেন্যুর তালিকা প্রকাশ করেছে। দেশটির আটটি ঐতিহাসিক শহরে হবে ম্যাচগুলি। ভেন্যুগুলি হলো— জোহানেসবার্গ, প্রিটোরিয়া, কেপ টাউন, ডারবান, গকেবেরহা, ব্লোমফন্টেইন, ইস্ট লন্ডন এবং পার্ল। প্রতিটি মাঠেই ক্রিকেটপ্রেমীদের ঢল নামবে বলে আশা আয়োজকদের।
দায়িত্বে ক্রিকেট সাউথ আফ্রিকা
এবারের আয়োজনের দায়িত্ব থাকবে ক্রিকেট সাউথ আফ্রিকার উপর। ইতিমধ্যেই দেশটির ক্রিকেট বোর্ড একটি স্থানীয় আয়োজক কমিটি গঠন করেছে। নেতৃত্বে রয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক অর্থমন্ত্রী ট্রেভর ম্যানুয়েল। তাঁর তত্ত্বাবধানেই পরিচালিত হবে গোটা প্রস্তুতি ও আয়োজন।
সিএসএ-র লক্ষ্য বৈশ্বিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ইভেন্ট
ক্রিকেট সাউথ আফ্রিকার চেয়ারপার্সন পার্ল মাপোশে জানিয়েছেন— তাঁদের লক্ষ্য হলো এমন একটি বৈশ্বিক ও অনুপ্রেরণামূলক ইভেন্ট আয়োজন করা, যা দক্ষিণ আফ্রিকার বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি ও ঐক্যের প্রতিচ্ছবি হবে। তাঁর মতে, ক্রিকেট এমন এক খেলা যা মানুষকে একসাথে বাঁধতে পারে। ফলে এই বিশ্বকাপ শুধুমাত্র ক্রীড়া প্রতিযোগিতা নয়, দক্ষিণ আফ্রিকার আত্মপরিচয়েরও প্রতিফলন।
আফ্রিকান মহাদেশের জন্য গর্বের মুহূর্ত
আফ্রিকান মহাদেশে বিশ্বকাপের আয়োজন ক্রিকেটের জন্য এক বিরাট গর্বের বিষয়। দক্ষিণ আফ্রিকা ইতিমধ্যেই একাধিক আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট সফলভাবে আয়োজন করেছে। এবার নামিবিয়া ও জিম্বাবুয়ে যুক্ত হওয়ায় আফ্রিকার ক্রিকেট আরও শক্তিশালী পরিচিতি পাবে। তিন দেশের যৌথ আয়োজন আফ্রিকায় ক্রিকেট জনপ্রিয়তা আরও বাড়াবে বলে আশা করা হচ্ছে।
জিম্বাবুয়ে ও নামিবিয়ায় ঐতিহাসিক ম্যাচ আয়োজন
দক্ষিণ আফ্রিকার পাশাপাশি জিম্বাবুয়ে ও নামিবিয়াও সুযোগ পাচ্ছে বিশ্বকাপ আয়োজনের। দুই দেশ মিলিয়ে মোট ১০টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই আয়োজন জিম্বাবুয়ে ও নামিবিয়ার ক্রিকেটে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেবে। স্থানীয় ক্রিকেটারদের আত্মবিশ্বাস বাড়বে এবং ক্রিকেট অবকাঠামোর উন্নতি ঘটবে।
ইতিহাসে নতুন অধ্যায় রচনা করবে প্রোটিয়ারা
দক্ষিণ আফ্রিকা এর আগেও বেশ কয়েকবার বিশ্ব ক্রিকেটের গুরুত্বপূর্ণ আয়োজন করেছে। ২০০৩ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপ, ২০০৭ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, ২০০৯ সালে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি— সবই সফলভাবে আয়োজন করেছিল দেশটি। এছাড়া মহিলাদের ক্রিকেটেও দক্ষিণ আফ্রিকার সাফল্য উজ্জ্বল। ২০০৫ সালের মহিলাদের ওডিআই বিশ্বকাপ এবং ২০২৩ সালের মহিলাদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপও হয়েছিল এখানেই।
ক্রিকেট অর্থনীতিতে বড়সড় উল্লম্ফন আশা
এত বড় একটি ইভেন্ট দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট অর্থনীতিকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিদেশি দর্শক, টিভি সম্প্রচার, টিকিট বিক্রি, পর্যটন— সব মিলিয়ে কয়েকশো কোটি ডলার আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। স্থানীয় ব্যবসা ও আতিথেয়তা শিল্পেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
ভেন্যুতে জমজমাট লড়াইয়ের অপেক্ষায় ক্রিকেট বিশ্ব
জোহানেসবার্গের ওয়ান্ডারার্স থেকে কেপ টাউনের নিউল্যান্ডস— প্রতিটি মাঠেই ক্রিকেট ইতিহাসের সাক্ষী। এই মাঠগুলোতে বিশ্বের সেরা ক্রিকেটাররা নামবেন প্রতিযোগিতার আসরে। ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ— সবারই লক্ষ্য থাকবে ২০২৭ বিশ্বকাপ জেতা। ফলে প্রতিটি ম্যাচ হবে ভরপুর উত্তেজনায় ভরা।
বিশ্বকাপ ঘিরে প্রত্যাশার পারদ চড়ছে
এখন থেকেই ক্রিকেটপ্রেমীদের উন্মাদনা স্পষ্ট। ভারতের মতো ক্রিকেটপাগল দেশগুলিতে টিকিট ও টিভি সম্প্রচার নিয়েই শুরু হয়েছে চর্চা। প্রোটিয়া সমর্থকদের আশা, এইবার অন্তত তাঁদের হাতে উঠবে ওয়ানডে বিশ্বকাপের মুকুট। সব মিলিয়ে ২০২৭ সালের এই মহাযজ্ঞ বিশ্ব ক্রিকেটের ইতিহাসে হয়ে উঠবে এক স্মরণীয় অধ্যায়।