IIM ক্যালকাটা ধর্ষণকাণ্ড গোপন জবানবন্দি এখনও অধরা তদন্তে এখন ভরসা ডিজিটাল ক্লুতে

IIM ক্যালকাটা ধর্ষণকাণ্ড গোপন জবানবন্দি এখনও অধরা তদন্তে এখন ভরসা ডিজিটাল ক্লুতে

তদন্তে জট, নির্যাতিতার মৌনতা ঘিরে প্রশ্ন

আইআইএম ক্যালকাটার দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে থানায় এফআইআর হলেও, নির্যাতিতার গোপন জবানবন্দি এখনও মেলেনি। আইনজ্ঞদের মতে, আদালতে নির্যাতিতার ১৬৪ ধারার জবানবন্দি কোনও ধর্ষণ মামলায় অন্যতম প্রাথমিক ও শক্তিশালী প্রমাণ। অথচ, হরিদেবপুর থানায় ১২ জুলাই অভিযোগ দায়েরের পর থেকে নির্যাতিতা বারবার অনুপস্থিত থাকছেন আদালতে। এতে তদন্তে বাধা তৈরি হচ্ছে, এমনটাই মনে করছেন তদন্তকারীরা।

গোপন জবানবন্দির বদলে মোবাইলেই খোঁজ চলছে ক্লু–এর

নির্যাতিতার অনুপস্থিতিতে তদন্তের রাশ নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম (সিট)। তদন্তকারীরা মনে করছেন, অভিযুক্ত পরমানন্দ তোপ্পান্নাওয়ার এবং নির্যাতিতার মধ্যে কী সম্পর্ক ছিল, ঘটনার সময় কী ঘটেছিল, এমন অনেক প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে থাকতে পারে তাঁদের মোবাইলে থাকা তথ্যেই। এতদিন পাসওয়ার্ড না মেলায় ফোন খুলতে পারেননি সাইবার বিশেষজ্ঞরা। তবে অবশেষে সেই পাসওয়ার্ড মেলায় অভিযুক্তের ফোন থেকে এখন ক্লু খোঁজার কাজ পুরোদমে চলছে।

নির্যাতিতার অভিযোগ, ‘নেশাজাতীয় দ্রব্য মিশিয়ে ধর্ষণ’

ঘটনার সূত্রপাত ১২ জুলাই। অভিযোগ, সেদিন খাবার ও ঠান্ডা পানীয়র সঙ্গে মিশিয়ে কোনও নেশাজাতীয় দ্রব্য খাইয়ে নির্যাতিতাকে অচৈতন্য করে দেওয়া হয়। এরপর হস্টেলের ঘরে তাঁকে ধর্ষণ করা হয় বলে দাবি নির্যাতিতার। ঘটনার কিছু ঘণ্টা পরেই রাত ৮টা ৩৫ মিনিটে হরিদেবপুর থানায় লিখিত অভিযোগ জানান তিনি। তবে অভিযোগ দায়েরের পর থেকেই তিনি এবং তাঁর পরিবার তদন্তে কার্যত নিষ্ক্রিয়, যা পুলিশ ও আইনি মহলে একাধিক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

ডিজিটাল নথি কীভাবে হতে পারে মামলার মোড় ঘোরানোর উপাদান

সাইবার বিশেষজ্ঞ বিভাস চট্টোপাধ্যায়ের মতে, “বর্তমানে বহু মামলা ডিজিটাল প্রমাণের ভিত্তিতে এগিয়েছে এবং সাজাও হয়েছে। অভিযুক্ত ও নির্যাতিতার হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট, লোকেশন ডেটা, কল রেকর্ড, এমনকি ছবি বা ভিডিও—সবই হতে পারে গুরুত্বপূর্ণ ক্লু।” ফলে মোবাইল ফোন থেকে পাওয়া তথ্যই এখন হয়ে উঠতে পারে এই মামলার নির্ণায়ক অংশ।

তদন্তে অভিযুক্তের সহযোগিতা, জোরালো হচ্ছে প্রশ্ন

এই মুহূর্তে অভিযুক্ত ছাত্র জামিনে মুক্ত। তবুও তদন্ত থেমে নেই বলে জানিয়েছে লালবাজার। অভিযুক্তের আইনজীবী সুব্রত সর্দারের দাবি, “আমার মক্কেল পুলিশকে যথেষ্ট সহযোগিতা করছে। এমন গুরুতর অভিযোগের পরও নির্যাতিতা কেন তদন্তে সম্পূর্ণভাবে নীরব রয়েছেন, তা খতিয়ে দেখা উচিত।

ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে ফোন, চলছে মেডিকো-লিগ্যাল অ্যানালিসিস

অভিযুক্ত ছাত্রের মোবাইল পরীক্ষা চলছে সাইবার বিভাগে। পাশাপাশি তার মেডিকো–লিগ্যাল রিপোর্টও সংগ্রহ করা হয়েছে। তদন্তকারীদের দাবি, ইতিমধ্যেই হস্টেলের ঘর ও পারিপার্শ্বিক এলাকা থেকে ফরেন্সিক প্রমাণ সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। সব তথ্য বিচার করে চার্জশিটের প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।

তদন্তে যুক্ত হচ্ছেন একাধিক সাক্ষী, আদালতে উপস্থাপন হবে সম্পূর্ণ তথ্য

সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন সম্ভাব্য সাক্ষীর বক্তব্য নেওয়া হয়েছে। সেই তালিকাও নেহাত ছোট নয়। তদন্তকারী অফিসারদের মতে, এই সমস্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ আদালতে জমা দেওয়া হবে চার্জশিটে। তাঁদের দাবি, এই মামলা খুব সংবেদনশীল। আমরা তদন্তে কোনো ফাঁক রাখব না। নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যেই চার্জশিট জমা হবে।

Leave a comment