জম্মু-কাশ্মীরের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে, যখন প্রাক্তন মন্ত্রী এবং শিয়া নেতা ইমরান আনসারীর একটি মন্তব্য শিয়া এবং সুন্নি—উভয় সম্প্রদায়কে বিক্ষুব্ধ করে তোলে। তাঁর কথিত মন্তব্যের জেরে কাশ্মীরের প্রধান ইসলামী সংগঠন মুত্তাহিদা মজলিস-এ-উলেমা (এমএমইউ) তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে এবং আনসারীকে সমাজচ্যুত করার ঘোষণা করেছে।
এমএমইউ-এর কঠোর পদক্ষেপ
এমএমইউ তাদের বিবৃতিতে আনসারীর মন্তব্যকে ইসলামী ঐক্যের উপর সরাসরি আঘাত হিসেবে অভিহিত করেছে। সংগঠনটি বলছে, এটি কেবল ধর্মীয় মতপার্থক্য নয়, বরং গভীর ষড়যন্ত্র, যা কাশ্মীরের বহু পুরনো ধর্মীয় সৌহার্দ্য এবং সাম্প্রদায়িক ঐক্যকে ভাঙার চেষ্টা। সংগঠনটি আরও দাবি করেছে যে ইমরান আনসারীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
এমএমইউ-এর মতে, তারা প্রথমে আশা করেছিল যে আনসারী তাঁর মন্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করবেন এবং ক্ষমা চাইবেন, কিন্তু তার বদলে তিনি ইসলামের পূজনীয় সাহাবা—নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর সঙ্গীদের—বিরুদ্ধে অপমানজনক ভাষা ব্যবহার করেছেন। এই ঘটনার পর শুধু সুন্নি সম্প্রদায় নয়, শিয়া ধর্মগুরুরাও আনসারীর থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছেন।
সংগঠনটি সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, যতক্ষণ না ইমরান আনসারী প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইছেন এবং তাঁর মন্তব্য প্রত্যাহার করছেন, ততক্ষণ তাঁর সামাজিক बहिष्कार চলবে। এই সময়ে তাঁকে কোনো ধর্মীয় মঞ্চ, সভা বা অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হবে না এবং কোনো ধরনের সমর্থনও দেওয়া হবে না।
ভাইরাল ভিডিওর উপর সাফাই
বিবাদ বেড়ে যাওয়ায় ইমরান আনসারী সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি বিবৃতি দিয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। তিনি বলেছেন যে ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে, তাতে তাঁর কথাগুলো বিকৃত করে উপস্থাপন করা হয়েছে এবং ভুল প্রসঙ্গে প্রচার করা হচ্ছে। আনসারী স্পষ্ট করেছেন যে তিনি কখনোই নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর সাহাবাদের প্রতি অপমানজনক মন্তব্য করেননি এবং তাঁর উপর আনা অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
আনসারী আরও বলেছেন যে তিনি আয়াতুল্লাহ সিস্তানি এবং আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেনেই-এর সেই ফতোয়াগুলির সম্পূর্ণ সমর্থন করেন, যা আহল-আল-সুন্নাহ-এর মর্যাদা বজায় রাখে এবং তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের অপমানজনক কথা বলা থেকে বিরত রাখে। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, এটি কেবল কোনো কৌশল নয়, বরং তাঁর ধর্মীয় ও তাত্ত্বিক প্রতিশ্রুতির অংশ।
সবশেষে, আনসারী বলেন, ‘আমার উদ্দেশ্য কারও অনুভূতিতে আঘাত করা ছিল না। আমি আমার ধর্ম ও ইসলামের ধারণা সম্পর্কে সম্পূর্ণভাবে স্পষ্ট। যদি কারও মনে আমার কথায় কষ্ট লেগে থাকে, তবে আমি এ বিষয়ে আত্ম-অনুসন্ধান করব।’
সোশ্যাল মিডিয়ায় #BoycottImranAnsari ট্রেন্ডিং
এই পুরো বিতর্কের মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়াতেও মানুষের ক্ষোভ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। #BoycottImranAnsari হ্যাশট্যাগটি টুইটার এবং অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে ট্রেন্ড করছে। মানুষ আনসারীর মন্তব্যের সমালোচনা করে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছে।
সবমিলিয়ে, এই ঘটনা এখন কেবল ধর্মীয় বিতর্কের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, বরং কাশ্মীরের সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতিকেও প্রভাবিত করছে বলে মনে হচ্ছে। সকলের দৃষ্টি এখন এই দিকে যে ইমরান আনসারী এই সংকট থেকে কীভাবে মুক্তি পান এবং তিনি সংগঠনের দাবি অনুযায়ী ক্ষমা চান কিনা।