দেশজুড়ে মৌসুমী বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি, জারি রেড অ্যালার্ট

দেশজুড়ে মৌসুমী বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি, জারি রেড অ্যালার্ট

ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে এই সপ্তাহেও মৌসুমী বৃষ্টিতে ব্যাপক তাণ্ডব চলেছে। জম্মু ও কাশ্মীর, পাঞ্জাব, হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, আসাম, তেলেঙ্গানা, ওড়িশা, মহারাষ্ট্র এবং মধ্যপ্রদেশ সহ বিভিন্ন রাজ্যে বন্যা ও ভূমিধসের কারণে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।

নতুন দিল্লি: দেশের বিভিন্ন অংশে বৃষ্টি कहर बरपा रही है। পাঞ্জাব, আসাম এবং গুয়াহাটির অনেক এলাকায় বন্যার কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত। ছত্তিশগড়ে ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে, যেখানে তেলেঙ্গানা ও ওড়িশায় ৭-৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আবহাওয়া বিভাগের পূর্বাভাস অনুযায়ী, এই সপ্তাহেও পরিস্থিতির উন্নতির সম্ভাবনা কম। এদিকে, দুর্যোগ ত্রাণ কার্যক্রমে জম্মুতে আটকে পড়া লোকদের উদ্ধারের জন্য রেলওয়ের পক্ষ থেকে বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

জম্মু ও কাশ্মীর: রেকর্ড বৃষ্টি

জম্মু ও কাশ্মীর গত ২৪ ঘন্টায় ইতিহাসে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে। জম্মুতে ৩৮০ মিমি এবং কাটরায় ২৮৪ মিমি বৃষ্টি হয়েছে, যার ফলে রেল ও সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। হাজার হাজার যাত্রী ও তীর্থযাত্রী আটকে পড়েছেন। উদ্ধারকার্যের জন্য রেলওয়ে বিশেষ अनारক্ষিত ট্রেন চালাচ্ছে। যদিও বৃষ্টি কিছুটা কমায় ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যক্রমে গতি এসেছে।

মণিমহেশ যাত্রায় যাওয়া পুণ্যার্থীদের জন্য এই বৃষ্টি অত্যন্ত বিপজ্জনক প্রমাণিত হয়েছে। ২৪ থেকে ২৭শে আগস্ট পর্যন্ত সাতজন যাত্রীর মৃত্যু হয়েছে, নয়জন নিখোঁজ এবং আটজন আহত বলে জানা গেছে। প্রায় ৮,০০০ তীর্থযাত্রী পথে আটকে পড়েছিলেন, যাদের মধ্যে ৩,৪৫৭ জনকে নিরাপদে উদ্ধার করা হয়েছে।

পাঞ্জাব: আট জেলায় বন্যার তাণ্ডব

পাঞ্জাবের আটটি জেলা – পাঠানকোট, গুরুদাসপুর, ফাজিলকা, কাপুরথালা, তারনতারন, ফিরোজপুর, হোশিয়ারপুর এবং অমৃতসর – গত চার দিন ধরে ভয়াবহ বন্যার কবলে রয়েছে। সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী এবং বিএসএফ বৃহৎ পরিসরে ত্রাণ ও উদ্ধার কার্য চালাচ্ছে। গুরুদাসপুরে সেনাবাহিনী চিতা হেলিকপ্টারের সাহায্যে বন্যা কবলিত গ্রাম থেকে লোকজনকে উদ্ধার করেছে।

ছত্তিশগড়ের বাস্তার বিভাগে বন্যার কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এ পর্যন্ত আটজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। প্রশাসন ক্রমাগত ত্রাণ ও উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে। গ্রামগুলিতে জল ঢুকে যাওয়ায় মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

মহারাষ্ট্র: হাজার হাজার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে

তেলেঙ্গানা ও ওড়িশায় ভারী বৃষ্টি জনজীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছে। উভয় রাজ্যে এ পর্যন্ত সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। তেলেঙ্গানার রাজান্না সিরসিলা জেলায় সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার 'অপার মানায়ের প্রকল্প'-এর কাছে আটকে পড়া অনেক লোককে বাঁচিয়েছে। হাকিমপেট থেকেও এয়ারফোর্সের হেলিকপ্টারগুলি ক্রমাগত উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে।

মহারাষ্ট্রের মারাঠওয়াড়া, নান্দেদ ও লাতুর জেলায় ভারী বৃষ্টিতে নদীগুলি ফুলেফেঁপে উঠেছে। নান্দেদে ১১৫ মিমি এবং লাতুরে ৬৫ মিমি-এর বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ২,২০০ জনেরও বেশি লোককে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। প্রশাসন বন্যা কবলিত এলাকায় ত্রাণ শিবির স্থাপন করেছে। মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়িনীতে শিপ্রা নদীর জলস্তর বৃদ্ধি পাওয়ায় রামঘাট মন্দির চত্বর জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। প্রশাসন ঘাটগুলিতে অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করেছে এবং মানুষকে নদীর ধারে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।

ভূমিধস ও বন্যায় জনজীবন বিপর্যস্ত

হিমাচল প্রদেশের কাংড়া জেলার বড়া বেঙ্গল গ্রামে রাভি নদীর ভয়াবহ বন্যায় বেশ কয়েকটি সরকারি ভবন ভেসে গেছে। এর মধ্যে স্কুল, পঞ্চায়েত ভবন, চিকিৎসালয় এবং খাদ্য ভাণ্ডার অন্তর্ভুক্ত। দুটি সেতু ভেঙে যাওয়ায় গ্রামটির সঙ্গে রাজ্যের বাকি অংশের যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। অন্যদিকে, চণ্ডীগড়-মানালি জাতীয় সড়ক ভূমিধসের কারণে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কুল্লু জেলায় বিয়াস নদীর প্রবল স্রোতে রাস্তার একটি বড় অংশ ভেসে গেছে। উত্তরাখণ্ডেও আবহাওয়া বিভাগ বেশ কয়েকটি জেলায় 'রেড অ্যালার্ট' জারি করেছে।

আসামের গুয়াহাটি সহ বেশ কয়েকটি অংশে বন্যার প্রভাব গুরুতর। আবাসিক এলাকায় জল ঢুকে যাওয়ায় মানুষ ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। রাজ্য প্রশাসন ত্রাণ শিবির স্থাপন করেছে এবং নৌকার মাধ্যমে আটকে পড়া লোকদের নিরাপদে উদ্ধার করা হচ্ছে।

Leave a comment