ফিলিপাইনের রাষ্ট্রপতি ফার্দিনান্ড মার্কোস ভারত সফরে এসেছেন। ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্রের প্রথম চালান ম্যানিলাতে পৌঁছেছে। প্রতিরক্ষা এবং সমুদ্র সুরক্ষা সহযোগিতা বৃদ্ধি নিয়ে ভারত ও ফিলিপাইনের মধ্যে একাধিক চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
New Delhi: ফিলিপাইনের রাষ্ট্রপতি ফার্ডিনান্ড আর. মার্কোস জুনিয়র তার প্রথম সরকারি সফরে ভারতে এসেছেন। এই পাঁচ দিনের রাষ্ট্রীয় সফর ভারত ও ফিলিপাইনের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও মজবুত করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। রাষ্ট্রপতি মার্কোস জুনিয়রের সাথে তার স্ত্রী, ক্যাবিনেট মন্ত্রী, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বাণিজ্য প্রতিনিধিদের একটি উচ্চ-পর্যায়ের দলও ভারতে এসেছে।
প্রতিরক্ষা এবং কৌশলগত অংশীদারিত্ব নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা
রাষ্ট্রপতি মার্কোসের এই সফর এমন এক সময়ে হচ্ছে যখন দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৭৫তম বার্ষিকী পালিত হচ্ছে। এই সফরের दौरान প্রতিরক্ষা সহযোগিতাকে নতুন দিশা দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং রাষ্ট্রপতি মার্কোসের মধ্যে ৫ আগস্ট প্রস্তাবিত দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ভারত থেকে ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র কেনা প্রথম দেশ ফিলিপাইন
ফিলিপাইন ভারত থেকে ব্রহ্মোস সুপারসনিক ক্রুজ মিসাইল কেনা প্রথম দেশ। এপ্রিল ২০২৪-এ ব্রহ্মোস ব্যবস্থার প্রথম চালান ম্যানিলাতে পৌঁছেছে। এতে ফিলিপাইনের কৌশলগত শক্তি অনেক বেড়েছে। এখন খবর পাওয়া যাচ্ছে যে ফিলিপাইন ভারত থেকে অন্যান্য প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কেনারও পরিকল্পনা করছে। এটি ভারত ও ফিলিপাইনের মধ্যে প্রতিরক্ষা অংশীদারিত্বকে আরও গভীর করবে।
দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের আগ্রাসনের জবাব
দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের আগ্রাসনের মধ্যে ফিলিপাইন ভারতের সাথে কৌশলগত অংশীদারিত্বকে অগ্রাধিকার দিতে শুরু করেছে। এই সহযোগিতা শুধু দুই দেশের স্বার্থেই নয়, সমগ্র ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের স্থিতিশীলতার জন্যও জরুরি। ভারত এই অঞ্চলকে তার ইন্দো-প্যাসিফিক নীতি এবং 'ভিশন ওশান' কৌশলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ মনে করে।
ভারত-ফিলিপাইনের পুরোনো সাংস্কৃতিক এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক
ভারত ও ফিলিপাইনের কূটনৈতিক সম্পর্ক নভেম্বর ১৯৪৯ সালে স্থাপিত হয়েছিল। ১৯৯২ সালে ভারতের 'লুক ইস্ট পলিসি' এবং পরবর্তীতে 'অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি'র পর এই সম্পর্ক আরও গভীর হয়। তাগালগ ভাষায় সংস্কৃত মূলের অনেক শব্দ, লাগুনা কপারপ্লেট শিলালিপি এবং আগুসান তারা মূর্তি-র মতো প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ এই গভীর সাংস্কৃতিক যোগাযোগকে প্রমাণ করে।
ASEAN মঞ্চে বাড়তি সহযোগিতা
ভারত ও ফিলিপাইনের সম্পর্ক ASEAN মঞ্চগুলোতেও মজবুত হয়েছে। অক্টোবর ২০২৪-এ লাও পিডিআর-এ আয়োজিত ASEAN-India সামিট এবং ২০২৩ সালে জাকার্তায় অনুষ্ঠিত বৈঠকগুলি দুই দেশের মধ্যে সংলাপকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। এই সহযোগিতা এখন কৌশলগত এবং বাণিজ্যিক স্তরেও দৃশ্যমান।
ভারত ও ফিলিপাইন এই সপ্তাহে দক্ষিণ চীন সাগরে একটি যৌথ টহল অভিযান শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এটি এই ইঙ্গিত দেয় যে দুই দেশ চীনের দাদাগিরিকে চ্যালেঞ্জ জানাতে একসঙ্গে কাজ করতে চায়।
প্রতিরক্ষা উৎপাদন এবং প্রযুক্তিগত সহযোগিতা পাবে নতুন গতি
ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের মতে, রাষ্ট্রপতি মার্কোসের এই সফর কৌশলগত অংশীদারিত্বকে নতুন মাত্রা দেবে। এতে সমুদ্র সুরক্ষা, প্রতিরক্ষা উৎপাদন এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার উপর বিশেষ নজর দেওয়া হবে। রাষ্ট্রপতি মার্কোস নিউ দিল্লি সফরের পর ব্যাঙ্গালুরুও যাবেন। এই সফর ভারত ও ফিলিপাইনের মধ্যে প্রযুক্তিগত সহযোগিতা এবং স্টার্টআপ উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হবে।
ভারত কেবল প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম বিক্রি করছে না, ফিলিপাইনকে একটি রেয়াতি 'লাইন অফ ক্রেডিট'-ও দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। দুই দেশ সমুদ্র সুরক্ষা নিয়ে যৌথ প্রশিক্ষণ এবং মহড়া সম্প্রসারণের দিকেও কাজ করছে।
বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ পাবে নতুন দিশা
২০২২-২০২৩ সালে ভারত ও ফিলিপাইনের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এখন দুই দেশ অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরু করতে প্রস্তুত। এই চুক্তি উভয় দেশকে আমেরিকার বাণিজ্য নীতির প্রভাব থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করবে, যেখানে ভারতের উপর ২৫% এবং ফিলিপাইনের উপর ১৯% শুল্ক ধার্য করা হয়েছে।