ভারত-যুক্তরাজ্য মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি: ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন দিগন্ত

ভারত-যুক্তরাজ্য মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি: ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন দিগন্ত

ভারত ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে হওয়া মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (FTA) দেশের ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের (MSMEs) বিশ্ব বাজারে একটি নতুন পরিচিতি দেওয়ার পথ খুলে দিয়েছে। এই চুক্তির পর ভারতীয় MSME উৎপাদিত পণ্যের উপর যুক্তরাজ্যে কোনো আমদানি শুল্ক লাগবে না, ফলে দাম কমবে এবং প্রতিযোগিতায় সুবিধা হবে।

প্রায় ₹১.৯ লক্ষ কোটির শ্রম-নিবিড় ইউকে মার্কেটে এখন ভারতের কারিগর ও উৎপাদকরা সরাসরি প্রবেশ করতে পারবে। এতদিন এই ছাড় বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও কম্বোডিয়ার মতো দেশগুলো পেয়ে আসছিল, কিন্তু ভারত এখন সেই সুযোগের সমকক্ষ হল।

কোন পণ্যগুলো সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে

FTA-এর অধীনে বেশ কয়েকটি প্রধান শ্রেণীর পণ্য সরাসরি উপকৃত হবে। এদের মধ্যে রয়েছে:

  • চামড়া ও পাদুকা
  • বস্ত্র ও পোশাক
  • আসবাবপত্র
  • রত্ন ও অলঙ্কার
  • ক্রীড়া সামগ্রী

এই সমস্ত ক্ষেত্রে ভারতের একটি শক্তিশালী পরিচিতি রয়েছে এবং বড় அளவில் MSME এইগুলির উৎপাদন করে। কর ছাড় পাওয়ার ফলে এই পণ্যগুলো ইউকে বাজারে প্রতিযোগিতামূলক দামে পাওয়া যাবে।

তিরুপ্পুর, আগ্রা, পানিপতের মতো শহরগুলোর জন্য বড় স্বস্তি

ভারতের অনেক আঞ্চলিক কেন্দ্র যারা দীর্ঘদিন ধরে ঐতিহ্যবাহী পণ্য উৎপাদন করছে, তারা এখন সরাসরি ব্রিটেনের রিটেল ও হোলসেল নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হতে পারবে। তিরুপ্পুরের পারিবারিক তাঁতি, পানিপতের হোম টেক্সটাইল প্রস্তুতকারক, ভাদোহীর কার্পেট শিল্প এবং আগ্রার জুতো প্রস্তুতকারক – এখন এদের পৌঁছ ইউকে-র গ্রাহকদের কাছে কোনো অতিরিক্ত ট্যাক্স ছাড়াই সম্ভব হবে।

শুল্ক-মুক্ত প্রবেশাধিকার MSME-দের সরাসরি বিশ্ব বাজারে প্রতিযোগিতা করার সুযোগ করে দেবে

FTA-এর পর ভারতের MSME-রা ইউকে-তে শুল্ক-মুক্ত প্রবেশাধিকার পেয়েছে। অর্থাৎ, এখন তাদের পণ্যের উপর কোনো ট্যাক্স দিতে হবে না। এতে শুধু দাম কমবে তাই নয়, গুণগত মান এবং ব্র্যান্ড পরিচিতিও বাড়বে।

এখন ভারতের উৎপাদকরা সরাসরি ইউকে-র বড় ব্র্যান্ড, রিটেল চেইন এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মে তাদের পণ্য বিক্রি করতে পারবে। এর ফলে ছোট ব্যবসায়ীরা বিশ্বব্যাপী গ্রাহকদের কাছে পৌঁছানোর সুযোগ পাবে।

MSME-রা এই বিশেষ সুবিধাগুলো পাবে

সরকার ও বাণিজ্যিক সংস্থাগুলোর মতে, এই FTA-তে MSME-দের জন্য বেশ কিছু বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে:

  • এক্সপোর্ট ফিনান্স ও ট্রেনিং: ব্যবসায়ীদের এক্সপোর্ট করার জন্য ফিনান্স, প্রশিক্ষণ এবং বাণিজ্যিক অংশীদার খুঁজে পেতে সাহায্য করা হবে।
  • সরল লজিস্টিক্স ও প্রমাণীকরণ প্রক্রিয়া: আগে যে প্রমাণীকরণ এবং প্রযুক্তিগত বাধা ছিল, সেগুলো এখন সহজ করা হয়েছে।
  • ই-কমার্সকে উৎসাহ: ডিজিটাল মাধ্যমে বাণিজ্যকে উৎসাহিত করা হবে, যার ফলে MSME-রা কোনো মধ্যস্থতাকারী ছাড়াই গ্রাহকদের কাছে পৌঁছাতে পারবে।
  • GI ট্যাগ ও IP সুরক্ষা: বিশেষ আঞ্চলিক পণ্য আন্তর্জাতিক স্তরে পরিচিতি ও সুরক্ষা পাবে।
  • UK টেন্ডারে এন্ট্রি: এখন ভারতীয় MSME-রা ব্রিটেনের গভর্মেন্ট টেন্ডার প্রক্রিয়ায়ও অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবে।

চামড়া ও পাদুকা রপ্তানিতে আসবে দ্রুততা

FTA-এর সরাসরি প্রভাব ভারতের চামড়া ও পাদুকা রপ্তানির উপরও দেখা যাবে। অনুমান করা হচ্ছে যে এই সেক্টরটি একা ইউকে-তে ৯০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি রপ্তানি করতে পারবে। এর সুবিধা বিশেষ করে চেন্নাই, কানপুর, আগ্রা এবং কোल्हाপুরের মতো কেন্দ্রগুলো পাবে।

এই শহরগুলোতে জুতো ও চামড়া শিল্প বড় அளவில் MSME-এর অধীনে কাজ করে, যেখানে হাজার হাজার মহিলা কারিগর ও ঐতিহ্যবাহী শিল্পীরা জড়িত। এখন তারা আন্তর্জাতিক বাজারে সমান সুযোগ পাবে।

বস্ত্র শিল্প পাবে আন্তর্জাতিক বুস্ট

ভারতের বস্ত্র ও পোশাক শিল্প MSME সেক্টরের মধ্যে সবচেয়ে বড় নিয়োগকর্তা। ইউকে-তে ট্যাক্স हटানোয় এখন ভারতের টি-শার্ট, কুর্তা, দোপাট্টা এবং হোম টেক্সটাইলের মতো পণ্য প্রতিযোগিতামূলক দামে পাওয়া যাবে।

এতদিন বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের মতো দেশ এই ক্ষেত্রে এগিয়ে ছিল, কিন্তু এখন ভারতও এই প্রতিযোগিতায় দৃঢ়ভাবে নামতে পারবে।

অন্যান্য ক্ষেত্র যেখানে প্রভাব দেখা যাবে

FTA-এর প্রভাব শুধু ঐতিহ্যবাহী পণ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। অনেক নতুন সেক্টরও এর থেকে লাভবান হবে, যেমন:

  • ফার্মাসিউটিক্যাল ও মেডিকেল ডিভাইস
  • মেরিন ও ফুড প্রসেসিং
  • ইলেকট্রনিক্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোডাক্টস
  • অ্যালকোহলিক ড্রিঙ্কস ও প্যাকেজড ফুডস
  • ওয়েলসিড ও প্ল্যান্টেশন সম্পর্কিত পণ্য

এই সমস্ত সেক্টরে MSME-এর অংশগ্রহণ বাড়বে এবং তারা সরাসরি ইউকে বাজারে প্রবেশ করতে পারবে।

ডিজিটাল ও সাস্টেনেবল ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের পথ খুলল

FTA-তে ডিজিটাল ট্রেড ও গ্রিন ম্যানুফ্যাকচারিংকে উৎসাহিত করার কথা বলা হয়েছে। এর অধীনে MSME-রা ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সরাসরি তাদের পণ্য আন্তর্জাতিক গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দিতে পারবে।

এছাড়াও পরিবেশ-বান্ধব উৎপাদন প্রক্রিয়া অনুসরণকারী ব্যবসায়ীদেরও অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

Leave a comment