লন্ডনে প্রধানমন্ত্রী মোদীর সফরে ভারত-যুক্তরাজ্যের মধ্যে এফটিএ স্বাক্ষরিত। এর ফলে বাণিজ্য বাড়বে এবং অনেক বিদেশি পণ্য যেমন গাড়ি, কসমেটিক ও ডিভাইস সস্তা হবে।
PM Modi Visit: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঐতিহাসিক যুক্তরাজ্য সফরে লন্ডন পৌঁছেছেন। এই সফরের মূল উদ্দেশ্য ভারত ও ব্রিটেনের মধ্যে বহুল প্রতীক্ষিত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (FTA) স্বাক্ষর করা। প্রধানমন্ত্রী মোদী আগামী ২৪ ঘণ্টা লন্ডনে থাকবেন, যেখানে তিনি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করেছেন। দুই দেশের মধ্যে হওয়া এই চুক্তিকে ঐতিহাসিক আখ্যা দেওয়া হচ্ছে, যা বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং প্রযুক্তিগত সহযোগিতার ক্ষেত্রে নতুন সুযোগের দরজা খুলবে।
২৫.৫ বিলিয়ন পাউন্ডের বাণিজ্যের সম্ভাবনা
এই চুক্তির পর ভারত ও ব্রিটেনের মধ্যে বার্ষিক দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে প্রায় ২৫.৫ বিলিয়ন পাউন্ড বৃদ্ধির অনুমান করা হচ্ছে। ব্রেক্সিটের পর এটি ব্রিটেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক চুক্তি। এই চুক্তির ফলে উভয় দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হবে এবং বিশ্ব মঞ্চে তাদের অংশীদারিত্ব নতুন মাত্রা পাবে।
ভোক্তাদের জন্য সস্তা হবে অনেক পণ্য
এফটিএ কার্যকর হওয়ার পর ভোক্তারা সরাসরি উপকৃত হবেন। ব্রিটেন থেকে আমদানি করা পানীয়, সৌন্দর্য প্রসাধনী, বিলাসবহুল গাড়ি এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম-এর মতো পণ্য এখন ভারতে সস্তা হয়ে যাবে। সূত্র অনুযায়ী, এগুলোর ওপর আরোপিত শুল্ক গড়ে ১৫ শতাংশ থেকে কমে ৩ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। এর ফলে সাধারণ মানুষ কম দামে উচ্চ মানের বিদেশি পণ্য কিনতে পারবেন।
ভারতীয় রপ্তানিকারকরা পাবে বড় বাজার
এই চুক্তি ভারতীয় শিল্পের জন্যও আশীর্বাদ স্বরূপ হতে পারে। ব্রিটেন বর্তমানে ভারত থেকে প্রায় ১১ বিলিয়ন পাউন্ডের পণ্য আমদানি করে, কিন্তু শুল্ক হ্রাসের পর ভারতের রপ্তানি আরও দ্রুত বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই চুক্তির ফলে বিশেষ করে টেক্সটাইল, ফার্মাসিউটিক্যালস, অটোমোবাইল এবং আইটি সেক্টর বড় সুবিধা পাবে। ভারতীয় কোম্পানিগুলো ব্রিটেনের বাজারে সহজে প্রবেশ করতে পারবে, যা তাদের প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকতে সাহায্য করবে।
যুক্তরাজ্যের ব্যবসাগুলোও উপকৃত হবে
এই চুক্তি শুধু ভারতের জন্য নয়, ব্রিটেনের জন্যও অত্যন্ত লাভজনক। ব্রিটিশ হাইকমিশনের মতে, যুক্তরাজ্যের প্রায় ২৬টি কোম্পানি ভারতে নতুন বিনিয়োগ এবং ব্যবসা সম্প্রসারণের ঘোষণা করেছে। এয়ারবাস এবং রোলস-রয়েসের মতো বড় কোম্পানিগুলো ভারতের প্রধান এয়ারলাইন্সগুলোকে বিমান সরবরাহ শুরু করবে। এই বিমানগুলোর অর্ধেকেরও বেশি রোলস-রয়েস ইঞ্জিন দ্বারা চালিত হবে। এছাড়াও, ক্লিন এনার্জি ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যের কোম্পানিগুলো ভারতীয় বাজারে আরও ভালো প্রবেশাধিকার পাবে।
India-UK 2035 Vision-এর সূচনা
এই সফরকালে দুই দেশ মিলিতভাবে India-UK 2035 Vision ডকুমেন্টও প্রকাশ করেছে। এই ভিশন বাণিজ্য থেকে শুরু করে প্রতিরক্ষা, শিক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তন এবং উদ্ভাবনের মতো ক্ষেত্রগুলোতে সহযোগিতা জোরদার করার দিকে কাজ করবে। এই ভিশন দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্ব পরিস্থিতিতে ভারত ও যুক্তরাজ্যের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার ভিত্তি স্থাপন করে।
প্রযুক্তিগত ও নিরাপত্তা সহযোগিতা নিয়েও আলোচনা
দুই নেতার মধ্যে ভারত-যুক্তরাজ্য টেকনোলজি সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভের প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষে প্রযুক্তিগত সহযোগিতা নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এই উদ্যোগের উদ্দেশ্য হল সাইবার নিরাপত্তা, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এবং উন্নত প্রযুক্তির ক্ষেত্রে একসঙ্গে কাজ করা। এর মাধ্যমে জাতীয় নিরাপত্তাকে আরও শক্তিশালী করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া
ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার এই চুক্তিকে ঐতিহাসিক বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, এর ফলে পুরো ব্রিটেনে হাজার হাজার নতুন চাকরির সুযোগ তৈরি হবে এবং দেশের প্রতিটি কোণে উন্নয়নের গতি বাড়বে। তাঁর মতে, ভারতের সঙ্গে এই চুক্তি যুক্তরাজ্যের পরিবর্তন পরিকল্পনাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তিনি আরও বলেন যে, ভারত-যুক্তরাজ্যের এই অংশীদারিত্ব কেবল বাণিজ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সহযোগিতা আরও গভীর হবে।