শত্রু’র মুখে ঝামা ঘষে ইউক্রেনকে সবচেয়ে বেশি ডিজেল দিল ভারত

শত্রু’র মুখে ঝামা ঘষে ইউক্রেনকে সবচেয়ে বেশি ডিজেল দিল ভারত

যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের ভরসা হয়ে দাঁড়াল ভারত। জুলাই মাসে ইউক্রেনের ডিজেল সরবরাহের তালিকায় সবার ওপরে উঠে এসেছে ভারতের নাম। ইউরোপের বড় দেশগুলি কিংবা আমেরিকা নয়, বরং ভারতই দিয়েছে সবচেয়ে বেশি ডিজেল। একমাত্র মাস জুলাইতেই ইউক্রেনের মোট আমদানির ১৫.৫ শতাংশ এসেছে ভারত থেকে। যুদ্ধ চলাকালীন এই নজিরবিহীন সরবরাহ কেবল ইউক্রেন নয়, গোটা আন্তর্জাতিক মহলকেই বিস্মিত করেছে।

দৈনিক সরবরাহের নির্ভরযোগ্য চিত্র

ভারত থেকে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২,৭০০ টন ডিজেল ইউক্রেনে পৌঁছেছে। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক সংস্থা নাফতোরাইনক জানিয়েছে, এই পরিমাণ সরবরাহ ইউক্রেনের বিদ্যুৎ উৎপাদন, পরিবহন, এবং যুদ্ধকালীন সরঞ্জাম চলাচলে বিরাট ভূমিকা রাখছে। যুদ্ধক্ষেত্রে সেনা ও অস্ত্র বহনে ডিজেলের প্রয়োজন অপরিসীম, আর তাই ভারতের এই ধারাবাহিক যোগান ইউক্রেনকে আস্থার জায়গা দিয়েছে।

এক বছরে প্রবল উত্থান

মাত্র এক বছর আগে, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে ভারতের সরবরাহ ছিল মাত্র ১.৯ শতাংশ। সেই জায়গা থেকে ২০২৫-এর জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ভারত ১০.২ শতাংশ সরবরাহে উঠে এসেছে। বিশেষ করে চলতি জুলাই মাসে ভারত প্রায় পাঁচ গুণ বেশি ডিজেল পাঠিয়েছে। আন্তর্জাতিক জ্বালানি বাজারে ভারতের এই উত্থান অনেক বিশেষজ্ঞের মতে ভূরাজনীতির এক মোড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত।

পর্যায়ক্রমে বহুমুখী রুট ব্যবহার

ভারতের সরবরাহ শুধু একটি পথে সীমাবদ্ধ থাকেনি। বিভিন্ন রুটের মাধ্যমে ইউক্রেনে পৌঁছেছে ডিজেল। রোমানিয়ার ব্ল্যাক সি টার্মিনাল থেকে ট্যাঙ্কারের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ তেল গেছে ইউক্রেনের বন্দরে। একইসঙ্গে, তুরস্কের মারমারা এরিগলিসি পোর্ট দিয়েও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ডিজেল সরবরাহ হয়েছে। বহুমুখী রুট ব্যবহার করে ভারত নিশ্চিত করেছে, যুদ্ধের মধ্যেও জ্বালানির প্রবাহ থেমে না যায়।

রাশিয়া থেকে তেল ক্রয় ও আন্তর্জাতিক চাপ

তবে সমীকরণ একেবারে সহজ নয়। রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনার জন্য ভারত বারবার পশ্চিমী দেশের চাপে পড়েছে। আমেরিকার ট্রাম্প প্রশাসন প্রকাশ্যে ক্ষোভ জানিয়েছে এবং পাল্টা চাপ হিসেবে ভারতীয় রপ্তানি পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছে। বর্তমানে মার্কিন মুলুকে ভারতীয় পণ্যে মোট ৫০ শতাংশ শুল্ক ধার্য হয়েছে। এর ফলে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক কঠিন অবস্থায় পৌঁছালেও ভারত তার অবস্থান থেকে সরেনি।

ভারতের ভূ-রাজনৈতিক ভারসাম্য

একদিকে রাশিয়ার কাছ থেকে অপরিশোধিত তেল আমদানি, অন্যদিকে ইউক্রেনকে ডিজেল সরবরাহ—এই দুইয়ের মধ্যে সূক্ষ্ম ভারসাম্য বজায় রেখেছে ভারত। ট্রাম্প প্রশাসনের সমালোচনা সত্ত্বেও ভারত আন্তর্জাতিক বাজারে নিজেকে শক্তিশালী সরবরাহকারী হিসেবে প্রমাণ করেছে। এই ভূমিকা ভারতকে শুধু অর্থনৈতিকভাবে নয়, কূটনৈতিক দিক থেকেও বড় সুবিধা দিয়েছে।

বিশেষজ্ঞ ও কূটনৈতিক মহলের প্রতিক্রিয়া

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউক্রেনকে ভারতীয় ডিজেল সরবরাহ কেবল একটি বাণিজ্যিক পদক্ষেপ নয়, বরং ভূ-রাজনৈতিক কৌশলও। একদিকে পশ্চিমা দেশগুলির চোখ রাঙানি সামলে ভারত রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক অটুট রেখেছে, অন্যদিকে ইউক্রেনের পাশে দাঁড়িয়ে নিজেদের গুরুত্ব বাড়িয়েছে। কূটনৈতিক মহল মনে করছে, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে ভারত আন্তর্জাতিক জ্বালানি বাণিজ্যে এক নতুন শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করল।

Leave a comment