প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ভারতের বড় সাফল্য : ভারতের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ফের যুক্ত হল এক নতুন অধ্যায়। শত্রু দেশের যেকোনও হামলার আগাম সতর্কবার্তা দেবে অত্যাধুনিক ‘ল্যাঞ্জা-এন রাডার’। ভারতীয় নৌবাহিনীতে আনুষ্ঠানিকভাবে সংযোজিত হয়েছে এই 3D এয়ার সার্ভেইল্যান্স রাডার। ফলে সমুদ্রপথে যুদ্ধজাহাজে বসানো এই রাডার ভারতকে আরও সুরক্ষিত করে তুলবে পাকিস্তান ও অন্যান্য প্রতিপক্ষ দেশের হুমকির বিরুদ্ধে।
টাটা ও ইন্দ্রার যৌথ উদ্যোগ
টাটা অ্যাডভান্সড সিস্টেমস লিমিটেড (TASL) স্পেনের প্রতিরক্ষা সংস্থা ইন্দ্রার সঙ্গে যৌথভাবে এই রাডার তৈরি করেছে। ‘ল্যাঞ্জা-এন’ আসলে ইন্দ্রার ল্যাঞ্জা 3D রাডারের নৌ সংস্করণ। এটি বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত দীর্ঘপাল্লার বিমান প্রতিরক্ষা রাডারগুলির মধ্যে অন্যতম। কর্ণাটকে টাটার কারখানায় দেশীয়ভাবে এই রাডার তৈরি করা হচ্ছে, যা ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত।
যুদ্ধজাহাজে স্থাপন, নজরদারির নতুন দিগন্ত
ভারতীয় নৌবাহিনীর একটি যুদ্ধজাহাজে সফলভাবে বসানো হয়েছে এই রাডার। এর সাহায্যে আকাশে উড়ন্ত শত্রু জেট, ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র কিংবা সুপারসনিক ফাইটার প্লেন সবকিছুর উপরেই নজর রাখা সম্ভব হবে। একইসঙ্গে এটি ভূপৃষ্ঠ ও নৌ প্ল্যাটফর্ম পর্যন্ত সনাক্ত করতে সক্ষম। ফলে শত্রুরা আর গোপনে কোনও আক্রমণ চালাতে পারবে না।
প্রযুক্তিগত ক্ষমতা
‘ল্যাঞ্জা-এন রাডার’-এর সীমা প্রায় ২৫৪ নটিক্যাল মাইল বা প্রায় ৪৭০ কিলোমিটার। এর সাহায্যে আকাশে 3D ভিউতে লক্ষ্যবস্তু ট্র্যাক করা যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিকিরণ-রোধী ক্ষেপণাস্ত্র বা সুপারসনিক যুদ্ধবিমান শনাক্ত করার মতো ক্ষমতা বর্তমানে খুব কম রাডারের আছে। এই প্রযুক্তি ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে একধাপ এগিয়ে দিল।
স্বনির্ভর ভারতের পথে অগ্রগতি
টাটা অ্যাডভান্সড সিস্টেমস জানিয়েছে, 3D এয়ার সার্ভেইল্যান্স রাডার তৈরি করার মাধ্যমে তারা প্রথম ভারতীয় সংস্থা হিসেবে এই সাফল্য অর্জন করেছে। কোম্পানির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “এই অর্জন ভারতের প্রতিরক্ষা স্বনির্ভরতার লক্ষ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। স্থানীয়করণ, সিস্টেম ইন্টিগ্রেশন এবং অ্যাসেম্বলির ক্ষেত্রে এটি এক নতুন মানদণ্ড স্থাপন করবে।”
পাকিস্তান ও চিনের প্রতি কড়া বার্তা
ভারতের এই পদক্ষেপ পাকিস্তান ও চিন উভয়ের কাছেই স্পষ্ট বার্তা পৌঁছে দেবে। পাকিস্তান অতীতে বারবার সমুদ্রপথে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বা সীমান্তের কাছে বিমানচালিত ড্রোন ব্যবহার করেছে। ‘ল্যাঞ্জা-এন রাডার’ থাকলে ভবিষ্যতে এমন আক্রমণ গোপনে চালানো কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়বে।
প্রতিরক্ষা শিল্পে নতুন দিশা
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতীয় প্রতিরক্ষা শিল্পে এই ধরনের দেশীয় প্রযুক্তি সংযোজনের ফলে বিদেশি আমদানির উপর নির্ভরশীলতা কমবে। পাশাপাশি দেশীয় শিল্পের সঙ্গে আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা সংস্থার অংশীদারিত্ব আরও বাড়বে। এতে কর্মসংস্থানের সুযোগ যেমন তৈরি হবে, তেমনি ভারতের প্রযুক্তিগত দক্ষতাও বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে।
মেক ইন ইন্ডিয়ার সাফল্য
‘ল্যাঞ্জা-এন রাডার’ প্রকল্প সরাসরি ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র সাফল্যের প্রতীক। ২০১৪ সালে এই উদ্যোগ চালুর পর থেকেই দেশে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদনের পরিমাণ দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে শুধু নৌবাহিনী নয়, স্থলবাহিনী ও বায়ুসেনার জন্যও একাধিক দেশীয় প্রকল্প চালু হয়েছে।
ভারতীয় নৌবাহিনীতে সংযোজিত হল দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি প্রথম 3D এয়ার সার্ভেইল্যান্স রাডার ‘ল্যাঞ্জা-এন’। টাটা অ্যাডভান্সড সিস্টেমস ও স্পেনের ইন্দ্রার যৌথ উদ্যোগে তৈরি এই রাডার শত্রু দেশের ড্রোন, জেট, ক্ষেপণাস্ত্র পর্যন্ত নজরে রাখতে সক্ষম। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ভারতের স্বনির্ভরতার পথে এক বিশাল মাইলফলক।