তিব্বতে চীনের বৃহত্তম বাঁধের জবাবে ভারতের কৌশল: অরুণাচলে ২,২২০ মেগাওয়াটের ওজু জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে সবুজ সংকেত

তিব্বতে চীনের বৃহত্তম বাঁধের জবাবে ভারতের কৌশল: অরুণাচলে ২,২২০ মেগাওয়াটের ওজু জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে সবুজ সংকেত

চীনের তিব্বত অঞ্চলে বিশ্বের বৃহত্তম বাঁধ নির্মাণের খবরের মধ্যেই ভারতের পক্ষ থেকে একটি কৌশলগত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রক অরুণাচল প্রদেশের আপার সুবানসিরি জেলায় অবস্থিত ২,২২০ মেগাওয়াটের ওজু জলবিদ্যুৎ প্রকল্পকে সবুজ ছাড়পত্র দিয়েছে। 

নয়াদিল্লি: চীনের পক্ষ থেকে তিব্বতের ইয়ারলুং সাংপো নদীর উপর বিশ্বের বৃহত্তম বাঁধ তৈরি করা হচ্ছে, যা ভারতের জন্য বড় উদ্বেগের কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। এরই মধ্যে, কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রকের একটি বিশেষজ্ঞ মূল্যায়ন কমিটি চীনের সীমান্তের কাছে অরুণাচল প্রদেশের আপার সুবানসিরি জেলায় অবস্থিত ২,২২০ মেগাওয়াটের ওজু জলবিদ্যুৎ প্রকল্পকে অনুমোদন দিয়েছে।

এই প্রকল্পটি ভারতের বৃহত্তম রিভার-ফ্লো ভিত্তিক জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলির মধ্যে একটি হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে। ওজু প্রকল্পে প্রায় ২৫,০০০ কোটি টাকা খরচ হবে এবং এটি সম্পূর্ণ হতে কমপক্ষে পাঁচ বছর সময় লাগার সম্ভাবনা রয়েছে।

প্রকল্পের বৈশিষ্ট্য 

ওজু জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের মোট আনুমানিক ব্যয় প্রায় ২৫,০০০ কোটি টাকা এবং এটি সম্পূর্ণ হতে কমপক্ষে পাঁচ বছর সময় লাগবে। এই প্রকল্পটি ভারত-চীন সীমান্তের সংলগ্ন একটি কৌশলগত এলাকায় অবস্থিত। চীনের পক্ষ থেকে ইয়ারলুং সাংপো নদীর উপর তৈরি করা বিশ্বের বৃহত্তম বাঁধের পরিপ্রেক্ষিতে এই প্রকল্পটি নিরাপত্তা ও শক্তির দিক থেকে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। ওজু প্রকল্পটি সুবানসিরি নদীর উপর প্রস্তাবিত বাঁধগুলির শৃঙ্খলে বৃহত্তম। এর মধ্যে রয়েছে:

  • ১০০ মিটার উঁচু কংক্রিটের গ্র্যাভিটি বাঁধ
  • ১৪ কিলোমিটারেরও বেশি লম্বা হেডরেস টানেল
  • ভূগর্ভস্থ বিদ্যুৎকেন্দ্র কমপ্লেক্স

অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই প্রকল্পের দীর্ঘ সময়কাল এবং প্রযুক্তিগত জটিলতার কারণে এটি প্রায় ২০ বছর ধরে নির্মাণাধীন রয়েছে।

অরুণাচল প্রদেশের তৃতীয় বৃহত্তম জলবিদ্যুৎ প্রকল্প

ওজু প্রকল্পটি পরিবেশগত ছাড়পত্র পাওয়া অরুণাচলের তৃতীয় বৃহত্তম প্রকল্প। রাজ্যে এর আগেই:

  • ৩,০৮৭ মেগাওয়াটের এটalin প্রকল্প
  • ২,৮৮০ মেগাওয়াটের দিবং প্রকল্প

স্থাপিত আছে। এই প্রকল্পগুলির পরে ওজু প্রকল্পটি তার কৌশলগত এবং শক্তি-সম্পর্কিত ভূমিকা দ্বারা বিশেষ গুরুত্ব অর্জন করেছে।

পরিবেশগত সুরক্ষা ব্যবস্থা এবং পর্যবেক্ষণ

কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রকের বিশেষজ্ঞ মূল্যায়ন কমিটি (EAC) প্রকল্পটি অনুমোদন করার সময় ডেভেলপারকে বেশ কিছু নিরাপত্তা ও পরিবেশগত ব্যবস্থা অনুসরণ করার নির্দেশ দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে:

  • হিমবাহ হ্রদ ফেটে যাওয়ার পরিস্থিতি নকশার অন্তর্ভুক্ত করা – বন্যার পূর্বাভাসের ভিত্তিতে কাঠামোগত নকশা প্রস্তুত করা।
  • রিয়েল-টাইম আর্লি ওয়ার্নিং সিস্টেম – প্রকল্প এলাকা এবং আশেপাশের বাসিন্দাদের জরুরি পরিস্থিতিতে অবিলম্বে অবহিত করার ব্যবস্থা স্থাপন করা।
  • কমিউনিটি প্রস্তুতি অনুশীলন – স্থানীয় সম্প্রদায়গুলিকে বন্যা এবং জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তুত করা।
  • পরিবেশগত প্রভাব অধ্যয়ন – প্রকল্পের কমিশনিংয়ের পাঁচ বছর পর এর বিস্তারিত অধ্যয়ন করে পরিবেশের উপর প্রভাব মূল্যায়ন করা।

চীনের পক্ষ থেকে তিব্বতের ইয়ারলুং সাংপো নদীর উপর বিশ্বের বৃহত্তম বাঁধ তৈরি হচ্ছে, যা ভারতের জন্য নিরাপত্তা এবং জলপ্রবাহের দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুতর বলে বিবেচিত হচ্ছে। ওজু প্রকল্পের অনুমোদন এই প্রেক্ষাপটে কৌশলগত ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং দেশের শক্তি সুরক্ষাকে শক্তিশালী করার ইঙ্গিত দেয়।

Leave a comment