ইরানের পারমাণবিক ঘাঁটিতে হামলার হুমকি: কঠোর জবাবের হুঁশিয়ারি

ইরানের পারমাণবিক ঘাঁটিতে হামলার হুমকি: কঠোর জবাবের হুঁশিয়ারি

ইরান রাষ্ট্রপতি ট্রাম্পের হুমকিকে কড়া জবাব দিয়ে বলেছে যে আমেরিকা বা ইজরায়েল যদি তাদের পারমাণবিক ঘাঁটিতে পুনরায় হামলা করে, তাহলে তারা এমন জবাব দেবে যা গোপন করা যাবে না।

Abbas Aragchi Warns: ইরান ও আমেরিকার মধ্যে পরমাণু কর্মসূচি (nuclear program) নিয়ে উত্তেজনা আবারও চরমে পৌঁছেছে। আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষ থেকে ইরানকে প্রকাশ্যে সামরিক পদক্ষেপের হুমকির পর এবার ইরানও আক্রমণাত্মক (aggressive) ভঙ্গি দেখিয়ে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছে।

ট্রাম্পের হুমকি

সম্প্রতি রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প এক বিবৃতিতে বলেছেন যে ইরান যদি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ না করে, তাহলে আমেরিকা তার পারমাণবিক ঘাঁটিগুলিতে (nuclear sites) পুনরায় হামলা করতে পারে। তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, যদি ইরান পরমাণু কার্যকলাপ আবার শুরু করে, তাহলে আমেরিকা তাদের পুরো প্রোগ্রামটি ধ্বংস করে দেবে।

ইরানের কঠোর প্রতিক্রিয়া

ইরানের বিদেশমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি ট্রাম্পের এই বক্তব্যকে গুরুতর চ্যালেঞ্জ হিসেবে ধরে নিয়ে কড়া জবাব দিয়েছেন। তিনি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে বলেছেন, “যদি আবার আক্রমণ (aggression) হয়, তাহলে ইরান বড় আকারের জবাব দেবে এবং এমন হামলা করবে যা বিশ্বের সামনে গোপন করা (cover up) অসম্ভব হবে।”

আরাকচি বলেন যে ইরান কখনওই হুমকির কাছে মাথা নত করেনি এবং ভবিষ্যতেও করবে না। তিনি স্পষ্ট করে বলেন যে ইরানি জনতা সম্মানজনক আলোচনাকে তো স্বীকার করতে পারে কিন্তু চাপ ও ভয়ের রাজনীতিকে নয়।

পারমাণবিক ঘাঁটিতে হামলায় পরিস্থিতি খারাপ

গত মাসে ইরানের বেশ কয়েকটি প্রধান পারমাণবিক ঘাঁটিতে ইজরায়েল বিমান হামলা (airstrikes) চালিয়েছিল, যেখানে বেশ কয়েকজন বিজ্ঞানী ও জেনারেলের মৃত্যু হয়েছে। এর জবাবে ইরান ইজরায়েলের শহরগুলিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা (missile strikes) করে এবং কাতারে অবস্থিত আমেরিকার সামরিক ঘাঁটিতেও হামলা চালায়।

এই উত্তেজনাপূর্ণ ঘটনার শেষ দুই দিনে আমেরিকা সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে এবং ইরানের তিনটি প্রধান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রে বোমা বর্ষণ করে। যদিও এই হামলায় কতটা ক্ষতি হয়েছে, তার কোনো সরকারি নিশ্চিতকরণ এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

আমেরিকার মনোভাব: আলোচনার চেয়ে চাপ বেশি

ট্রাম্প স্কটল্যান্ড যাত্রা করার সময় মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলার সময় বলেন, “তারা (ইরান) আবার পরমাণু কার্যকলাপ শুরু করতে পারে। যদি এমন করা হয়, তাহলে আমরা মুহূর্তের মধ্যে তাদের entire nuclear program ধ্বংস করে দেব।” এই বিবৃতি ইরান-আমেরিকার মধ্যে আলোচনার সমস্ত পথ আপাতত বন্ধ করে দিয়েছে। যেখানে ইরানের বক্তব্য হল যে তারা শর্তহীনভাবে আলোচনায় রাজি, সেখানে আমেরিকা চায় আগে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা হোক।

ইরানের বক্তব্য

ইরান ক্রমাগত বলে আসছে যে তাদের পরমাণু কর্মসূচি সম্পূর্ণরূপে শান্তিপূর্ণ (peaceful purpose) এবং এর উদ্দেশ্য শুধুমাত্র শক্তি উৎপাদন ও বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি। বিদেশমন্ত্রী আরাকচি পুনরায় বলেন যে “আমরা আমাদের প্রোগ্রাম কারও থেকে কিনিনি, এটিকে রক্ত, ঘাম ও অশ্রু দিয়ে তৈরি করা হয়েছে।” তিনি এও বলেন যে বোমা বর্ষণে হয়তো কিছু সুবিধা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, কিন্তু আমাদের বিজ্ঞানী ও ইঞ্জিনিয়ারদের জ্ঞান এবং দৃঢ় সংকল্পকে শেষ করা যাবে না।

IAEA-এর রিপোর্ট ও পশ্চিমা দেশগুলির উদ্বেগ

আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (IAEA)-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, ইরান বর্তমানে ৬০% পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ করছে। যেখানে পরমাণু অস্ত্রের জন্য ৯০% পর্যন্ত সমৃদ্ধকরণ জরুরি। এই যুক্তির ওপর ভিত্তি করে আমেরিকা ও ইজরায়েল মনে করে যে ইরান পরমাণু বোমা তৈরির কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। ইরানের যুক্তি হল যে তারা পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে চায় না, কিন্তু তাদের বৈজ্ঞানিক বিকাশকে কারও নির্দেশে বন্ধ করবে না।

Leave a comment