ভারতের জাতীয় সঙ্গীত ‘বন্দে মাতরম’-এর ১৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শুক্রবার নতুন দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী ইনডোর স্টেডিয়ামে বছরব্যাপী দেশব্যাপী স্মরণোৎসবের উদ্বোধন করেন।
নয়াদিল্লি: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শুক্রবার নতুন দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী ইনডোর স্টেডিয়ামে জাতীয় সঙ্গীত ‘বন্দে মাতরম’-এর রচনার ১৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বছরব্যাপী স্মরণোৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এই উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী একটি স্মারক ডাকটিকিট ও স্মারক মুদ্রা প্রকাশ করেন এবং ‘বন্দে মাতরম’-এর আনুষ্ঠানিক ওয়েবসাইটও চালু করেন।
এই অনুষ্ঠানটি ৭ নভেম্বর ২০২৫ থেকে ৭ নভেম্বর ২০২৬ পর্যন্ত আয়োজিত হতে চলা দেশব্যাপী স্মরণোৎসবের সূচনা, যা এই কালজয়ী রচনার ১৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে উদযাপিত হচ্ছে। ‘বন্দে মাতরম’ শুধুমাত্র ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের অনুপ্রেরণা ছিল না, আজও এটি জাতীয় গৌরব, ঐক্য এবং মাতৃভূমির প্রতি নিবেদনের প্রতীক।
বন্দে মাতরম ভারতের আত্মার আহ্বান – প্রধানমন্ত্রী মোদি
অনুষ্ঠানে ভাষণ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন যে, “বন্দে মাতরম কেবল একটি গান নয়, বরং ভারতের আত্মার আহ্বান। এটি স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতিটি পর্যায়ে কোটি কোটি ভারতীয়কে অনুপ্রাণিত করেছে এবং মাতৃভূমির জন্য আত্মত্যাগের অনুভূতি জাগিয়েছে।” তিনি আরও বলেন যে, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কর্তৃক ১৮৭৫ সালে রচিত এই গান আজও প্রতিটি ভারতীয়ের হৃদয়ে দেশপ্রেমের জোয়ার এনে দেয়।
প্রধানমন্ত্রী বন্দে মাতরমকে “ভারতের সাংস্কৃতিক, আধ্যাত্মিক এবং জাতীয় ঐক্যের প্রতীক” হিসেবে বর্ণনা করেন। “আমরা যখন বন্দে মাতরম বলি, তখন কেবল শব্দ উচ্চারণ করি না — আমরা সেই ভূমিকে প্রণাম করি যা আমাদের জন্ম দিয়েছে, যা আমাদের সংস্কৃতি দিয়েছে এবং যা আমাদের পরিচয় দিয়েছে,” — প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন।

১৫০ বছরের পুরোনো প্রতিধ্বনি: বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ঐতিহাসিক রচনা
১৮৭৫ সালে অক্ষয় নবমীর দিন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বন্দে মাতরম রচনা করেন। এই গানটি প্রথমবার ‘বঙ্গদর্শন’ নামক সাহিত্যিক পত্রিকায় তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস ‘আনন্দমঠ’-এর একটি অংশ হিসেবে প্রকাশিত হয়েছিল। এই গানটি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে নতুন শক্তি ও জাতীয় চেতনার সঞ্চার করেছিল। স্বাধীনতা সংগ্রামীরা এটিকে স্বাধীনতার যুদ্ধের “বাদ্যযন্ত্রিক প্রতীক” বানিয়েছিল।
লাল বাহাদুর শাস্ত্রী, বাল গঙ্গাধর তিলক, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু এবং মহাত্মা গান্ধী-এর মতো নেতারা এটিকে স্বাধীন ভারতের জাতীয় চেতনার প্রতীক হিসেবে সম্মান জানিয়েছিলেন।
ডাকটিকিট, স্মারক মুদ্রা এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম চালু
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী মোদি বন্দে মাতরম-এর ১৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে একটি স্মারক ডাকটিকিট (Commemorative Postage Stamp) এবং একটি বিশেষ ১৫০ টাকার মুদ্রা প্রকাশ করেন। এর পাশাপাশি তিনি ‘বন্দে মাতরম পোর্টাল’ (www.vandemataram.gov.in) চালু করেন — এটি একটি ইন্টারঅ্যাক্টিভ ওয়েবসাইট, যেখানে বন্দে মাতরম-এর ইতিহাস, অনুবাদ, দুর্লভ আর্কাইভ সামগ্রী, গানের বিভিন্ন ভাষার রেকর্ডিং এবং স্কুলের জন্য বিশেষ শিক্ষামূলক সামগ্রী উপলব্ধ করানো হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন যে, ডিজিটাল যুগে এই উদ্যোগ “বন্দে মাতরম”-এর চেতনাকে নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়ার সেতু হিসেবে কাজ করবে। বছরব্যাপী এই স্মরণোৎসব চলাকালীন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নাটক, সেমিনার, চিত্র প্রদর্শনী এবং ছাত্র প্রতিযোগিতা আয়োজিত হবে। সংস্কৃতি মন্ত্রক জানিয়েছে যে, উৎসবের সমাপ্তি ৭ নভেম্বর ২০২৬ তারিখে একটি জাতীয় সাংস্কৃতিক মহোৎসবের মাধ্যমে হবে, যেখানে সারা দেশ থেকে শিল্পী, পণ্ডিত এবং তরুণরা অংশগ্রহণ করবে।
সংস্কৃতি মন্ত্রী বলেন, “বন্দে মাতরম ভারতের ঐক্যের গান গেয়েছে, আজ আমরা সেই একই চেতনা নিয়ে এই মহোৎসবকে প্রতিটি গ্রাম ও প্রতিটি বিদ্যালয় পর্যন্ত নিয়ে যাব। ‘বন্দে মাতরম’ কেবল একটি জাতীয় সঙ্গীত নয় বরং মাতৃভূমির স্তুতি — যেখানে ভূমিকে শক্তি, সমৃদ্ধি এবং দিব্যতার রূপ দেওয়া হয়েছে। গানের পংক্তিগুলি “সুজলাং সুফলাং মলয়জশীতলাম” ভারতের প্রকৃতি, সংস্কৃতি এবং সমৃদ্ধির এক আবেগপূর্ণ চিত্রণ করে।”












