সিংহের উপর দেবী, পাশে চার সখী! শতাব্দীপ্রাচীন বেনিয়াটোলা পালবাড়ির জগদ্ধাত্রী পুজো

সিংহের উপর দেবী, পাশে চার সখী! শতাব্দীপ্রাচীন বেনিয়াটোলা পালবাড়ির জগদ্ধাত্রী পুজো

ঐতিহ্যের শহর কলকাতায় শতাব্দীপ্রাচীন পুজো: জগদ্ধাত্রী পুজোর নাম উঠলেই প্রথমেই মনে আসে কৃষ্ণনগর ও চন্দননগরের কথা। কিন্তু কলকাতারও কিছু পুরনো বাড়ি আছে যেখানে এই পুজো ইতিহাসের সাক্ষী। সেরকমই এক নিদর্শন বেনিয়াটোলার পালবাড়ি। একশো বছরেরও বেশি সময় ধরে এখানে জগদ্ধাত্রী পুজোর আয়োজন চলে আসছে রাজকীয় ঐতিহ্যে।

১৯০0 সালে শুরু বটকৃষ্ণ পালের হাতে

সালটা ১৯০০। শোভাবাজার অঞ্চলে বিশাল বাড়ি তৈরি করেন বিখ্যাত ওষুধ ব্যবসায়ী বটকৃষ্ণ পাল। মূলত হাওড়ার শিবপুরের বাসিন্দা হলেও, শিক্ষাজীবন ও ব্যবসার সূত্রে জীবনের বড় অংশ কাটান কলকাতায়। শিবপুরে তাঁর পূর্বপুরুষদের দুর্গাপুজোর অনুপ্রেরণাতেই তিনি শুরু করেন এই জগদ্ধাত্রী পুজো।

দুর্গাপুজোর প্রভাবে জন্ম নেয় জগদ্ধাত্রী আরাধনা

বটকৃষ্ণের গ্রামের বাড়িতে অভয়দুর্গার পুজো হত নিয়মিত। সেই ভাবেই তিনি কলকাতায় এসে হৈমন্তীকার আরাধনা শুরু করেন। কলকাতার এই পুজো আজও সেই প্রথা মেনে হয়। নবমীর দিন এখানে বিশেষভাবে পালিত হয় কুমারী পুজো, যা পালবাড়ির অন্যতম আকর্ষণ।

সিংহাসনে বসা দেবী, পাশে চার সখী

বেনিয়াটোলা পালবাড়ির প্রতিমা অনন্য। দেবী এখানে সিংহের উপর দুই পা মুড়ে বসে আছেন ‘বাবু’ ভঙ্গিতে, পাশে তাঁর চার সখী। সিংহের পশম তৈরি হয় আকন্দ ফুলের তুলো দিয়ে, যা প্রতিমার গাম্ভীর্য আরও বাড়িয়ে তোলে। প্রতিমা সাজানো হয় স্বর্ণালঙ্কারে, আর চালচ্চিত্রে চোখ ধাঁধানো সজ্জা থাকে।

ঐতিহ্য ধরে আজও একই রীতি

বটকৃষ্ণ পাল যে রীতিতে পুজো শুরু করেছিলেন, শতাব্দী পেরিয়েও সেই নিয়মেই আজও পুজো হয়। পরিবারের উত্তরপুরুষেরা সেই ধারা বজায় রেখে চলেছেন। স্থানীয় মানুষও এই পুজোর সঙ্গে আবেগে জড়িত, কারণ এটি শুধু আরাধনা নয়—এ এক ঐতিহ্যের ধারক-বাহক কলকাতার সুতানুটি অঞ্চলের।

কলকাতার বেনিয়াটোলা পালবাড়ির জগদ্ধাত্রী পুজো এক শতাব্দীরও পুরনো ঐতিহ্য। দেবী এখানে সিংহের উপর বাবুর ভঙ্গিতে আসীন, সঙ্গে চার সখী। ১৯০০ সালে বিখ্যাত ওষুধ ব্যবসায়ী বটকৃষ্ণ পাল শুরু করেছিলেন এই পুজো। আজও দুর্গাপুজোর ধারা মেনে হৈমন্তীকার এই আরাধনা চলছে একই রীতি মেনে।

Leave a comment