সংসদের বর্ষাকালীন অধিবেশনে একটি বড় রাজনৈতিক ঘটনা দেখা গেল, যখন অধিবেশন শুরুর প্রথম দিনেই উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড় আকস্মিকভাবে তাঁর পদ থেকে ইস্তফা দিলেন।
নয়া দিল্লি: ভারতে আসন্ন উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে এবং এর আগে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)-র জন্য সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভা থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক খবর সামনে এসেছে। তিনজন নবনিযুক্ত মনোনীত রাজ্যসভা সাংসদ ভারতীয় জনতা পার্টিতে যোগ দিয়েছেন, যার ফলে রাজ্যসভাতে বিজেপির সদস্য সংখ্যা এখন ১০২-এ পৌঁছে গিয়েছে।
এই ঘটনা এমন এক সময়ে ঘটল যখন দেশের বর্ষাকালীন অধিবেশন চলছে এবং উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড় অধিবেশনের প্রথম দিনেই তাঁর পদ থেকে আকস্মিকভাবে ইস্তফা দিয়েছেন। তাঁর ইস্তফার সঙ্গে সঙ্গেই কেন্দ্র সরকার উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য কৌশলগত প্রস্তুতি আরও জোরদার করেছে।
বিজেপি ১০০-এর সংখ্যা পার করল
তিনজন মনোনীত সদস্য - উজ্জ্বল নিকম, হর্ষবর্ধন শ্রিংলা এবং সি. সদানন্দন মাস্টার - বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরে পার্টি আবারও রাজ্যসভাতে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেছে। এপ্রিল ২০২২-এর পর এই প্রথমবার এমন হল যখন বিজেপির উচ্চকক্ষে সদস্য সংখ্যা ১০০-এর গণ্ডি পার করল। এই তিনজন সম্প্রতি রাজ্যসভার মনোনীত সদস্য হিসাবে শপথ নিয়েছেন এবং এখন বিজেপিতে যোগ দিয়ে তাঁরা পার্টির শক্তি আরও মজবুত করেছেন।
- উজ্জ্বল নিকম: দেশের খ্যাতনামা প্রবীণ আইনজীবী, যিনি আজমল কাসাবের মতো মামলায় অভিযোগকারীর পক্ষের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
- হর্ষবর্ধন শ্রিংলা: ভারতের প্রাক্তন বিদেশ সচিব ছিলেন এবং বিদেশ নীতি সংক্রান্ত ক্ষেত্রে তাঁর অভিজ্ঞতা সরকারের জন্য অত্যন্ত উপযোগী।
- সি. সদানন্দন মাস্টার: একজন নিবেদিত সমাজসেবী এবং দক্ষিণ ভারতে শিক্ষা ও সামাজিক সংস্কারের জন্য কাজ করে চলেছেন।
এই তিনজনের রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ ভাবমূর্তি ছিল, কিন্তু বিজেপিতে যোগ দিয়ে তাঁরা একটি স্পষ্ট রাজনৈতিক অবস্থান গ্রহণ করেছেন।
রাজ্যসভার সমীকরণ
রাজ্যসভার সর্বাধিক সদস্য সংখ্যা ২৫০, যার মধ্যে ১২ জন সদস্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক মনোনীত হন। বর্তমানে সদনে মোট ২৪৫ জন সদস্য রয়েছেন। এই ১২ জন মনোনীত সদস্যের মধ্যে এখন ৫ জন সাংসদ বিজেপির সদস্য হয়েছেন, যার ফলে পার্টি মনোনীত কোটা থেকেও সরাসরি সুবিধা পাচ্ছে। রাজ্যসভাতে সংখ্যাগরিষ্ঠতার অঙ্ক পার করা কঠিন, কারণ এই কক্ষ স্থায়ী হয় এবং প্রতি দুই বছরে এক-তৃতীয়াংশ সদস্য পরিবর্তিত হন। এমন পরিস্থিতিতে তিনটি অতিরিক্ত আসন বিজেপির হাতে আসা নির্বাচনী এবং বিধিবদ্ধ কৌশল দুটোর জন্যই লাভজনক।
ভারতে উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন সংসদের উভয় কক্ষ - লোকসভা ও রাজ্যসভা - এর যৌথ ভোটারদের দ্বারা অনুষ্ঠিত হয়। যদিও এতে লোকসভার সংখ্যা বেশি থাকে, তবুও রাজ্যসভার ভূমিকা নির্ণায়ক হতে পারে, বিশেষ করে যখন ক্ষমতাসীন দল তাদের প্রার্থীকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বা সহজে জেতাতে চায়।
বিজেপির কাছে আগে থেকেই লোকসভাতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে এবং এখন রাজ্যসভাতে ১০২ জন সাংসদ থাকার ফলে তাদের দাবি আরও জোরালো হয়েছে। এতে এটা প্রায় নিশ্চিতভাবে ধরে নেওয়া হচ্ছে যে বিজেপির সমর্থন থাকা প্রার্থী উপরাষ্ট্রপতি পদের জন্য বিপুল ব্যবধানে জয়ী হতে পারেন।