বৃহত্তর বাংলাদেশের মানচিত্র বিতর্কে জয়শঙ্করের উদ্বেগ: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও তুরস্কের এনজিও-র যোগসাজশ?

বৃহত্তর বাংলাদেশের মানচিত্র বিতর্কে জয়শঙ্করের উদ্বেগ: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও তুরস্কের এনজিও-র যোগসাজশ?

জয়শঙ্কর রাজ্যসভায় 'বৃহত্তর বাংলাদেশ'-এর বিতর্কিত মানচিত্র নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, যেখানে ভারতের অংশ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই মানচিত্রটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখানো হয়েছিল এবং এর পেছনে তুরস্কের এনজিও-র সমর্থন রয়েছে বলে জানা গেছে।

S. Jaishankar: ভারতের বিদেশমন্ত্রী ডঃ এস জয়শঙ্কর রাজ্যসভায় দেওয়া এক লিখিত বিবৃতিতে ‘বৃহত্তর বাংলাদেশ’ নামে দেখানো বিতর্কিত মানচিত্র নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এই মানচিত্রটি সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি প্রদর্শনীর সময় প্রকাশ্যে আনা হয়, যেখানে ভারতের কিছু সংবেদনশীল অংশকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই ঘটনার পেছনে একটি ইসলামী সংগঠন ‘সালতানাত-এ-বাংলা’-র হাত রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে, যারা তুরস্কের একটি এনজিও ‘তুর্কি ইয়ুথ ফেডারেশন’-এর সমর্থন পায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন

যে মানচিত্রটি নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে, সেটি ১৪ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পহেলা বৈশাখ (বাংলা নববর্ষ) উপলক্ষে আয়োজিত এক প্রদর্শনীতে প্রকাশ্যে আনা হয়েছিল। মানচিত্রে ভারতের অসম, পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা এবং মেঘালয়ের কিছু অংশকে তথাকথিত 'বৃহত্তর বাংলাদেশ'-এর অংশ হিসেবে দেখানো হয়েছে। প্রদর্শনীর আয়োজকদের দাবি, এই মানচিত্র ঐতিহাসিক বাংলা সালতানাতের প্রেক্ষাপটে লাগানো হয়েছিল এবং এর সঙ্গে বর্তমান রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের কোনো সম্পর্ক নেই। আয়োজকরা কোনো বিদেশি রাজনৈতিক বা ধর্মীয় সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকার কথাও অস্বীকার করেছেন।

জয়শঙ্করের বক্তব্য: সংসদে মুখ খুলল সরকার

রাজ্যসভায় কংগ্রেস সাংসদ রণদীপ সিং সুরজেওয়ালার প্রশ্নের উত্তরে বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর তাঁর লিখিত বিবৃতিতে বলেছেন যে, ভারত সরকার এই পুরো ঘটনা সম্পর্কে অবগত এবং এর ওপর কড়া নজর রাখছে। তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন, 'ঢাকাতে একটি ইসলামী গোষ্ঠী ‘সালতানাত-এ-বাংলা’ বৃহত্তর বাংলাদেশের একটি মানচিত্র পেশ করেছে, যেখানে ভারতের ভূখণ্ড অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই গোষ্ঠীটি তুরস্কের একটি এনজিও দ্বারা সমর্থিত।' জয়শঙ্কর আরও বলেন যে, সরকার দেশের সুরক্ষা এবং অখণ্ডতার সঙ্গে জড়িত এমন যেকোনো প্রচেষ্টাকে খুব গুরুত্ব সহকারে নেয় এবং এর মোকাবিলা করার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

কে এই ‘সালতানাত-এ-বাংলা’?

ইসলামী সংগঠন 'সালতানাত-এ-বাংলা'-র নাম প্রথমবার এই স্তরে সামনে এসেছে। ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলির ধারণা, এই সংগঠনটি বাংলাদেশে চরমপন্থী চিন্তাধারাকে উৎসাহিত করার পাশাপাশি আঞ্চলিক সম্প্রসারণবাদের পক্ষে কথা বলছে। বিশেষভাবে উদ্বেগের বিষয় হল, এই সংগঠনটি कथितভাবে তুরস্ক ভিত্তিক ‘তুর্কি ইয়ুথ ফেডারেশন’ থেকে আদর্শগত এবং অর্থনৈতিক সমর্থন পায়। এই সংগঠনটি এর আগেও বিভিন্ন দেশে বিতর্কিত প্রচারমূলক কার্যকলাপের জন্য শিরোনামে ছিল।

বাংলাদেশ সরকারের বিবৃতি: মিথ্যা নাকি সাফাই?

বাংলাদেশ সরকার সংশ্লিষ্ট তথ্য-যাচাই মঞ্চ ‘বাংলাফ্যাক্ট’ এই পুরো বিতর্কটি খারিজ করার চেষ্টা করেছে। তাদের মতে, ‘সালতানাত-এ-বাংলা’ নামের কোনো সংগঠন বাংলাদেশে সক্রিয় নয় এবং এই মানচিত্র কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে প্রদর্শিত করা হয়নি। তারা এটিকে ইতিহাসের একটি ব্যাখ্যা হিসেবে উল্লেখ করেছে। যদিও, ভারতীয় গোয়েন্দা বিভাগ এবং বিদেশ মন্ত্রক এই সাফাই পুরোপুরি মেনে নিচ্ছে না। তাদের ধারণা, এটি একটি ‘সফট প্রোপাগান্ডা’, যা ধীরে ধীরে সীমান্ত এলাকায় আদর্শগত বিভ্রান্তি এবং অস্থিরতা ছড়ানোর চেষ্টা করতে পারে।

ভারতের কৌশলগত প্রতিক্রিয়া: কঠোরতা এবং সতর্কতা উভয়ই

বিদেশ মন্ত্রক স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, ভারত তার সীমান্ত, সার্বভৌমত্ব এবং নাগরিকদের সুরক্ষার ক্ষেত্রে কোনো রকম ছাড় দেবে না। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে এই পুরো বিষয়টি গভীরভাবে তদন্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক স্তরে কথাবার্তা আরও জোরদার করা হচ্ছে, যাতে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে। ভারত সরকার এটাও খতিয়ে দেখছে যে, তুরস্কের মতো দেশগুলো থেকে আসা এনজিওগুলো যদি দক্ষিণ এশিয়ায় আদর্শগত অনুপ্রবেশের চেষ্টা করে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক স্তরে কৌশলগত পদক্ষেপ নেওয়া যায়।

Leave a comment