নির্বাচন ঘিরে নতুন বিতর্ক
২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে পশ্চিমবঙ্গ রাজনীতি উত্তাল করে দিলেন জনপ্রিয় গীতিকার ও চিত্রনাট্যকার জাভেদ আখতার। তাঁর অভিযোগ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ইসলামিক সংগঠনগুলির চাপে মাথা নত করছে। এক সাহিত্য উৎসব বাতিলের ঘটনা ঘিরেই তিনি এই বিস্ফোরক মন্তব্য করেন।
উর্দু অ্যাকাডেমির সাহিত্য উৎসব বাতিল
৩১ অগাস্ট থেকে ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলার কথা ছিল পশ্চিমবঙ্গ উর্দু অ্যাকাডেমির সাহিত্য উৎসব। বিশেষ আকর্ষণ ছিলেন জাভেদ আখতার নিজে। তাঁকে নিয়ে ‘উর্দু ইন হিন্দি সিনেমা’ শীর্ষক আলোচনা, কবিতা পাঠ, মুশায়রা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সাজানো হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই উৎসব স্থগিত হয়ে যায়। অ্যাকাডেমির তরফে জানানো হয়—অনিবার্য কারণেই আপাতত উৎসব হচ্ছে না।
ইসলামিক সংগঠনের আপত্তি
সূত্র মতে, একাধিক ইসলামিক সংগঠন সরব হয়েছিল জাভেদ আখতারকে আমন্ত্রণ জানানোর বিরোধিতায়। জামিয়াত উলেমা-ই-হিন্দ ও ওহয়াহিন ফাউন্ডেশনের দাবি ছিল, আখতার ধর্মবিরোধী মন্তব্য করেন, তাই তাঁকে আমন্ত্রণ দেওয়া উচিত নয়। এমনকি, উৎসব বাতিল না হলে রাজ্যজুড়ে আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছিল।
তসলিমা বিতর্কের ছায়া
২০০৭ সালে যেমন তসলিমা নাসরিনের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ হয়েছিল, সেভাবেই এবার জাভেদ আখতারকে কেন্দ্র করে অশান্তির হুমকি দেওয়া হয়। ইসলামিক সংগঠনগুলির বক্তব্য—“যিনি নিজেকে প্রকাশ্যে নাস্তিক বলে দাবি করেন, তাঁকে উর্দু সাহিত্য উৎসবের মঞ্চ দেওয়া যাবে না।” ঠিক এই ভয়েই শেষমেশ উৎসব বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয় উর্দু অ্যাকাডেমি।
জাভেদ আখতারের ক্ষোভ
সাহিত্য উৎসব বন্ধ হয়ে যাওয়া নিয়ে সরব হন জাভেদ আখতার। তাঁর অভিযোগ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার মৌলবাদী সংগঠনগুলির চাপে মাথা নত করেছে। তিনি বলেন, “এটা কেবল সাংস্কৃতিক দমন নয়, রাজনৈতিক সমঝোতাও বটে। নির্বাচন আসছে বলেই সরকার নরম মনোভাব নিচ্ছে।”
সরকারকে কটাক্ষ
গীতিকারের মতে, পশ্চিমবঙ্গের সরকার যে ধর্মনিরপেক্ষতার পতাকা তুলে ধরার দাবি করে, তারাই এবার মৌলবাদীদের কাছে নতি স্বীকার করছে। তিনি কটাক্ষ করে বলেন, “ভোটের আগে সরকার ধর্মীয় সংগঠনগুলিকে খুশি করতে চায়। কিন্তু এতে আসল গণতন্ত্রই আঘাতপ্রাপ্ত হচ্ছে।
আইনশৃঙ্খলার যুক্তি
অন্যদিকে রাজ্য প্রশাসনের ঘনিষ্ঠ সূত্রের দাবি, সাহিত্য উৎসব বাতিল করা হয়েছে শুধুমাত্র আইনশৃঙ্খলার কথা ভেবেই। আশঙ্কা করা হয়েছিল, বিক্ষোভের জেরে শহরের শান্তি নষ্ট হতে পারে। এমনকি, জাভেদ আখতারের উপর হামলা বা কালি ছোড়ার ঘটনাও ঘটতে পারত। তাই শেষমেশ অনুষ্ঠান স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
উর্দু অ্যাকাডেমির অবস্থান
অ্যাকাডেমির সভাপতি সুজরত জইনাব জানিয়েছেন, “অনিবার্য কারণে উৎসব আপাতত হচ্ছে না।” তবে রাজনৈতিক মহলের মতে, এই সিদ্ধান্তের আড়ালে রয়েছে সরকারের ভোট রাজনীতির হিসেব। কারণ নির্বাচনের আগে সংখ্যালঘু সংগঠনগুলির সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করতে চাইছে না শাসক দল।
জাভেদ আখতারের পরিচয়
জাভেদ আখতার নিজেকে প্রকাশ্যে নাস্তিক বলে ঘোষণা করেছেন বহুবার। তবে তিনি ধর্মনিরপেক্ষ মানবতাবাদে বিশ্বাসী এবং নিজেকে ‘সাংস্কৃতিক মুসলিম’ হিসেবে চিহ্নিত করেন। তাঁর বক্তব্য, মানুষকে ধর্ম নয়, মানবতার সূত্রে যুক্ত হওয়া উচিত। তাই তাঁকে নিয়ে ধর্মীয় সংগঠনগুলির আপত্তি নতুন করে বিতর্ক জাগিয়েছে।
রাজনৈতিক অঙ্কের ইঙ্গিত
বঙ্গ রাজনীতির বিশ্লেষকদের মতে, ২০২৬ সালের ভোটের আগে এই ঘটনা বড় বার্তা দিচ্ছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ক ধরে রাখতে গিয়ে একদিকে মৌলবাদীদের চাপে পড়ছে, অন্যদিকে বিরোধীরা এই অভিযোগকে হাতিয়ার করছে। আখতারের বিস্ফোরক মন্তব্য তাই রাজনীতির অঙ্গনে আরও নতুন মাত্রা যোগ করল।