শ্রাবণ মাস প্রতি বছর ভগবান শিবের ভক্তদের জন্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। ২০২৫ সালে শ্রাবণ মাসের শুরু হচ্ছে ১১ই জুলাই থেকে। এই মাস শিবের প্রতি ভক্তি, ব্রত, উপবাস, কাওাড় যাত্রা এবং বিশেষ পূজা-অর্চনার জন্য পরিচিত। এই সময়ে শিবলিঙ্গের উপর জল অর্পণ করার প্রথা পালন করা হয়, যা সাধারণভাবে ‘জলাভিষেক’ নামে পরিচিত। আবার, কিছু লোক এই সময়ে রুদ্রাভিষেকও করেন, যা অনেক বেশি বিস্তৃত এবং বিধি-অনুসারে সম্পন্ন করা একটি পূজা।
তবে, অধিকাংশ মানুষ এই দুটি ক্রিয়াকলাপকে একই রকম মনে করেন, যেখানে এই দুটির মধ্যে পদ্ধতি, উদ্দেশ্য, ব্যবহৃত সামগ্রী এবং ধর্মীয় প্রভাবে অনেক পার্থক্য রয়েছে।
জলাভিষেক কি?
জলাভিষেক শব্দের অর্থ হল ‘জলের দ্বারা অভিষেক করা’। এটি পূজার সবচেয়ে সাধারণ এবং সহজ পদ্ধতি, যেখানে শিবলিঙ্গের উপর শুদ্ধ জল অর্পণ করা হয়। সাধারণত ভক্তরা মন্দিরে গিয়ে অথবা বাড়িতে শিবলিঙ্গের উপর তামার পাত্র দিয়ে জল দেন। এই প্রক্রিয়া ভগবান শিবকে শীতলতা প্রদান এবং ভক্তি প্রদর্শনের জন্য করা হয়।
জলাভিষেক শ্রাবণ মাসে বিশেষভাবে করা হয় কারণ এই পুরো মাসটি ভগবান শিবের প্রিয় মাস হিসাবে গণ্য করা হয়। ভক্তরা শিবলিঙ্গের উপর জল দিয়ে তাদের মনোবাসনা পূরণের জন্য প্রার্থনা করেন। এতে মন্ত্র পাঠ করা অপরিহার্য নয় এবং এটি ব্যক্তি একা করতে পারেন।
রুদ্রাভিষেক কি?
রুদ্রাভিষেক একটি বিশেষ বৈদিক প্রক্রিয়া, যেখানে মন্ত্রোচ্চারণ এবং ব্রাহ্মণদের উপস্থিতিতে বিশেষ সামগ্রী দিয়ে ভগবান শিবের পূজা করা হয়। রুদ্রাভিষেকের বর্ণনা যজুর্বেদের রুদ্র সূক্তে পাওয়া যায় এবং এই পূজা শিবের রুদ্র রূপকে সন্তুষ্ট করার জন্য করা হয়।
এতে জল, দুধ, দই, মধু, ঘি-এর মতো পাঁচটি বা তার বেশি দ্রব্য দিয়ে শিবলিঙ্গের অভিষেক করা হয়। মন্ত্র পাঠ করার মাধ্যমে ব্রাহ্মণরা পূজা সম্পন্ন করেন। এটি বিশেষভাবে গ্রহ দোষ শান্তির জন্য, স্বাস্থ্য লাভের জন্য, সুখ-শান্তি, সন্তান লাভ এবং ধন-সম্পদ বৃদ্ধির জন্য করা হয়। অনেকে শ্রাবণ মাসে মহারুদ্রাভিষেকও করেন, যা আরও বিস্তৃত প্রক্রিয়া।
রুদ্রাভিষেকের জন্য কি কি সামগ্রী প্রয়োজন?
- শুদ্ধ জল
- দুধ
- দই
- ঘি
- মধু
- গঙ্গাজল
- বেলপাতা
- সাদা চন্দন
- ধুতুরা এবং ভাঙ
- ফল ও ফুল
- ধূপ, দ্বীপ
- পঞ্চামৃত
- রুদ্রাক্ষ মালা
- কুশা এবং পবিত্র জল পাত্র
এই সমস্ত সামগ্রী দিয়ে পূজা সম্পন্ন করা হয় এবং এর সাথে ‘ওঁ নমঃ শিবায়’ বা ‘রুদ্র সূক্ত’-এর মন্ত্র পাঠ করা হয়।
রুদ্রাভিষেকের বিশেষ পদ্ধতি
রুদ্রাভিষেক করার জন্য প্রথমে উত্তর দিকে শিবলিঙ্গ স্থাপন করা হয় এবং ব্যক্তিকে পূর্ব দিকে মুখ করে পূজা করতে হয়। পূজার সময় ব্রাহ্মণরা মন্ত্র পাঠ করেন। যদি বাড়িতে পূজা করা হয়, তবে পূজার স্থান পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন এবং শান্ত রাখা জরুরি।
এই বিষয়গুলির প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেওয়া উচিত
- রুদ্রাভিষেকে তুলসী পাতার ব্যবহার করা উচিত নয়।
- মন্ত্র পাঠ ব্রাহ্মণ দ্বারা করানো উচিত।
- জলাভিষেক করার সময় তামার পাত্র ব্যবহার করা উচিত।
- রুদ্রাভিষেকের সময় কোনো প্রকার কথাবার্তা বা গোলমাল থেকে বিরত থাকতে হবে।
- শিবলিঙ্গের উপর কখনও শঙ্খ দিয়ে জল দেওয়া উচিত নয়।
শ্রাবণ মাসে এই পূজাগুলির গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি পায়
শ্রাবণ মাসে শিবের আরাধনার জন্য জলাভিষেক এবং রুদ্রাভিষেক উভয়ই পূজা পদ্ধতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। যেখানে জলাভিষেক ভক্তদের সরল ভক্তি প্রকাশ করে, সেখানে রুদ্রাভিষেক বৈদিক রীতি অনুযায়ী গভীর ভাবে শিবের কৃপা লাভের পথ দেখায়।