শ্রাবণ মাস, যা ভগবান শিবের উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত, এটিকে সবচেয়ে পবিত্র মাসগুলির মধ্যে অন্যতম হিসাবে বিবেচনা করা হয়। ২০২৫ সালে শ্রাবণ মাস শুরু হচ্ছে ১১ই জুলাই থেকে এবং চলবে ৯ই আগস্ট পর্যন্ত। এই পুরো এক মাসে লক্ষ লক্ষ ভক্ত উপবাস পালন করেন, শিবলিঙ্গে জল দেন এবং বেল পাতা অর্পণ করেন। শ্রাবণের প্রথম দিনটিও ভক্তদের জন্য অত্যন্ত বিশেষ হিসাবে বিবেচিত হয়। এই দিনে শিব পূজার জন্য অনেক শুভ মুহূর্ত থাকে, যেখানে ভগবান শিবের আরাধনা করলে বিশেষ পুণ্য লাভ হয়।
শ্রাবণে বেল পাতার গুরুত্ব কেন?
ভগবান শিব বেল পত্র অত্যন্ত ভালোবাসেন। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে, তিনটি পাতাযুক্ত বেল পত্র ত্রিমূর্তি – ব্রহ্মা, বিষ্ণু এবং মহেশ্বরের প্রতীক হিসাবে বিবেচিত হয়। শিব পুরাণেও উল্লেখ আছে যে, যে ব্যক্তি শ্রদ্ধার সাথে বেল পত্র অর্পণ করেন, তিনি পাপ থেকে মুক্তি পান এবং তাঁর সমস্ত মনোবাসনা পূর্ণ হয়।
শ্রাবণ মাসে বেল পত্র অর্পণের গুরুত্ব আরও বেড়ে যায়। এই সময়ে শিবভক্তরা বিশেষভাবে বেল পাতা সংগ্রহ করেন, সেগুলি ধুয়ে, মন্ত্র পাঠের মাধ্যমে শিবলিঙ্গে অর্পণ করেন। তবে এটি অর্পণেরও একটি সঠিক পদ্ধতি রয়েছে, যা অনুসরণ করা জরুরি।
বেল পত্র অর্পণের সঠিক পদ্ধতি কী?
শ্রাবণে যখনই আপনি শিবলিঙ্গে বেল পত্র অর্পণ করবেন, তখন এই বিষয়গুলির প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিন:
- বেল পত্র অবশ্যই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হতে হবে। কোনোভাবে ফাটা বা পোকা লাগা পাতা ব্যবহার করা উচিত নয়।
- পাতাগুলি প্রথমে ভালভাবে জল দিয়ে ধুয়ে নিন।
- পাতার উপরের মসৃণ অংশটি শিবলিঙ্গের দিকে রাখুন।
- বেল পত্র অর্পণ করার সময় "ওঁ নমঃ শিবায়" বা "ওঁ ত্র্যম্বকায় নমঃ" মন্ত্র জপ করুন।
- বেল পত্রে চন্দন দিয়ে "ওঁ" লিখে অর্পণ করলে বিশেষ পুণ্য ফল পাওয়া যায়।
- একবার অর্পিত বেল পাতা পুনরায় ব্যবহার করা উচিত নয়।
শ্রাবণের প্রথম দিনের শুভ মুহূর্ত
শ্রাবণের প্রথম দিন অর্থাৎ ১১ই জুলাই ২০২৫-এ সারাদিনে অনেক শুভ মুহূর্ত থাকবে, যেখানে শিব পূজা করা অত্যন্ত ফলদায়ক বলে মনে করা হয়। নীচে এই প্রধান মুহূর্তগুলির তথ্য দেওয়া হল:
- ব্রহ্ম মুহূর্ত: ভোর ৪টা ১৬ মিনিট থেকে ৫টা ৪ মিনিট পর্যন্ত
- অমৃত চৌঘড়িয়া: সকাল ৮টা ২৭ মিনিট থেকে ১০টা ৬ মিনিট পর্যন্ত
- অভিজিৎ মুহূর্ত: দুপুর ১২টা ৫ মিনিট থেকে ১২টা ৫৮ মিনিট পর্যন্ত
- গোধূলি মুহূর্ত: সন্ধ্যা ৭টা ২২ মিনিট থেকে ৭টা ৪১ মিনিট পর্যন্ত
এই সময়ে শিবলিঙ্গে জল, বেল পাতা, দুধ এবং ফুল অর্পণ করা অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়।
প্রদোষ কালে পূজার বিশেষ গুরুত্ব
শ্রাবণ মাসে প্রদোষ কালে শিব পূজার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এই কাল সূর্যোদয়ের পরে এবং সন্ধ্যার আগের সময়। এই সময়ে শিবের আরাধনা করলে আত্মিক শান্তি, পারিবারিক সুখ এবং মনোবাসনা পূরণ হয়। ভক্তরা এই সময়ে শিবলিঙ্গে জল, দুধ, মধু, দই এবং ঘি দিয়ে অভিষেক করেন।
শ্রাবণে শিবলিঙ্গে এই জিনিসগুলি অর্পণ করা থেকে বিরত থাকুন
ভগবান শিবকে শান্ত ও সরল দেবতা হিসাবে বিবেচনা করা হয়, তবে তাঁর পূজায় এমন কিছু জিনিস রয়েছে যা ভুল করেও শিবলিঙ্গে অর্পণ করা উচিত নয়। আসুন জেনে নেওয়া যাক সেই জিনিসগুলি সম্পর্কে:
- তুলসী পাতা: বিশ্বাস করা হয় যে ভগবান শিব তুলসীর আগের জন্মে তাঁর স্বামীর বধ করেছিলেন, যার কারণে তুলসী শিবের উপর রুষ্ট হন। তাই তুলসী পাতা শিবলিঙ্গে অর্পণ করা নিষিদ্ধ।
- হলুদ: এটি মা পার্বতীর উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত এবং শিবলিঙ্গে এটি অর্পণ করা অশুভ বলে মনে করা হয়।
- সিঁদুর: এটি বিশেষভাবে দেবীর পূজায় ব্যবহৃত হয়, শিব পূজায় এর ব্যবহার নিষিদ্ধ।
- কেতকী, করবী এবং পদ্ম ফুল: এই ফুলগুলিও শিব পূজায় নিষিদ্ধ বলে মনে করা হয়।
- ভাঙা ফল বা পচা ফুল: ভগবান শিবকে অর্পিত সমস্ত জিনিস শুদ্ধ এবং টাটকা হওয়া উচিত।
জলাভিষেকের বিশেষ গুরুত্ব
শ্রাবণে শিবলিঙ্গে জল অর্পণের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এটি শান্তি, শুদ্ধতা এবং সাধকের ভক্তিকে নির্দেশ করে। অনেক ভক্ত গঙ্গা জল, দুধ, দই, ঘি, মধু এবং চিনি দিয়েও রুদ্রাভিষেক করেন। বিশেষ করে সোমবার এই পূজা পদ্ধতি আরও পুণ্যদায়ক বলে মনে করা হয়।
শিব মন্ত্র জপ করুন
পূজার সময় শিব মন্ত্র জপ করলে মানসিক ও আধ্যাত্মিক শক্তি পাওয়া যায়। “ওঁ নমঃ শিবায়”, “মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র” এবং “শিব পঞ্চাক্ষরী মন্ত্র”-এর জপ অত্যন্ত প্রভাবশালী বলে মনে করা হয়।
শ্রাবণে ব্রত ও নিয়ম
শ্রাবণের সোমবার ব্রত পালন করাও একটি ঐতিহ্য। এই সময়ে ভক্তরা ফল আহার করেন এবং ভগবান শিবের নাম জপ করে সারাদিন পূজা-অর্চনায় কাটান। ব্রতের সঙ্গে সংযম, সাত্ত্বিক আহার এবং ভক্তিভাবনা অপরিহার্য বলে মনে করা হয়।