বন্দে মাতরমের ১৫০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ভারত সরকার জাতীয় স্মারক উৎসবের সূচনা করেছে। দিল্লিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী মোদী সম্মিলিত গানে অংশ নেন এবং স্মারক মুদ্রা ও ডাকটিকিট প্রকাশ করেন। এই উৎসব সারা বছর ধরে পালিত হবে।
নয়াদিল্লি: রাষ্ট্রগীত বন্দে মাতরম রচনার ১৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ভারত সরকার জাতীয় স্তরে এক স্মারক উৎসবের সূচনা করেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী ইনডোর স্টেডিয়ামে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দেন, যেখানে বন্দে মাতরমের পূর্ণাঙ্গ সংস্করণের সম্মিলিত গান পরিবেশিত হয়। এই উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী এই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তের স্মরণে একটি স্মারক ডাকটিকিট এবং একটি স্মারক মুদ্রাও প্রকাশ করেন। ভারত সরকার দেশজুড়ে এই বর্ষপূর্তি এক বছর ধরে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী মোদীর ভাষণ
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন যে বন্দে মাতরম শুধু একটি গান নয়, এটি একটি মন্ত্র, শক্তি এবং সংকল্পের সুর। তিনি বলেন যে এই শব্দগুলি মা ভারতীর সাধনা ও আরাধনার প্রতীক। প্রধানমন্ত্রী অনুসারে, বন্দে মাতরম আমাদের ইতিহাস মনে করিয়ে দেয়, বর্তমানে আত্মবিশ্বাস যোগায় এবং ভবিষ্যতের জন্য নতুন লক্ষ্য নির্ধারণের সাহস যোগায়। তিনি বলেন যে স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় বন্দে মাতরম সারা দেশে ঐক্য ও আত্মমর্যাদার অনুভূতিকে শক্তিশালী করেছিল।
দেশব্যাপী স্মারক উৎসবের সূচনা
সরকার কর্তৃক ঘোষিত এই স্মারক উৎসবটি ৭ নভেম্বর ২০২৫ থেকে ৭ নভেম্বর ২০২৬ পর্যন্ত চলবে। এর অধীনে দেশজুড়ে জনসমাগমের স্থানে বন্দে মাতরমের পূর্ণাঙ্গ সংস্করণের সম্মিলিত গান গাওয়া হবে। স্কুল, কলেজ এবং সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলিতেও এই সংক্রান্ত বিশেষ অনুষ্ঠান আয়োজিত হবে। এই অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য হল রাষ্ট্রগীতের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্বকে নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়া। এই উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী বন্দে মাতরম সম্পর্কিত তথ্য ও সামগ্রী উপলব্ধ করার জন্য একটি বিশেষ পোর্টালও চালু করেন।
বন্দে মাতরম রচনার ইতিহাস
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ১৮৭৫ সালের ৭ নভেম্বর অক্ষয় নবমীর দিনে বন্দে মাতরম রচনা করেন। এই রচনাটি প্রথম তাঁর উপন্যাস আনন্দমঠের অংশ হিসেবে সাহিত্য পত্রিকা বঙ্গদর্শনে প্রকাশিত হয়েছিল। এই রচনায় মাতৃভূমিকে শক্তি, সমৃদ্ধি ও দিব্যতার স্বরূপ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় এই গানটি ভারতীয়দের দেশপ্রেম ও আত্মসম্মানের প্রতীক হয়ে ওঠে। মিছিল ও আন্দোলনের সময় স্বাধীনতা সংগ্রামীরা বন্দে মাতরম ধ্বনি দিত।
স্বাধীনতা আন্দোলনে বন্দে মাতরমের ভূমিকা
স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় বন্দে মাতরম সমাজের সকল স্তরের মানুষের মধ্যে ঐক্য ও সংগ্রামের অনুভূতিকে শক্তিশালী করেছিল। ছাত্র, কৃষক, বুদ্ধিজীবী এবং বিপ্লবী সংগঠন সকলেই এটিকে আন্দোলনের সুর করে তোলে। ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া অনেক আন্দোলনে এই গানটি সাহস ও অনুপ্রেরণার উৎস ছিল। এই গানটি দেশকে এই বিশ্বাস যোগাত যে মাতৃভূমির সম্মানের জন্য কোনো আত্মত্যাগই ছোট নয়।
রাষ্ট্রগীত হিসেবে স্বীকৃতি
স্বাধীন ভারত গঠনের পর সংবিধান সভায় আলোচনার সময় বন্দে মাতরমকে রাষ্ট্রগীতের মর্যাদা দেওয়া হয়। এই সিদ্ধান্ত এর ঐতিহাসিক ভূমিকা এবং জনগণের মধ্যে এর আবেগপূর্ণ গ্রহণযোগ্যতাকে বিবেচনা করে নেওয়া হয়েছিল। জাতীয় সঙ্গীত ও রাষ্ট্রগীত উভয়কেই ভারতের পরিচয় ও সাংস্কৃতিক ঐক্যের প্রধান প্রতীক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
বর্তমান প্রজন্মের জন্য বন্দে মাতরম
আজ যখন দেশ দ্রুত উন্নয়ন ও পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, বন্দে মাতরমের চেতনা নতুন প্রজন্মকে বোঝাতে গুরুত্বপূর্ণ যে জাতির অগ্রগতিতে প্রতিটি নাগরিকের ভূমিকা রয়েছে। এই গানটি দেশের প্রতি উৎসর্গ, দায়িত্ব এবং গৌরবকে শক্তিশালী করে। স্মারক উৎসবের উদ্দেশ্যও এটাই যে এই চেতনা কেবল ইতিহাসেই সীমাবদ্ধ না থাকে, বরং বর্তমান ও ভবিষ্যতের ভারত গঠনে সক্রিয়ভাবে প্রকাশ পাক।












