কানপুরের ইশা হত্যা মামলা: প্রাক্তন দারোগা জ্ঞানেন্দ্রকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

কানপুরের ইশা হত্যা মামলা: প্রাক্তন দারোগা জ্ঞানেন্দ্রকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

কানপুরের আলোচিত ইশা হত্যা মামলায় দোষী সাব্যস্ত প্রাক্তন দারোগা জ্ঞানেন্দ্র সিংকে আদালত যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে। জ্ঞানেন্দ্র তার কথিত স্ত্রী ইশার গলা কেটে দেহ ফেলে দিয়েছিল, তবে অন্য পাঁচ অভিযুক্তকে প্রমাণের অভাবে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে।

কানপুর: ২০১৫ সালের আলোচিত ইশা হত্যা মামলায় দোষী সাব্যস্ত প্রাক্তন দারোগা জ্ঞানেন্দ্র সিংকে আদালত যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে। বিশেষ বিচারক শুচি শ্রীবাস্তবের আদালত তাকে খুনের দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং জরিমানা দিয়েছে। অন্যদিকে, মামলায় জড়িত অন্য পাঁচ অভিযুক্তকে প্রমাণের অভাবে খালাস দেওয়া হয়েছে। দশ বছরের আইনি লড়াইয়ের পর ইশা সচনের পরিবার ন্যায়বিচার পেয়েছে, যা এক পুলিশকর্মীর নিষ্ঠুরতা ও প্রতারণার গল্প প্রকাশ করেছে।

জ্ঞানেন্দ্র ইশাকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল 

ঘটনাটি ছিল ২০১৫ সালের ১৯ মে, যখন জ্ঞানেন্দ্র সিং তার কথিত স্ত্রী/প্রেমিকা ইশা সচানকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। পুলিশি তদন্ত অনুযায়ী, সে ইশার গলা ছুরি দিয়ে কেটে মাথাকে দেহ থেকে আলাদা করে ফেলেছিল যাতে লাশের পরিচয় শনাক্ত করা কঠিন হয়। এরপর দেহটি যমুনা নদীতে ফেলে দেওয়া হয়, আর মাথা কানপুরের কোথাও লুকিয়ে রাখা হয়।

২০১৫ সালের ২২ মে কৌশাম্বী জেলায় লাশটি পাওয়া যায়। পুলিশ ট্যাটু, ঘড়ি এবং গহনার ভিত্তিতে তার পরিচয় শনাক্ত করে। পরিবার জানায় যে, হত্যার আগে জ্ঞানেন্দ্র ইশাকে কোনো অজুহাত দেখিয়ে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়েছিল। তদন্তে এও উঠে আসে যে, জ্ঞানেন্দ্র তার সঙ্গীদের সাহায্যে প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করেছিল।

বৈবাহিক বিবাদ ও গার্হস্থ্য সহিংসতা

ইশা কানপুরের বাসিন্দা ছিলেন এবং জ্ঞানেন্দ্র নাকি তাকে দ্বিতীয় বিয়ে করেছিল। পরিবারের অভিযোগ ছিল যে, জ্ঞানেন্দ্র তার প্রথম বিয়ের তথ্য গোপন করেছিল এবং প্রথম স্ত্রীর সাথে তার দুটি সন্তানও ছিল। বিয়ের পর ঝগড়া বাড়তে থাকে এবং ইশা বেশ কয়েকবার পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করে।

পরিবার জানায় যে, জ্ঞানেন্দ্রর অন্য এক তরুণীর সাথে সম্পর্ক ছিল এবং সে ইশার থেকে মুক্তি পেতে চাইছিল। সন্তানদের জন্ম শংসাপত্র এবং পিতার নাম নিয়ে বিবাদ তাদের বৈবাহিক সমস্যাগুলিকে আরও বাড়িয়ে তুলেছিল। গার্হস্থ্য সহিংসতা ও হুমকির কারণে ইশা মানসিক চাপে ছিল।

পুলিশি কার্যক্রম ও তদন্ত

ইশা নিখোঁজ হওয়ার পর কাকাদেও থানায় অপহরণের মামলা দায়ের করা হয়। কৌশাম্বীতে লাশ পাওয়ার পর মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়। পুলিশ জ্ঞানেন্দ্র এবং তার সহযোগী রাকেশ, সঞ্জীব, জিতেন্দ্র, সন্তোষ ও রাজেশকে অভিযুক্ত করে।

পুলিশ মোবাইল লোকেশন, কল রেকর্ড এবং ফরেনসিক প্রমাণের ভিত্তিতে তদন্ত করে। জ্ঞানেন্দ্রকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তার সঙ্গীদেরও এই মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই সময়ে সে জেলে থাকাকালীন বেশ কয়েকটি বিতর্ক তৈরি করেছিল, কিন্তু প্রমাণ ও সাক্ষীর ভিত্তিতে তার অপরাধ প্রমাণিত হয়।

আদালতের রায়

প্রসিকিউশন পক্ষ আদালতে ১১ জন সাক্ষীকে পেশ করে। এদের মধ্যে ইশার পরিবারের সদস্য, পুলিশ কর্মকর্তা এবং ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। আদালত ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ এবং ২০১ ধারার অধীনে জ্ঞানেন্দ্রকে দোষী সাব্যস্ত করে।

২০২৫ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর ঘোষিত রায়ে আদালত জানায় যে, জ্ঞানেন্দ্রর নিষ্ঠুরতা অগ্রহণযোগ্য। অন্যান্য অভিযুক্তদের পর্যাপ্ত প্রমাণের অভাবে খালাস দেওয়া হয়। ইশার পরিবার এই রায়কে স্বাগত জানায় এবং এটিকে মেয়ের আত্মার জন্য ন্যায়বিচার বলে অভিহিত করে। মৃতের মেয়ে সানায়া এখন দাদীর কাছে আছে এবং পরিবার ন্যায়বিচারের এই জয়ের সাথে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে।

Leave a comment