লেহ-তে সহিংস বিক্ষোভ: ৪ জনের মৃত্যু, ৫০ গ্রেপ্তার, ইন্টারনেট বন্ধ ও কারফিউ জারি

লেহ-তে সহিংস বিক্ষোভ: ৪ জনের মৃত্যু, ৫০ গ্রেপ্তার, ইন্টারনেট বন্ধ ও কারফিউ জারি

লেহ-তে সহিংস বিক্ষোভের পর ৫০ জন গ্রেপ্তার, ইন্টারনেট বন্ধ এবং কারফিউ জারি। চার নাগরিকের মৃত্যু, অনেকে আহত। বিক্ষোভকারীরা ষষ্ঠ তফসিল এবং লাদাখকে পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা দেওয়ার দাবি জানিয়েছে।

লেহ বিক্ষোভ: লাদাখে বিগত দিনে ঘটে যাওয়া সহিংস বিক্ষোভ পুরো অঞ্চলকে কাঁপিয়ে দিয়েছে। লেহ-তে সংঘর্ষের পর পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়ে যায় যে প্রশাসনকে কারফিউ জারি করা এবং ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করার মতো কঠোর পদক্ষেপ নিতে হয়। এর মধ্যে কারগিল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (কেডিএ) দ্বারা ডাকা পূর্ণ বনধ কারগিল এবং এর আশেপাশের অঞ্চলগুলিকে সম্পূর্ণরূপে স্তব্ধ করে দিয়েছে।

লেহ-তে বৃদ্ধি পাওয়া সহিংসতা

বুধবার লেহ-তে ঘটে যাওয়া সহিংসতার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। এই সংঘর্ষে চার নাগরিকের মৃত্যু হয় এবং ৭০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হন। পুলিশ অভিযান চালিয়ে কংগ্রেস কাউন্সিলর সহ প্রায় ৫০ জনকে আটক করেছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে যারা সহিংসতা ছড়িয়েছে তাদের রেহাই দেওয়া হবে না এবং সকলকে আইনের আওতায় আনা হবে। যদিও, কংগ্রেস কাউন্সিলরের গ্রেপ্তারি নিয়ে পুলিশ কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।

কারগিলে পূর্ণ বনধের ডাক

কারগিলে কেডিএ পূর্ণ বনধের ডাক দেয়, যার ফলে বাজার, দোকান এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ ছিল। বুরো, সাংকু, পানিখার, পাডুম এবং ট্রেসপন-এর মতো এলাকাগুলিতেও বনধের প্রভাব দেখা যায়। স্থানীয় মানুষ এই বনধকে লেহ-তে নিহত ও আহত নাগরিকদের প্রতি সংহতির প্রতীক হিসেবে দেখছেন।

কারফিউ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা

লেহ-তে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কঠোর কারফিউ জারি করা হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে বিপুল সংখ্যক নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। লোকজনের চলাচলের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে এবং প্রশাসন স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে কারফিউ আদেশ লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ষষ্ঠ তফসিল ও রাজ্যের মর্যাদা দেওয়ার দাবি

লাদাখে চলমান এই বিক্ষোভগুলির মূল কারণ হলো দীর্ঘদিনের দাবি। এখানকার রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলি সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলে অন্তর্ভুক্ত করা এবং অঞ্চলটিকে পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছে। বিক্ষোভকারীদের বক্তব্য, তাদের জমি, কর্মসংস্থান এবং সাংস্কৃতিক পরিচয় সুরক্ষার জন্য এই পদক্ষেপ অত্যন্ত জরুরি।

বিক্ষোভে সহিংসতা কেন ছড়ালো

বুধবার লেহ-তে একটি বড় র‍্যালির সময় পরিস্থিতি হঠাৎ খারাপ হয়ে যায়। বিক্ষোভকারী এবং নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা অভিযোগ করেছেন যে নিরাপত্তা বাহিনী বিক্ষোভকারীদের ওপর অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করেছে এবং সিআরপিএফ গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করেছে। এই ঘটনায় চার নাগরিকের মৃত্যু হয় এবং অনেকে আহত হন।

উপরাজ্যপালের বিবৃতি

লাদাখের উপরাজ্যপাল এই সহিংসতাকে অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র বলে অভিহিত করেছেন। কিন্তু লেহ এপেক্স বডি এই দাবি সম্পূর্ণভাবে খারিজ করে দিয়েছে। তাদের বক্তব্য, এই বিক্ষোভগুলি জনগণের ক্ষোভের ফল, কারণ সরকার লাদাখিদের দাবি পূরণে ক্রমাগত অস্বীকার করছে।

কারগিল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্সের অবস্থান

কারগিল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স লেহ-তে বিক্ষোভকারীদের সমর্থন করেছে। কেডিএ-এর মুখপাত্র বলেছেন যে নিরীহ মানুষের মৃত্যু অগ্রহণযোগ্য এবং যতক্ষণ না আমাদের দাবি পূরণ হয়, ততক্ষণ আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাব। তিনি স্পষ্ট করেছেন যে লেহ এবং কারগিল উভয় অঞ্চলের সংগঠনগুলি একত্রে সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

স্থানীয় মানুষের ক্ষোভ

লাদাখের মানুষ এই সহিংসতা ও মৃত্যুর ঘটনায় গভীরভাবে মর্মাহত। তাদের অভিযোগ, প্রশাসন আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতি সমাধানের পরিবর্তে সংঘাতের পথ বেছে নিয়েছে। মানুষের ভয়, যদি পরিস্থিতি এমনই থাকে, তাহলে লাদাখে বিচ্ছিন্নতা আরও বাড়তে পারে।

উপরাজ্যপালের কঠোর হুঁশিয়ারি

লাদাখের উপরাজ্যপাল কবীন্দ্র গুপ্ত বলেছেন যে কোনো ধরনের সহিংসতা বরদাস্ত করা হবে না। তিনি নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন। তিনি প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন যে আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য সমস্ত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হোক এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।

Leave a comment