করবা চৌথ ২০২৫: জানুন তিথি, শুভ মুহূর্ত, পূজা বিধি ও চাঁদ দেখার সঠিক সময়

করবা চৌথ ২০২৫: জানুন তিথি, শুভ মুহূর্ত, পূজা বিধি ও চাঁদ দেখার সঠিক সময়
সর্বশেষ আপডেট: 3 ঘণ্টা আগে

করবা চৌথ ২০২৫ সালের ব্রত এই বছর ১০ অক্টোবর, শুক্রবার পালিত হবে। সধবা মহিলারা এই দিনে নির্জলা উপবাস রেখে স্বামীর দীর্ঘায়ু ও বৈবাহিক সুখের কামনা করবেন। সন্ধ্যা ৫:৫৭ থেকে ৭:১১ টা পর্যন্ত পূজার শুভ মুহূর্ত থাকবে এবং চন্দ্রোদয় রাত ৮:১৩ টায় অনুমান করা হচ্ছে।

Karwa Chauth: এই বছর করবা চৌথের পবিত্র উৎসব ১০ অক্টোবর, শুক্রবার সারাদেশে শ্রদ্ধা ও উৎসাহের সাথে পালিত হবে। এই দিনটি সধবা মহিলাদের জন্য অত্যন্ত বিশেষ, যখন তাঁরা সারা দিন নির্জলা ব্রত রেখে স্বামীর দীর্ঘায়ু ও সুখময় জীবনের প্রার্থনা করেন। হিন্দু পঞ্জিকা অনুযায়ী, পূজার শুভ মুহূর্ত সন্ধ্যা ৫:৫৭ থেকে রাত ৭:১১ টা পর্যন্ত থাকবে, যখন চন্দ্র দর্শনের সময় রাত ৮:১৩ টা অনুমান করা হয়েছে। এই উৎসব প্রেম, বিশ্বাস এবং আত্মোৎসর্গের প্রতীক হিসাবে বিবেচিত হয়।

করবা চৌথের গুরুত্ব

করবা চৌথের ব্রত ভারতীয় সংস্কৃতিতে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের গভীরতা প্রকাশ করে। এই ব্রত কেবল একটি ধর্মীয় আচার নয়, বরং আত্মোৎসর্গ এবং মানসিক বন্ধনের প্রতীক। এই দিনে মহিলারা সকাল থেকে চাঁদ ওঠা পর্যন্ত জল পান না করে উপবাস রাখেন এবং স্বামীর দীর্ঘায়ু, সুখ-সমৃদ্ধি এবং সুস্বাস্থ্যের কামনা করেন।

ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, করবা চৌথের ব্রত রাখলে স্বামীর আয়ু বৃদ্ধি পায় এবং বৈবাহিক জীবনে সুখ বজায় থাকে। এই ব্রত কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্থী তিথিতে পালন করা হয়। 'করবা' শব্দের অর্থ মাটির পাত্র, এবং 'চৌথ' মানে চতুর্থী।

করবা চৌথ ২০২৫-এর তিথি এবং শুভ সময়

হিন্দু পঞ্জিকা অনুযায়ী, কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্থী তিথি ২০২৫ সালের ৯ অক্টোবর রাত ১০:৫৪ টায় শুরু হয়ে ২০২৫ সালের ১০ অক্টোবর রাত ৭:৩৮ টা পর্যন্ত থাকবে। পঞ্জিকা অনুযায়ী ব্রত ১০ অক্টোবর, শুক্রবার পালিত হবে।

  • করবা চৌথ ব্রত তিথি: ১০ অক্টোবর ২০২৫
  • পূজার মুহূর্ত: সন্ধ্যা ৫:৫৭ থেকে রাত ৭:১১ টা পর্যন্ত
  • চন্দ্রোদয় (চন্দ্র দর্শন) এর সময়: রাত ৮:১৩ টা (আনুমানিক)

এটাই সেই সময় হবে যখন সধবা মহিলারা চন্দ্রকে অর্ঘ্য নিবেদন করে ব্রত ভঙ্গ করবেন।

করবা চৌথের কথা এবং পরম্পরা

করবা চৌথের পেছনে বেশ কয়েকটি ধর্মীয় ও পৌরাণিক কাহিনী প্রচলিত আছে, যার মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হল বীরবতীর গল্প। কথিত আছে যে, বীরবতী নামক এক রাণী তাঁর স্বামীর জন্য কঠোর উপবাস রাখতেন। সারাদিন ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত থাকার পর যখন তিনি সন্ধ্যায় পূজা করছিলেন, তখন তাঁর ভাইয়েরা তাঁর কষ্ট দেখে ছল করে প্রদীপের আলো দেখিয়ে বললেন যে চাঁদ উঠেছে। বীরবতী তখন ব্রত ভঙ্গ করলেন, এবং এই কারণে তাঁর স্বামী কষ্ট পেলেন।

যখন তিনি তাঁর ভুল বুঝতে পারলেন, তখন তিনি মা পার্বতী এবং ভগবান শিবের কাছে ক্ষমা চাইলেন এবং সারা বছর ধরে করবা চৌথের ব্রত রাখলেন। এর ফলে তাঁর স্বামী আবার জীবিত হয়ে উঠলেন। তখন থেকেই এই ব্রত স্বামীর দীর্ঘায়ু এবং বৈবাহিক সুখের জন্য পালিত হতে শুরু করে।

করবা চৌথ পূজা বিধি

করবা চৌথের পূজা বিধি ঐতিহ্যবাহী রীতি-নীতিগুলির সাথে জড়িত। এটি বিধি-সম্মতভাবে পালন করলে ব্রতের ফল বহুগুণ বেড়ে যায়।

১. সূর্যোদয়ের আগে সরগী সেবন করুন

ব্রতের শুরু হয় সরগী দিয়ে, যা শাশুড়ি তাঁর পুত্রবধূকে দেন। এতে মিষ্টি, ফল, শুকনো ফল এবং ঐতিহ্যবাহী খাবার অন্তর্ভুক্ত থাকে। সরগী সূর্যোদয়ের আগে সেবন করা হয়, কারণ এর পরে সারা দিন নির্জলা ব্রত রাখতে হয়। সরগীকে কেবল খাবার হিসাবে নয়, বরং স্নেহ ও আশীর্বাদের প্রতীক হিসাবে দেখা হয়।

২. নির্জলা ব্রত এবং সংযমিত দিন

সারা দিন মহিলারা নির্জলা ব্রত রাখেন, অর্থাৎ তাঁরা খাবার বা জল কিছুই গ্রহণ করেন না। সারাদিন মনকে শান্ত ও ইতিবাচক রাখা উচিত। এই দিনটি আত্মসংযম, ভক্তি এবং আত্মোৎসর্গের প্রতীক হিসাবে বিবেচিত হয়।

৩. সন্ধ্যার পূজার প্রস্তুতি

সন্ধ্যার সময় মহিলারা করবা মাতার পূজা করেন। পূজায় একটি সজ্জিত করবা (মাটির বা তামার ঘড়া), প্রদীপ, রোলী, চাল, সিঁদুর, কুমকুম, চুড়ি এবং মিষ্টি রাখা হয়। করবা চৌথের গল্প শোনা হয় এবং সকল মহিলা একে অপরের সাথে করবা বিনিময় করেন।

৪. চন্দ্রোদয় এবং ব্রত ভঙ্গ

রাতে চন্দ্রোদয়ের পর মহিলারা ছাঁকনি দিয়ে চাঁদ এবং তারপর তাঁদের স্বামীর মুখ দেখেন। এরপর স্বামীর হাত থেকে জল পান করে ব্রত ভঙ্গ করা হয়। এই মুহূর্তটি অত্যন্ত আবেগপূর্ণ হয়, কারণ এটি প্রেম এবং আত্মোৎসর্গের মিলনের প্রতীক।

সরগীর গুরুত্ব

করবা চৌথের সরগীর ঐতিহ্য ভারতীয় পারিবারিক সংস্কৃতির এক সুন্দর ঝলক। এটি কেবল খাবারের অংশ নয়, বরং শাশুড়ি এবং পুত্রবধূর মধ্যে প্রেম ও আশীর্বাদের প্রতীক। মা বা শাশুড়ি তাঁর পুত্রবধূকে সকালে সূর্যোদয়ের আগে সরগী দেন, যা সারাদিনের শক্তির উৎস হয়।

সরগীতে মিষ্টি, ফল, শুকনো ফল, সেমাই, নারকেল এবং হালুয়ার মতো খাবার অন্তর্ভুক্ত থাকে। এটি খাওয়ার সময় ব্রতী মহিলা মনে মনে এই সংকল্প নেন যে তিনি তাঁর স্বামীর দীর্ঘায়ু ও সুখ-সমৃদ্ধির জন্য সারা দিন ব্রত পালন করবেন।

শৃঙ্গার এবং ঐতিহ্যবাহী পরিধানের গুরুত্ব

করবা চৌথের দিনে মহিলারা ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরেন, বিশেষ করে লাল, গোলাপী বা সোনালী রঙের শাড়ি এবং লেহেঙ্গা। এই রঙগুলি সৌভাগ্য এবং প্রেমের প্রতীক হিসাবে বিবেচিত হয়। মহিলারা মেহেন্দি লাগান, চুড়ি পরেন এবং সম্পূর্ণ শৃঙ্গার করেন।

শৃঙ্গারকে কেবল সাজসজ্জা নয়, বরং সৌভাগ্যের প্রতীক হিসাবে দেখা হয়। এই দিনটি মহিলার আস্থা, সুহাগ এবং নারীত্বের এক সুন্দর অভিব্যক্তি হয়ে ওঠে।

ধর্মীয় বিশ্বাস এবং আধ্যাত্মিক দিক

করবা চৌথের ব্রত কেবল স্বামীর দীর্ঘায়ুর জন্য নয়, বরং নিজের আত্মসংযম এবং আধ্যাত্মিক উন্নতিরও প্রতীক। এই দিনটি আত্মনিয়ন্ত্রণ, ধৈর্য এবং বিশ্বাসের পরীক্ষা নেয়।
হিন্দু ধর্মগ্রন্থ অনুযায়ী, করবা চৌথ ব্রত পালন করলে কেবল স্বামীর আয়ুই দীর্ঘ হয় না, বরং জীবনে আসা বাধাও দূর হয়।

চন্দ্রোদয় এবং অর্ঘ্যের গুরুত্ব

করবা চৌথের সবচেয়ে আবেগপূর্ণ এবং প্রতীকী মুহূর্ত হল — চন্দ্র দর্শন। মহিলারা ছাঁকনি দিয়ে চাঁদ দেখেন, তারপর তাঁদের স্বামীকে দেখে অর্ঘ্য নিবেদন করেন। এই দৃশ্যটি ভারতীয় সংস্কৃতির সবচেয়ে সুন্দর ঐতিহ্যগুলির মধ্যে একটি।
এই বছর ২০২৫ সালে চাঁদ রাত ৮:১৩ টায় উদিত হবে। চাঁদ ওঠার সাথে সাথেই মহিলারা মন্ত্রোচ্চারণ সহ চন্দ্রদেব এবং করবা মাতার কাছে তাঁদের স্বামীর দীর্ঘায়ু এবং বৈবাহিক সুখের জন্য প্রার্থনা করবেন।

এই বছর কী বিশেষ থাকবে

এই বছর করবা চৌথ শুক্রবার পড়ছে, যাকে শুক্রবারের ব্রত বলা হয় এবং এটি সৌভাগ্যবতী মহিলাদের জন্য বিশেষ ফলদায়ক বলে মনে করা হয়।
এছাড়াও, পূজার সময় এবং চন্দ্রোদয় উভয়ই সন্ধ্যার সময়ে পড়ছে, যার ফলে মহিলারা সময় মতো সমস্ত রীতি-নীতি আরাম করে পালন করতে পারবেন।

জ্যোতিষাচার্যদের মতে, এই বছরের করবা চৌথ শুভ যোগে পড়ছে, যার ফলে ব্রতের ফল আরও বেশি মঙ্গলজনক হবে।

Leave a comment