শহরের বুকে ঘটে যাওয়া নক্কারজনক ঘটনার রেশ কাটেনি এখনও। কসবা ল’ কলেজে এক ছাত্রীকে গণধর্ষণের অভিযোগ সামনে আসতেই নড়েচড়ে বসেছে কলকাতা পুলিশের সদর দফতর। আর সেই কারণেই শহরের প্রতিটি থানার উদ্দেশে কড়া নির্দেশ জারি করেছেন পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা।
প্রতিদিন কলেজ নিরাপত্তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে থানাকে
যে কোনও কলেজ, যে থানার আওতাভুক্ত, সেই থানা এলাকার আধিকারিককে কলেজের নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। লালবাজার চায়, কোনও অপরাধমূলক কাজ কলেজ চত্বরে ঘটার আগেই তার আঁচ পেয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
অপরাধ দেখলেই থানা জানাবে নিরাপত্তাকর্মীরা
কলেজের নিরাপত্তা কর্মীরা যদি কোনও সন্দেহজনক কার্যকলাপ, হুমকি বা অপরাধমূলক ঘটনা প্রত্যক্ষ করেন, তাহলে দ্রুততম সময়ে থানায় জানানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। পুলিশ ও নিরাপত্তাকর্মীদের মধ্যে সমন্বয় গড়ে তুলতেই এই নির্দেশ।
থানা আধিকারিকের নম্বর থাকবে কলেজ সিকিউরিটির কাছে
প্রত্যেক কলেজের নিরাপত্তারক্ষীর কাছে সংশ্লিষ্ট থানার এক আধিকারিকের সরাসরি নম্বর থাকবে বলে জানানো হয়েছে। যাতে দ্রুত যোগাযোগ করে কোনও বড় বিপদ রোধ করা যায়।
কলেজে বিশেষ কর্মশালা করবে প্রতিটি থানা
প্রতিটি থানাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তাদের অধীনস্থ কলেজে গিয়ে কর্মশালা করতে হবে। সেখানে পড়ুয়াদের সামনে স্পষ্ট করে জানাতে হবে, কোন কোন অপরাধ কী ধরনের আইনি শাস্তিযোগ্য ধারা অনুযায়ী বিচারযোগ্য।
ছাত্রছাত্রীদের জন্য আইনজ্ঞান বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে
এই কর্মশালার মূল উদ্দেশ্য হল—ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে আইন সংক্রান্ত সচেতনতা বৃদ্ধি। বিশেষ করে সামাজিক অপরাধ বা যৌন নিগ্রহের মতো সংবেদনশীল বিষয় নিয়ে পড়ুয়াদের মধ্যে তথ্যভিত্তিক আলোচনা হবে। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হবে, কোন অপরাধে কেমন শাস্তি হতে পারে।
অবৈধভাবে কলেজে অবস্থান করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্লাস শেষ হওয়ার পর কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে কলেজ প্রাঙ্গণে অবস্থান করলে বা পার্টি, বেআইনি কাজ করেন, সেই তথ্য কলেজ কর্তৃপক্ষকে থানায় জানানো বাধ্যতামূলক। এই নির্দেশ অমান্য করলে, আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেই স্পষ্ট করেছে লালবাজার।
সিসিটিভি কার্যকর কিনা, খতিয়ে দেখবে পুলিশ
প্রতিটি থানাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তাদের আওতাধীন কলেজগুলির সঙ্গে যোগাযোগ করে দেখতে হবে, ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরাগুলি ঠিকঠাক কাজ করছে কি না। কোথাও কোনও ত্রুটি ধরা পড়লে, দ্রুত তা মেরামতির তাগিদও দিতে হবে।
মুহূর্তে মুহূর্তে নজরদারিতে কলেজের ভিতর
কলেজে কী হচ্ছে, কে আসছে যাচ্ছে, কোথায় সন্দেহজনক চলাফেরা—এসব খুঁটিনাটি বিষয়ে নজর রাখতে বলা হয়েছে থানাকে। সংশ্লিষ্ট কলেজ ও থানার মধ্যে দিনে দিনে আরও ঘনিষ্ঠ সমন্বয় গড়ে তোলার লক্ষ্যে জোর দিচ্ছে লালবাজার।
কলেজগুলির জন্য অ্যাডভাইজারি আনছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়
শুধু পুলিশ নয়, শিক্ষা মহলও সতর্ক। কসবা ল কলেজ কাণ্ডের অভিঘাতে এবার সরব কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ও। তাদের অধীনে থাকা ১৭০টি কলেজের উদ্দেশে একটি ব্যাপক অ্যাডভাইজারি জারি করা হবে। প্রতিটি কলেজকে নিজস্ব সিকিউরিটি ম্যানেজমেন্ট ও নৈতিক আচরণবিধি পর্যালোচনা করতে বলা হবে।